সকাল থেকেই গুঞ্জনটা ভাসছিল বাতাসে। একটু সময় গড়াতেই নিশ্চিত হলো-গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন তামিম ইকবাল। তখনই নিশ্চিত হয়েছিল বড় ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। কিন্তু এতো বড় খবর-কল্পনা করা যায়নি! অভিমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় বলে ফেললেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক।
চট্টগ্রামের একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘোষণা দেন তামিম। অথচ একদিন আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। খেলার কথা ছিল বাকি দুই ম্যাচেও। কিন্তু নিজ শহরের ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তামিম। ৩৪ বছর বয়সী ওপেনার অনেক ঘটনার জন্ম দিয়ে বললেন গুডবাই!
বিদায় বলতে গিয়ে কাঁদলেন তামিম। চোখের জল আড়াল করে বললেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। এটার পেছনে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা নিয়ে ভাবছিলাম আমি, এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, যেটা আমার মনে হয় না এখানে বলার দরকার আছে। এটা না যে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশ কিছু দিন ধরেই কথা বলছিলাম, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর উপযুক্ত সময় এটিই।’
এমনিতে ইনজুরিতে বেশ সমস্যায় ছিলেন এই মহাতারকা। এই কারণে গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে পারেননি। পিঠের নিচের অংশের পুরনো ব্যথার কারণে কিছুদিন আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে খেলতে পারেননি। চলতি ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিনও জানান শতভাগ ফিট নন। তারপরও প্রথম ম্যাচটা খেলেন। কিন্তু এনিয়ে সমালোচনা হতেই সরে দাঁড়ালেন।
তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। চার ওয়ানডের অভিজ্ঞতায় বিশ্বকাপে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় এক জয়ে দাপুটে ফিফটি করে নিজেকে চেনান। বিদায় বেলায় অনন্য উচ্চতায় তামিম। ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে রান ৫ হাজার ১৩৪। সেঞ্চুরি ১০টি, ফিফটি ৩১টি। টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি তার।
তামিম ওয়ানডে ২৪১টি খেলে ৩৬.৬২ গড়ে রান ৮ হাজার ৩১৩। ১৪ সেঞ্চুরির পাশে এখানে ফিফটি ৫৬টি। এই সংস্করণে দেশের হয়ে রান, সেঞ্চুরি, ফিফটি, সবকিছুতেই তিনি নাম্বার ওয়ান। ৭৪ ম্যাচে ১ হাজার ৭০১ রান নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিকে বিদায় বলেন গত জুলাইয়ে। এই ফরম্যাটে দেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রান করা দেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি ২৫টি। এখানেও শীর্ষে।
২০১৭ সালে নিউ জিল্যান্ড সফরে নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের হয়ে প্রথম অধিনায়কত্ব করেন তামিম। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেন তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটে পড়ায়। ২০২০ সালে মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়ক হন। ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ২১টিতে।
বলা হচ্ছিল এবারের বিশ্বকাপে খেলবেন তামিম। কিন্তু তার আগেই গুডবাই বললেন, চোখের জলে!
Discussion about this post