এই গ্রহের দ্রুততম মানব তিনি। গত আট-দশ বছরে তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০০৯ সালে ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে যে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তা এখনো বিস্ময়কর হয়ে আছে। সেই গতি মানবের আয়ের অঙ্কটাও বিস্ময়কর!
প্রতি সেকেন্ডেই বোল্টের আয় ৫৫ কোটি টাকা! ভুল শুনেননি। ৫৫ কোটিই! এবারের রিও অলিম্পিকে ১০০ মিটার জয়ের পর এমন তথ্যই মিলল। প্রতি সেকেন্ড হিসেবে তার আয় ৫৫ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড! পুমা, নিশান, হাবলট, ভিসা, ভার্জিন মিডিয়া, জাপানের অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ, অস্ট্রেলিয় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি অপ্টাস থেকে এই মোটা অংকের অর্থ আয় করছেন বোল্ট।
বোল্টের অ্যাথলেট জীবন শুরু প্রাইমারি স্কুল থেকে। ১২ বছর বয়সে প্রথম দ্রুততম কিশোরের খেতাব অর্জন দিয়ে শুরু। ওয়ার্ল্ডনেসিয়ার প্রাইমারি ও অলএইজ স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথম হন এই জ্যামাইকান।
জন্ম ১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট। জ্যামাইকার ছোট্ট শহর ট্রেলওনিতে। বাবা ওয়েলেসলি এবং মা জেনিফার বোল্ট এবং ভাই সাডেকি ও বোন শেরিনের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। ওই ছোট্ট শহরেই বাবার গ্রোসারি দোকান। তা দিয়েই চলেছে সংসার। সেই পরিবারের ছেলেটিই একদিন গড়ে বিশ্বরেকর্ড। ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টারে দৌড়ালেন যথাক্রমে ৯.৫৮ সেকেন্ড এবং ১৯.১৯ সেকেন্ডে।
২০০৭ সালে ওসাকা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে যাত্রা শুরু কিং বোল্টের। মস্কোয় তার মুকুটে যোগ হল আরেকটি মুক্তো। ‘বোল্ট’ যুগে বাকিরা সব দ্বিতীয় হওয়ার জন্যই নামে, এটাই এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। ২০০ মিটারেও সেই একই কাহিনী। এখানেও স্বর্ণপদক জিতলেন জ্যামাইকান তারকা উসাইন বোল্ট। সময় নিলেন ১৯.৬৬ সেকেন্ড। সব মিলিয়ে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সে এটি তার সপ্তম স্বর্ণপদক। পরে ৪০০ মিটার রিলেতেও সোনার পদক জেতেন তিনি।
এরপর তিনটি অলিম্পিকেই তিনটি করে স্বর্ন। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেই একই দাপট। তিনি এখন কিংবদন্তিদেরও কিংবদন্তি! এখন গ্রেটদের পাশে লেখা হচ্ছে তার নাম। তারপরও বিনয়ে শেষ নেই। জানালেন, ‘আমি কিংবদন্তি হতে চাই। যেমনটা হয়েছেন পেলে, ম্যারাডোনা, মোহাম্মদ আলি কিংবা মাইকেল জর্ডন। আমার প্রধান লক্ষ্যই লিজেন্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কারণ মানুষের মনে যুগে যুগে কিংবদন্তিরাই চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয়।’
১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের সেরা দুটি ইভেন্টেই বিশ্বরেকর্ড বোল্টের। আরও একটি বিশ্বরেকর্ড অবশ্য তার দখলে আছে। সেটা অবশ্য দলীয়। পুরুষদের ৪০০ মিটার রিলের বিশ্বরেকর্ড জ্যামাইকার। সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বোল্ট।
ইতিহাসে প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে বোল্ট পরপর তিনটি অলিম্পিকে (বেইজিং ২০০৮, লন্ডন ২০১২, রিও ২০১৬) ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক জিতেছেন।
Discussion about this post