বাংলাদেশ–আয়ারল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি যেন একক নায়কোচিত প্রদর্শনীতে রূপ নিল মুশফিকুর রহিমের। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে পা রাখাই ছিল এক বড় অর্জন। কিন্তু সেখানে থেমে থাকেননি তিনি; সেঞ্চুরি ও ম্যাচ জয়ে নিজের মাইলফলককে পরিণত করেছেন আলো ছড়ানো এক অধ্যায়ে। এমন কীর্তির পর তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে রিকি পন্টিং, ইনজামাম উল হক কিংবা ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ইতিহাসবন্দিত ক্রিকেটারদের পাশে।
প্রথম ইনিংসে ২১৪ বলে ১০৬ রান করে টেস্ট ইতিহাসে মাত্র ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। বাংলাদেশ ম্যাচ জেতায় তালিকাটি আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে—শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে দলকে জয় এনে দেওয়া মাত্র অষ্টম ক্রিকেটার এখন মুশফিক। গর্ডন গ্রিনিজ থেকে শুরু করে জো রুট-এ তালিকার প্রতিটি নামই ক্রিকেট ইতিহাসে উজ্জ্বল, আর এখন তাঁদের পাশে জ্বলছে বাংলাদেশের এক প্রতিনিধির নাম।
ম্যাচের শেষ দিনে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা প্রতিরোধে দাঁড়ালেও বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত আক্রমণে শেষমেশ আর টিকতে পারেনি তারা। বাংলাদেশকে পঞ্চম দিনে ৫৯.৩ ওভার বোলিং করতে হলেও দ্বিতীয় ইনিংস ২৯১ রানে থামিয়ে ২১৭ রানের বড় জয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। দু’ইনিংসে ১০৬ ও অপরাজিত ৫৩ রানের পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরা হন মুশফিক।
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ৩৮ বছর বয়সী মুশফিক জানান, এই বিশেষ মুহূর্ত তার জন্য যেন এক নতুন সূচনা। দেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলার গৌরব তাঁকে আবেগে ভাসিয়েছে, আর সতীর্থদের সঙ্গে এই মাইলফলক ভাগ করে নিতে পেরে তিনি আপ্লুত। তাঁর ভাষায়, ম্যাচটা নাকি তাঁর কাছে অভিষেক ম্যাচের মতো লেগেছে-একদম নতুন উদ্যমে খেলেছেন পুরো সময়টা।
২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক-সেই ১৮ বছরের তরুণ মুশফিক আজ অভিজ্ঞতার দুই দশক ছুঁয়ে দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় শততম ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে মাত্র ৮৪ জন ক্রিকেটারের। তাদের মধ্যেও মাত্র ১১ জন সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন এই বিশেষ ম্যাচে। তবে সবার সেঞ্চুরি জয়ের মুখ দেখেনি। কলিন কাউড্রে, জাভেদ মিয়াঁদাদ বা অ্যালেক স্টুয়ার্টের শততম টেস্ট শেষ হয়েছিল ড্রয়ে। কিন্তু মুশফিকের সেঞ্চুরি জয়ে রূপ নেওয়ায় তিনি এক অভিনব উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন।










Discussion about this post