২০০১ সালের ৭ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক মাশরাফি বিন মর্তুজার। যাকে কাছের মানুষরা কৌশিক নামেই চেনে। এই জন্যই বলা “১৫-তে নড়াইল-এক্সপ্রেস।” চিত্রার পাড়ে গ্রামের বিশুদ্ধ বাতাসে বেড়ে ওঠা কৌশিককে হয়তো আজ আমরা মাশরাফি নামে চিনতামনা। থেকে যেতো সবার মতই সাধারণ একজন হয়ে।
সেই কৌশিককে মানুষ এখন শুধু ক্রিকেটার মাশরাফি হিসেবে নয়, একজন ভালো মানুষও! তিনি খেলতেন সব ধরণের খেলাই। বৃষ্টি হলেই নেমে পড়তেন ফুটবল নিয়ে, শীত আসলেই হৈ-হুল্লোড় ব্যাডমিন্টন নিয়ে, টুকটাক চলতো ক্রিকেটও। তিনি যে পেশাদার ক্রিকেটার হবেন তা নিজেও ভাবেননি কখনো। খেলতেন নড়াইল ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে। ক্রিকেট যে খেলবেন সেটা নাকি কখনো মাথায়ই আসেনি! খেলার দরকার তাই খেলতেন।
নানা’র কারণেই ক্রিকেটে আসা। খুলনা মোহামেডান ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন উনার নানা। তাও আবার মজার ব্যাপার। প্লেয়ার শর্ট থাকায় উনার নানিকে জোর দিয়ে মাশরাফিকে আদায় করে নেয়া। খেললেন ২৪ রান দিয়ে নিয়ে নিলেন ৬ উইকেট। হ্যাঁ, এখান থেকেই শুরু ক্রিকেট বলে ক্রিকেট। এরপরই খুলনা অনুর্ধ-১৭ দলে সুযোগ পাওয়া। ৬ বিভাগের খেলায় ৪ ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এরপরই বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৭ দলের এশিয়া একাদশে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানোর সময় কোথায় কৌশিকের?
অনুর্ধ্ব-১৯ দল থেকে একলাফে ‘এ’ দলের হয়ে ইন্ডিয়ায় ৪ ম্যাচে ১৬ উইকেট! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কি তা ঠিকঠাক বুঝে উঠার আগেই নামিয়ে দেয়া হল অভিজ্ঞ জিম্বাবুয়ের সামনে। বোলার মাশরাফি’র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা শুরু ব্যাটিং দিয়েই। ৪৫ মিনিট ক্রিজে থেকে ২২ বল মোকাবেলায় করেছিলেন ৮ রান । এখানেও হয়ে গেল ধৈর্যের পরীক্ষা। প্রথম ইনিংসে বল হাতে একরকম ধামাকা দিয়েই শুরু। ৩৩ ওভার বল করে ৮ মেডেন আর ১০৬ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট! সেই যে শুরু, এখনো ব্যাটে বলে লড়ে যাচ্ছেন দেশের জন্য।
কতোই নাউত্থান-পতন। হার না মানা মাশরাফি শুধু প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়ছেনই না, সমানতালে লড়ে যাচ্ছেন ইনজুরির সঙ্গেও। কতবার যে আহত হয়েছেন তার হিসাব যানা নেই। দুই পায়ের ২ হাটুতে বড় অপারেশন হয়েছে ৭টি। জেনেছেন আর কয়েক বছর পরে নাকি হাঁটতেও খুব কষ্ট হবে। এইসব মানতে নারাজ মাশরাফি এখনও ছুটে চলেছেন অদম্য। কত ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে চিত্রা পাড়ের সেই দুরন্তপনা কৌশিক আজ জাতীয় দলের অধিনায়ক। ১৬ কোটি মানুষের সম্মান, হাসি-কান্নার ভার নিয়েছেন দুই কাধে। অনায়াসেই ভার বয়ে চলছেন হাসিমুখে।
হারলে তিনিও চোখের জল ফেলেন নীরবে, সবার আড়ালে। এই মাশরাফিকে নিয়ে গর্ব শুধু বাংলাদেশের মানুষ করেনা, বিশ্ব ক্রিকেটও গর্ব করে। মাশরাফি নামটা ভুলে যাওয়ার মত কোন নাম নয়। এই দেশ যতদিন থাকবে, থাকবে ‘মাশরাফি’ নামটাও। শুভকামনা, অনেক অনেক ভালো থাকুক মানুষটি ।
-রুপক
Discussion about this post