চারদিকে অন্ধকার। শুধু সমস্যা আর জটিলতা। সব মিলে অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। সহসাই এ অনিশ্চয়তার কালো মেঘ সরে যাবে, ২৫ জুলাই নির্ধারিত সময়ে রোটেশন সিস্টেমে দলবদলের অকশন হবে-তা নিয়ে রাজ্যের সন্দেহ। এরকম অচলাবস্থায় ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের আয়োজক-ব্যবস্থাপক সিসিডিএমের সভা নয়; প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের প্রতিযোগী ১২ দল রোববার বৈঠকে বসছে। অনানুষ্ঠানিক ওই সভা হবে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কর্ণধার মঞ্জুর কাদেরের অফিসে।
হঠাত্ কেন ও কী কারণে নিজেদের মধ্যে বসা? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অনানুষ্ঠানিক সভার আয়োজক ও উদ্যোক্তা শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ মঞ্জুর কাদের। তবে প্রিমিয়ারের প্রতিযোগী ১২ দলই এ আলাপ-আলোচনায় বসতে রাজি বলে জানা গেছে। সিসিএস সেক্রেটারি ও ইকবাল ইউসুফ চৌধুরী নিকু ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের ক্রিকেট সম্পাদক রিয়াজ বাবু কাল শনিবার বিকেলে সকালের খবরকে জানিয়েছেন, কোনো সুনির্দিষ্ট ইস্যু বা দাবি নিয়ে নয়, লিগ নিয়ে যে ঘোলাটে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।
তবে তাদের কথায় একটা ইঙ্গিত পরিষ্কার, ২৫ জুলাই মানে ঈদের আগে দলবদল প্রসঙ্গটা আজকের আলোচনায় পাবে সর্বাধিক গুরুত্ব। এছাড়া বিসিবির কাছে দল গঠনে চাওয়া অর্থের দাবিও উঠবে। শুধু সিসিএস আর কলাবাগান ক্রীড়া চক্রই নয়, ভেতরের খবর বেশিরভাগ ক্লাবই নীতিগতভাবে ঈদের আগে দলবদল করতে রাজি নয়। এ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য একটাই-দলগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট আয় নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও নেই। একমাত্র ডোনাররাই ভরসা। তাদের সাহায্য সহযোগিতাই অর্থ প্রাপ্তির একমাত্র উত্স। এদিকে প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ ডোনারই ব্যবসায়ী। যারা ঈদের আগে অর্থ দিতে রাজি নয়। এ কারণেই ক্লাবগুলো বিপাকে।
যদিও আগের নিয়মে পাল্টে এবার দলবদল হবে রোটেশন সিস্টেমে অকশনে। নিলামের আগে কোনো অর্থ প্রয়োজন না হলেও নিলামের পর বিশেষ করে ঈদের আগে ক্রিকেটারদের ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। বিপত্তিটা সেখানেই। ২৫ জুলাই নির্ধারিত তারিখে দলবদল হয়ে গেলে ক্রিকেটারদের দল ও ম–ল্য নিশ্চিত হয়ে যাবে। তখন তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই ঈদের আগে একটা ডাউন পেমেন্ট চাবেন। আর হাতে টাকা না থাকলে সে চাহিদা প–রণ করা হবে কঠিন। সে কারণেই ক্লাবগুলো নীতিগতভাবে ঈদের আগে দলবদলে যেতে নারাজ।
এখন বিসিবির কাছ থেকে ৩০ কিংবা ৪০ লাখ যাই হোক, তা পেলে অন্@ত ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পেমেন্ট দেওয়া সম্ভব হবে। সব দল না হলেও পাঁচ-ছয়টি ক্লাব তাই বিসিবির টাকা পেতে মরিয়া। এ বিষয়ের পাশাপাশি আরও একটা গুরুত্বপ–র্ণ ইস্যু নিয়ে কথা হতে পারে আজকের অনানুষ্ঠানিক সভায়। অনেক ক্লাবই বছরের শুরুতে আগের নিয়মে দলবদল হবে ধরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে মৌখিক রফার পর প্রাথমিকভাবে ডাউন পেমেন্ট দিয়েছে। খুব কম দল আছে যারা অন্@ত এক থেকে দু’জনের সঙ্গে কথা চূড়ান্@ করে অগ্রিম টাকা দেয়নি। তাদের কী হবে? সেই ক্রিকেটার তো আর ওই দলে খেলতে পারবে না? সেই অর্থ পাওয়া নিয়ে বেধেছে বিপত্তি। ক্লাবগুলোর প্রশ্ন, ক্রিকেটারদের দেওয়া ওই অগ্রিম অর্থ মিলবে কী করে? যতদ–র জানা গেছে, বিসিবি সভাপতি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন বোর্ড সে অর্থ উদ্ধারে উদ্যোগী হবে। উলে–খ্য, আইসিসি বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দেওয়ার আগে ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নাকি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একাধিক ক্লাব কর্তাই জানিয়েছেন এ তথ্য।
ক্লাব কর্তাদের কথায় পরিষ্কার, এসব জটিল বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে। সেখানেও একটা কিন্তু রয়ে গেছে। ঢাকার ক্লাবপাড়ায় বর্তমানে বিভাজন পরিষ্কার। দুই জনপ্রিয় মোহামেডান-আবাহনী, শেখ জামাল ধানমণ্ডি, ব্রাদার্স ও ভিক্টোরিয়া বর্তমান বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপনপন্থী। তারা যে কোনো ম–ল্যে বিসিবি আহ্বায়ক কমিটির বর্তমান প্রধানের নেওয়া পদক্ষেপ অনুসরণ করতে আগ্রহী। তার বক্তব্য ও মন্@ব্যের সঙ্গেও একমত। আর কলাবাগান, সিসিএস, প্রাইম দোলেশ্বর ও খেলাঘর সমাজকল্যাণ আছে বিদ্রোহী ভূমিকায়। যারা নাজমুল হাসান পাপনের বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডরই তীব্র সমালোচক। যার প্রমাণ মিলেছে ক্লাবগুলোর চাওয়া অর্থ সাহায্য নিয়েই। এক পক্ষের জোর দাবি, নাজমুল হাসান পাপন ক্লাবগুলোর কাছে ওয়াদা করেছিলেন অর্থ সাহায্যের। এখন সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন। আর অন্য পক্ষের দাবি-না, তিনি অমন প্রতিশ্রুতি দেননি। অর্থ সাহায্যের কথা আলোচনা হলেও তিনি কোনোরকম ওয়াদা করেননি। এমন বিপরীতমুখী অবস্থান যাদের তারাই নিজেরা বসছেন। তাও নানা জটিল ইস্যু নিয়ে। তারা খোলামনে একমত হয়ে লিগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও অচলাবস্থার সমাধান করবেন-তা বিশ্বাস করা কঠিন। যদিও ক্লাবপাড়ায় জোর গুঞ্জন-দু’পক্ষকে এক সুতোয় গাঁথতেই সমঝোতা বৈঠকের দায়িত্ব বর্তেছে মঞ্জুর কাদেরের ওপর।
দেখা যাক কী হয়?
Discussion about this post