বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সর্বশেষ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওঠা অনিয়মের অভিযোগে ঘরোয়া ক্রিকেটে অস্থিরতা আরও গভীর হয়েছে। বর্তমান কমিটির অধীনে সব ধরনের লিগ বয়কটের ঘোষণা দেয় ঢাকার শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার শুরু হওয়া প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ২০টি দলের মধ্যে ৮টি ক্লাব অংশ নেয়নি। ফলে নির্ধারিত চার ম্যাচের মধ্যে মাঠে গড়িয়েছে মাত্র একটি ম্যাচ, যা মৌসুমের শুরুতেই লিগের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
লিগ শুরুর আগের দিন শনিবার বর্জনকারী আট ক্লাবের ক্রিকেটাররা সব দলকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ লিগ আয়োজনের দাবিতে বিসিবিতে স্মারকলিপি দেন। একই দিনে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ট্রফি উন্মোচন হলেও বিসিবি কার্যালয়ের সামনে ক্রিকেটারদের মানববন্ধন সেই আনুষ্ঠানিকতাকে ছাপিয়ে যায়। বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে ক্রিকেটাররা নিজেদের অধিকার ও দাবির কথা তুলে ধরেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। এক পোস্টে তিনি লেখেন,
‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার ক্রিকেটাররা। অথচ গতকাল অনেক ক্রিকেটারকে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন ডিভিশনের অনেক ক্রিকেটার বিসিবিতে তাদের দাবি জানাতে গিয়েছিলেন, যেটি তাদের অধিকার, এবং যার যৌক্তিক কারণও আছে।’
তামিম আরও যোগ করেন, ‘অথচ সেই ক্রিকেটারদের গেটের বাইরে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে যদিও একটি প্রতিনিধি দলকে ভেতরে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু আরও অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা দুঃখজনক। একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি এর প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলাম।’
এদিকে মাঠের বাইরের এই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে প্রথম বিভাগ লিগের কাঠামোতেও। গত মৌসুমে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির হয়ে খেলা আসাদুজ্জামান প্রিন্স জানান, ২০ দল নিয়েই প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু করা উচিত ছিল। তা সম্ভব না হলে ২০ দলের সব ক্রিকেটারকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আয়োজনের দাবি জানান তিনি। তার মতে, বর্তমান ব্যবস্থায় স্পষ্ট বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, যেখানে ১২ দলের ক্রিকেটাররা ভালো পারিশ্রমিকে খেলতে পারলেও বাদ পড়া ক্রিকেটারদের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের নামে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
ক্রিকেটারদের দাবির বিষয়ে বিসিবি এখনো কোনো চূড়ান্ত আশ্বাস দেয়নি বলেও জানান প্রিন্স। তিনি বলেন, বিসিবির সভাপতি বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না ক্রিকেটারদের জন্য কী করা হবে বা আর্থিকভাবে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে।
এবারের লিগে শুধু ৮টি দল অংশ না নেওয়াই নয়, ঢাকার বিভিন্ন বিভাগের মোট ৪৩টি ক্লাব বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে লিগে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এতে ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তর প্রথম বিভাগ লিগ কার্যত গভীর সংকটে পড়েছে, যার সমাধান না হলে সামনে আরও বড় অচলাবস্থার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।










Discussion about this post