বাংলাদেশ–আয়ারল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট যেন গল্পের মতো এগোচ্ছে। সিলেটে প্রথম টেস্ট চার দিনে শেষ হলেও মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচ টেনে নিয়ে গেছে পঞ্চম দিনের ভোরবেলা পর্যন্ত। তবু খেলার নিয়ন্ত্রণ যেন সবটুকুই বাংলাদেশের হাতেই।
৫০৯ রানের বিশাল লক্ষ্য সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিনের শেষে আয়ারল্যান্ড দাঁড়িয়ে মাত্র ১৭৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে। সামনে আরেকদিন পড়েই আছে, কিন্তু তাদের সামনে আরও বড় পাহাড়, প্রয়োজন ৩৩৩ রান, আর উইকেট হাতে মাত্র চারটি।
আজ মিরপুরে চতুর্থ দিন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস দিয়ে। প্রথম ঘণ্টা পার না হতেই উইকেট হারিয়ে বসে সাদমান ইসলাম। ১১৯ বলে ৭৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে দলকে এগিয়ে দেন তিনি, কিন্তু ম্যাকব্রাইনের এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। এর পরপরই কেবিনে ফেরেন অধিনায়ক শান্ত। ইনিংসটি তখনও পুরোপুরি নিরাপদ হয়নি।
সেই অসহায় মুহূর্তে দলকে অবলম্বন দেন মুমিনুল হক ও টেস্ট শতকের অভিজ্ঞতা বুকে নিয়ে নামা মুশফিকুর রহিম। দুজনের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে লিড বড় হতে থাকে, হয় ১২৩ রানের বড় জুটি। মুমিনুল ৮৭ রানে ফিরে গেলেও ইনিংস ঘোষণা করার মতো অবস্থায় চলে আসে দল। স্কোরবোর্ডে তখন ২৯৭-এ দাঁড়ানো বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে আয়ারল্যান্ডকে দেয় ৫০৯ রানের টার্গেট।
এত বড় লক্ষ্য তাড়া করা যে প্রায় অসম্ভব, তা ওভার দু’য়েকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন বলে আক্রমণে এসে তাইজুল ইসলাম যে কী ভয়ানক ছন্দে ছিলেন, তা আয়ারল্যান্ডের দুই ওপেনার খুব দ্রুতই বুঝে ফেলেন। বালবার্নি ও স্টার্লিং দুজনকেই দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে তাইজুল উঠে যান দেশের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন এক শিখরে, সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটশিকারি তিনি। ২৪৬ উইকেট ছিল সাকিবের, তাইজুল আজ দাঁড়িয়ে ২৪৮–এ। মাত্র আর একটি উইকেট পেলেই ছুঁয়ে ফেলবেন ২৫০ উইকেটের মাইলফলক।
আয়ারল্যান্ড কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল হ্যারি টেক্টরকে ঘিরে। প্রথমে কারমাইকেল, পরে ক্যাম্ফারকে নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ দুই জুটিই ভেঙে দেন। টেক্টর তুলে নেন পঞ্চাশ, কিন্তু তার বিদায়ের পরই ঝিমিয়ে পড়ে আইরিশ ইনিংস। ষষ্ঠ উইকেট পড়ে যখন ১৬৩ রানে, তখনই ম্যাচের ফল অনেকটাই বাংলাদেশ–মুখী হয়ে যায়। শেষ বিকেলে ক্যাম্ফার (৩৪*) ও ম্যাকব্রাইন (১১*) উইকেট না হারিয়ে দিন শেষ করলেও বাকি সমীকরণ এতটাই কঠিন যে নিজেদের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই তাদের সামনে নেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১ম ইনিংসে ৪৭৬ ও ৬৯ ওভারে ২য় ইনিংসে ২৯৭/৪ ডি. (মুমিনুল ৮৭, সাদমান ৭৮, মাহমুদুল ৬০, মুশফিক ৫৩*; হই ২/৮৪)।
আয়ারল্যান্ড: ১ম ইনিংসে ২৬৫ ও ৫৪ ওভারে ২য় ইনিংসে ১৭৬/৬ (টেক্টর ৫০, ক্যাম্ফার ৩৪*; তাইজুল ৩/৫৫, মুরাদ ২/৩৫)।
(৪র্থ দিন শেষে)










Discussion about this post