বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন ইতিহাস বারবার ফিরে আসছে একইভাবে-দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা, কিন্তু ব্যাট হাতে নিজদেরই ব্যর্থতা! চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির চিত্রও তার ব্যতিক্রম নয়। একসময় ম্যাচ হাতের মুঠোয় ছিল, কিন্তু শেষে ১৪ রানের হারে সিরিজ হারতে হলো লিটন দাসদের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ১১ ওভারে ১ উইকেটে ১০৬ রান তুলেছিল। শাই হোপ ও আলিক আথানাজের জুটি তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছিল, স্কোরবোর্ডে দুইশ ছোঁয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের নিখুঁত বোলিংয়ে সেই গতিপথ বদলে যায়। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৪৯ রানে থামে ক্যারিবীয়রা।
এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাও খারাপ ছিল না। তানজিদ হাসান তামিমের ৪৮ বলে ৬১ রানের ইনিংসে জয়ের আশা জেগেছিল। হাতে তখন ৭ উইকেট, দরকার মাত্র ৩ ওভারে ৩৩ রান। কিন্তু এরপরই যেন ধস নামে ব্যাটিংয়ে। জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারী কিংবা তাওহীদ হৃদয়-কেউই দলের প্রয়োজনীয় সময়ে দায়িত্ব নিতে পারেননি।
ম্যাচ শেষে সামাজিক মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেন সাবেক পেসার রুবেল হোসেন। তার পোস্টে ফুটে ওঠে বাস্তবতার নির্মমতা, ‘একজন মুশফিকুর রহিম, একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-আজকের ম্যাচে এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অভাবটা খুবই অনুভব করেছি। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে।’ রুবেল আরও লিখেছেন, ‘চট্টগ্রামের উইকেট সবসময় ব্যাটারদের সহায়ক। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আমরা সেই সুবিধাটা নিতে পারিনি।’
চট্টগ্রামের মাঠে বাংলাদেশ একাধিক সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু সেটিও কাজে লাগাতে পারেনি। সাইফ হাসান, লিটন দাস, তানজিদ তামিম ও হৃদয়-সবাই জীবন পেয়েছিলেন ফিল্ডিং ত্রুটিতে। তবু কেউই বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। সাইফ ৫, লিটন ২৩, হৃদয় ১২-এমন সামান্য স্কোরে বিদায়। যেন ম্যাচের গল্প একটাই-সুযোগ আসে, কিন্তু সেটি টিকিয়ে রাখার মানসিকতা নেই।
এই হার বাংলাদেশ দলের জন্য কেবল একটি পরাজয় নয়, বরং এক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকদের বিদায়ের পর তরুণদের ওপরই ভরসা রাখতে হয়েছে। কিন্তু সেই ভরসা এখনো পূর্ণতা পায়নি। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা চার সিরিজজয়ী দলটি এবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারাল পাঁচ নম্বর সুযোগটিও।
আগামীকাল চট্টগ্রামেই সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি। লিটন দাসের দল নামবে মর্যাদা রক্ষার মিশনে। কিন্তু এর মধ্যেই প্রশ্নটা জোরালো হয়ে উঠেছে-অভিজ্ঞতার শূন্যতা আর ব্যাটিংয়ের এই অস্থিরতা নিয়ে বাংলাদেশ কতদূর এগোতে পারবে? নাকি আবারও ফিরে তাকাতে হবে পুরনো সেই নির্ভরতার দিকে-মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহর মতো দৃঢ় কাঁধের সন্ধানে?
 
			 
                                









Discussion about this post