সিলেট টেস্টে জয়ের পর এবার আরেক পরীক্ষা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। বুধবার মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু। তার আগে মঙ্গলবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি কথা বলেছেন নানা প্রসঙ্গে, তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে-
দল গঠন ও কম্বিনেশন প্রসঙ্গে..
এটা পিচের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। আর অবশ্যই আমাদের শক্তিমত্তার ওপরও। যেমনটা আপনি বললেন, সিলেটে আমরা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ৫ দিনের প্রতিটিতেই আমরা আধিপত্য বিস্তার করেছি। ভালোভাবে লড়াই করেছি। সেখানেও আমরা আমাদের শক্তি আর সিলেটের কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করেই দলটা বানিয়েছিলাম। আর মিরপুরের কথা আপনি জানেন, কখনো কখনো মাঠে নামার আগে আপনি বুঝবেন না পিচ কেমন আচরণ করতে যাচ্ছে, এমনকি কয়েকটা সেশন খেলার পরও বোঝা যায় না অনেক সময়, যেহেতু এখানে অনেক বেশি খেলা হয়… আমার মনে হয় না বিশ্বের আর কোনো মাঠে এত বেশি খেলা হয়, যতটা এই মাঠে হয়ে থাকে। তো আমরা চেষ্টা করব খুব বেশি পরিবর্তন না করতে।
ঢাকা টেস্টে দলের প্রতি কী বার্তা থাকবে?
সেই টেস্ট শুরুর আগে দলের প্রতি যে বার্তাটা ছিল, এখনো বার্তাটা একই থাকছে…আমাদের যা আছে, নিজেদের শক্তি যা আছে, তা বুঝে তা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমরা তরুণ, কিন্তু স্কিলের দিক থেকে তারা বেশ ভালো। যখন তাদের স্বাধীনতাটা দেওয়া হয় জাতীয় দলের বাইরে এনসিএল বা এমন কোনো প্রতিযোগিতায় খেলে। তারা ভালো খেলে। এই বিষয়টা আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটেরও ভালো বিজ্ঞাপন। কারণ সাতজন খেলোয়াড় এনসিএলে খেলেছে, মাঠে তাদের প্রাণশক্তিটা আপনি দেখতে পারছেন। বিষয়টা ফলাফলের নয়, ফল ভিন্ন হতেই পারে, কিন্তু পাঁচ দিন পর্যন্ত প্রাণশক্তিটা ধরে রাখা… প্রতিপক্ষ যখন বড় জুটি গড়ে ফেলছে, তখনো চনমনে থাকা… এসব ছোট ছোট বিষয়ে আমি নজর দেই। এই তরুণ দলটা তাদের সবটা দিয়ে লড়েছে। বার্তাটা থাকবে, একই কাজটা আবারও করা।
মুমিনুল বোলিং করে সিলেটে সফল হয়েছে। এখানে কী বল দেওয়া হতে পারে তার হাতে…
সে ভালো বল করেছে? সে তো মাত্র তিন ওভার বল করল! তিনটা উইকেট পেয়েছে, সেটা ফলাফল। সে ভালো জায়গায় বল করতে পারে, আমরা এটাই চাই। আমি এর বেশি কিছু বলব না, কারণ সে নেটে খুব কমই বল করে।
নাজমুল হোসেন শান্তর অধিনায়কত্ব প্রসঙ্গে
অধিনায়কত্ব আর নেতৃত্ব দুটো কিন্তু আলাদা বিষয়। অধিনায়কত্বটা সে দারুণ করেছে। ম্যাচে সে সবসময় এক ধাপ এগিয়ে ছিল। দারুণ ফিল্ডিং সাজিয়েছে। কখনো আন অর্থোডক্স ছিল, কিন্তু বেশ সফল ছিল। নেতৃত্বের দিক থেকেও বেশ ভালো ছিল। সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বিষয়টা বেশ ভালো, আমার মনে হয় তার সামনে লম্বা একটা ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। সে অধিনায়ক থাকবে কি না, সে বিষয়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। তাকে আমি অধিনায়কত্বের জোর দাবিদার হিসেবেই দেখছি।
আমার মনে হয় দ্বিতীয় ইনিংসে যেভাবে আমরা ব্যাট করেছি, তা ম্যাচটা জেতার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা জুটির কথা বলছি, দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা নব্বইয়ের কাছাকাছি দুটো জুটি গড়েছি। মুমিনুল দুই ইনিংসে বড় জুটিতে ছিল, সে কিছু রান বেশি করতে পারত আরও, কিন্তু সে অ্যাপ্রোচ বদলাতে চেয়েছে, তখন পরিস্থিতিটা ভালো ছিল তাই। অ্যাপ্রোচ কখনো আপনার পক্ষে যেতে পারে, বিপক্ষেও যেতে পারে, আমরা কন্ডিশন বুঝে আমাদের পরিকল্পনা মেনে খেলেছি, তো আমি দুই ইনিংসে আমাদের পারফর্ম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট।
সিলেট টেস্ট জয়টা কি নতুন দিনের আভাস?
সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা এখানে যা করছি তা হলো আমাদের ক্রিকেটের জন্য, আমরা যে সংস্কৃতিটা গড়তে চাই, তার জন্য ঠিক কাজটা করে যাচ্ছি। সেটা ঠিকঠাক হলে ফলাফলটা নিজে নিজেই ভালো হতে থাকবে। এটা ভেবে বসবেন না যে আমরা প্রতিটা ম্যাচেই জিততে থাকব। আমরা চেষ্টাটা করব। আমরা মাত্রই একটা কমপ্লিট ম্যাচ খেললাম, ভালো দলগুলোর বিপক্ষে আমরা এটা করতে চাই। আমরা এই ম্যাচটা আবার শূন্য থেকে শুরু করতে চাই। সিরিজটা যেভাবে শুরু করেছিলাম, ঠিক সেভাবে। একই রোমাঞ্চ, একই তীব্রতা নিয়ে, একই আশা, একই লক্ষ্য নিয়ে। আমাদের আবার শুরু করতে হবে, আমাদের প্রতিদিনই লড়তে হবে।
তাইজুল ইসলাম বল হাতে সফল..
সে যখন ভালো করে, তখন তাকে নিয়ে আপনাদের কথা বলতে হবে। আমরা তাকে নিয়ে ড্রেসিংরুমের ভেতরে অনেক কথা বলি। সে অনুশীলনে বেশ মনোযোগী, যেভাবে সে প্রস্তুত হতে চায়, সেটা সে খুব নিখুঁতভাবে করে। সে মানসিকভাবে খুব শক্ত। সে বিভিন্ন সময় রাডারের বাইরে পড়ে যায়, কারণ আমাদের আরও একটা বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে, সাকিব… তাইজুলকে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে খেলতে হয় বেশিরভাগ সময়। তার রেকর্ডটা দারুণ। তার প্রায় ২০০ উইকেট আছে। সে খুবই ধারাবাহিক। এই টেস্টে আমি তার যেমন ম্যাচিউরিটি দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে রঙ্গনা হেরাথ তাকে নিয়ে অনেক ট্যাকটিকাল কাজ করেছে।
Discussion about this post