গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজকের সকালটা যেমন আশাবাদের আলো নিয়ে শুরু হয়েছিল, বিকেলটা যেন তার বিপরীত এক চিত্র হয়ে ধরা দিলো। প্রথম ইনিংসে ৫০০ ছোঁয়ার আশায় থাকা বাংলাদেশ, দিনের শেষে দাঁড়িয়ে রইল ৯ উইকেটে ৪৮৪ রান নিয়ে। এমন এক দিন, যেটা শুরু হয়েছিল গর্ব নিয়ে, কিন্তু শেষ হলো একটু হোঁচট আর হালকা আক্ষেপে।
তিন উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আগের দিন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা শান্ত, দিনের শুরুতেই থামলেন। ২৭৯ বলে গড়া ১৪৮ রানের ইনিংস ছিল পরিণত, কিন্তু তিনি ফিরে যাওয়ার পর মাঠে নামলেন দুজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা-মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।
দুজনেই ব্যাটে ছন্দ তুললেন। মুশফিক ছিলেন নিবিড়, আত্মবিশ্বাসী; আর লিটন খেললেন যেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রীলঙ্কান বোলারদের শাসন করে গড়লেন ১৪৯ রানের এক দুর্দান্ত জুটি। দেখে মনে হচ্ছিল, গলে আজও বাংলাদেশের আধিপত্য থাকবে পুরোটা সময় জুড়েই।
কিন্তু ক্রিকেটে মুহূর্তে বদলে যেতে পারে দৃশ্যপট। চা বিরতির ঠিক আগে নামে বৃষ্টি, খেলা বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য। বিরতির পর আবার যখন মাঠে নামে দুই দল, তখন মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে আরও কিছু রান। পেরিয়ে যান দেড় শতকের গণ্ডি, ছুটছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ দিল না। এলবিডব্লিউ হয়ে থামলেন ১৬৩ রানে।
এরপর যেন কেমন হয়ে গেল সবকিছু। পরের ওভারেই বিদায় নেন লিটন দাস, তার ইনিংস থেমে যায় ৯০ রানে। সেঞ্চুরির স্বপ্নে ছিলেন তিনিও, কিন্তু নার্ভাস নাইনটিজে কাটলেন তিন অঙ্কের গণ্ডি ছোঁয়ার আগেই। আর ওই ধাক্কা সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ।
ক্রমাগত উইকেট হারিয়ে ২৬ রানের ব্যবধানে পড়ে যায় পাঁচটি উইকেট। এক সময় যে ইনিংস ৫৫০–৬০০ রানের দিকে যাচ্ছিল, সেটিই হঠাৎ থেমে যায় ৪৮৪-এ। হাতে কেবল একটি উইকেট। ক্রিজে আছেন হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।
বল হাতে শ্রীলঙ্কার হয়ে তিনটি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন থারিন্দু রাথনায়েকে, আসিথা ফার্নান্দো ও মিলান রাত্নায়েকে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর তারা নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের হাতে তুলে নিতে পেরেছেন দারুণভাবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার টেস্টের তৃতীয় দিন। কারা এগিয়ে-উত্তরটা হয়তো মিলবে এদিনই, কিন্তু আজকের জন্য গল্পটা একটাই-গলে সূর্য ছিল, বৃষ্টি এলো, তারপর সব বদলে গেল!
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৯২/৩) ১৫১ ওভারে ৪৮৪/৯ (শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩, লিটন ৯০, জাকের ৮, নাঈম ১১, তাইজুল ৬, হাসান ০*, নাহিদ ০*; আসিথা ২৮-৫-৮০-৩, মিলান রত্নায়াকে ২২.৪-৬-৩৮-৩, থারিন্ডু রাত্নায়াকে ৪৯.২-৩-১৯৬-৩, জয়াসুরিয়া ৪৮-২-১৫৪-০, ডি সিলভা ৩-০-৭-০)
Discussion about this post