ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করেই দুঃসংবাদটা ভেসে আসে। বর্ষীয়ান ক্রিকেট কোচ সৈয়দ আলতাফ হোসেন আর নেই। রাজধানী ঢাকার নিজ বাসায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মারা গেছেন তিনি। ৮১ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে শোকাহত দেশের ক্রীড়াঙ্গন।
১৯৩৮ সালে ভারতের হুগলিতে জন্ম আলতাফ হোসেনের। ১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হারান বাবাকে আর দুই ভাইকে। এরপর মায়ের সঙ্গে চলে আসেন এই বাংলায়।
১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার হিসেবে পাকিস্তান টেস্ট দলে ডাক পান পেস বোলার আলতাফ হোসেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই সিরিজে একাদশে সুযোগ না পেলেও ১৯৬১ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলেন। এরপর ক্রিকেট খেলে গেছেন ১৯৮২ সাল অব্দি।
ক্রিকেটার আলতাফ হোসেন ছিলেন পেস বোলিং অল-রাউন্ডার। ১৯৫৪ সালে কায়েদে আজম ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু তার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স, পিডব্লিউডি, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা ও শান্তিনগর ক্লাবে। ঢাকার তৃতীয় বিভাগে একসময় ফুটবল খেলেছেন। বাস্কেটবলও খেলেছেন তিনি।
এরপর ১৯৭০ সাল থেকেই শুরু করেন আম্পায়ারিং। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার হয়ে পরিচালনা করেন প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ ছিলেন আলতাফ হোসেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত এই দ্বায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯০ এশিয়া কাপেও ছিলেন বাংলাদেশ দলের ডেপুটি ম্যানেজার ও কোচ।
বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট চালুরও অগ্রদূত আলতাফ হোসেন। সেই ১৯৮৩ সালে ঢাকা আবাহনী দল নিয়ে যান কলকাতায়। তাকেই ১৯৯৭ সালে নারী ক্রিকেট দল গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়েছিল বিসিবি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারই পরির্চায় এগিয়ে যায় দেশের নারী ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে অবদান রাখায় ১৯৯৯ সালে পান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
তারপর খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন পেস বোলার। অবশ্য দীর্ঘদেহী এই ক্রিকেটারটি ব্যাটিংয়ের হাতও ছিল বেশ ভালো। ১৯৫৪ সালে কায়েদে আজম ক্লাবের হয়ে শুরু তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার। এরপর খেলেন ওয়ান্ডারার্স, পিডব্লিউডি, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা আর শান্তিনগর ক্লাবে।
ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলেও খেলেছেন ঢাকার তৃতীয় বিভাগে, বাস্কেটবলও খেলেছেন তিনি।
সেই ১৯৭৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় ক্রিকেট কোচ ছিলেন আলতাফ হোসেন। তারই পথ ধরে দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে অবদান রাখায় ১৯৯৯ সালে পান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
শারীরিক জটিলতা নিয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তবে সেই ধাক্কা বাসায় ফিরেছিলেন। মঙ্গলবার সকালেও বেশ সুস্থ এবং স্বাভাবিক ছিলেন এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। কিন্তু রাতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপরই ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সৈয়দ আলতাফ হোসেন ১৯৬১ এবং ১৯৬২ সালে আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলেন। ১৯৬৫ সালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের ঘোষিত ১৪ জনের দলে আলতাফ হোসেন সুযোগ পান।
অবসরের পর কোচ হিসেবে আলতাফ হোসেন তৈরি করেছেন অসংখ্য ক্রিকেটার। প্রয়াত সেই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা!
Discussion about this post