বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের অধীনে সব ধরনের লিগ বয়কটের ঘোষণা দেওয়া ঢাকার শীর্ষ কয়েকটি ক্লাবের সিদ্ধান্তের ফলে আজ রোববার শুরু হওয়া প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ২০টি দলের মধ্যে ৮টি দল অংশ নেয়নি।
লিগ শুরুর আগের দিন শনিবার বর্জনকারী ক্লাবগুলোর ক্রিকেটাররা সব দলকে নিয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজনের দাবিতে বিসিবিতে স্মারকলিপি দেন। একই সময়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ট্রফি উন্মোচন করা হলেও মাঠের বাইরের পরিস্থিতি ছিল অস্থির। এর আগে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনের মাধ্যমে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন ক্রিকেটাররা।
গত মৌসুমে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির হয়ে খেলা আসাদুজ্জামান প্রিন্স জানান, ২০ দল নিয়েই প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু করাই ক্রিকেটারদের মূল দাবি। তিনি বলেন, তা সম্ভব না হলে সব ক্রিকেটারকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা উচিত। বর্তমান কাঠামোতে স্পষ্ট বৈষম্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু ক্রিকেটার ভালো পারিশ্রমিকে লিগ খেললেও অন্যদের জন্য প্রস্তাবিত পারিশ্রমিক মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
ক্রিকেটারদের দাবির বিষয়ে বিসিবি এখনো কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানায়নি। প্রিন্সের ভাষ্য অনুযায়ী, বিসিবি সভাপতি বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় বোর্ড থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। আর্থিক বা কাঠামোগত সমাধান নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনো কেউ দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এবারের লিগে দলবদল পর্বেও অংশ নেয়নি ২০ দলের মধ্যে ৮টি ক্লাব। পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন বিভাগের মোট ৪৩টি ক্লাব বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে লিগে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
যেদিন ক্রিকেটাররা মাঠের বাইরে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিবাদে ব্যস্ত ছিলেন, সেদিনই একাডেমি মাঠের সামনে প্রথম বিভাগ লিগের ট্রফি উন্মোচন করা হয়। যদিও সূচিতে ২০ দলের নাম ছিল, ট্রফি উন্মোচনের সময় উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১২ জন অধিনায়ক, যা পুরো লিগ আয়োজনের বাস্তব চিত্র স্পষ্ট করে তোলে।
আন্দোলনরত ক্রিকেটারদের দাবি, সব দলকে নিয়ে লিগ চালু করা সম্ভব না হলে লিগ স্থগিত করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন করা হোক। সাধারণত ক্রিকেটারদের স্বার্থরক্ষায় দায়িত্বশীল ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এ আন্দোলনে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। নতুন কমিটি গঠিত হলেও আন্দোলনের দিন তাদের কাউকেই মাঠে দেখা যায়নি।
সম্প্রতি কোয়াবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে আন্দোলনরত ক্রিকেটারদের অভিযোগ, প্রথম বিভাগ ও নিচের স্তরের ক্রিকেটারদের কোয়াবে ভোটাধিকার না থাকায় তারা প্রতিনিধিত্বহীন অবস্থায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় একটি নতুন সংগঠন গঠনের বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।










Discussion about this post