ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে গতকাল এক অবিশ্বাস্য নাটকের মঞ্চায়ন। বাংলাদেশ ফুটবল দল যেন ছুঁয়ে ফেলেছিল জয়ের স্বপ্ন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সেটি ভেঙে পড়ল হংকংয়ের এক আঘাতে। শমিত শোমের দুর্দান্ত গোলের পর আনন্দে ফেটে পড়েছিলেন সবাই-হামজা চৌধুরী থেকে শুরু করে কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও। গ্যালারিতে তখন শুধু লাল-সবুজের উচ্ছ্বাস। কিন্তু সময়ের কাঁটা গড়াতে না গড়াতেই সেই উল্লাস মিলিয়ে যায় এক গভীর বেদনাতে।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে রোমাঞ্চে ভরপুর ছিল শেষ মুহূর্তগুলো। ৯০ মিনিট শেষে অতিরিক্ত সময়ের নবম মিনিটে শমিতের গোল ম্যাচে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশকে ৩-৩ সমতা। মনে হচ্ছিল, অন্তত এক পয়েন্ট নিশ্চিত। কিন্তু সময়ের খেলা কত নির্মম! অতিরিক্ত সময়ের দশম মিনিটেই রাফায়েল মার্কিসের পা থেকে আসে হংকংয়ের জয়সূচক গোল। শেষ বাঁশি বাজতেই স্কোরবোর্ডে লেখা হয়ে যায় হতাশার গল্প- বাংলাদেশ ৩, হংকং ৪।
এই পরাজয়ের পর মাঠে বসে পড়েন হামজা চৌধুরী। চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তার সেই কান্নাভেজা চেহারার ছবিই হয়ে ওঠে দিনের প্রতীকচিত্র-এক দলের কষ্ট, এক জাতির বেদনা। তবে এই কান্না যেন পরাজয়ের নয়, বরং এক অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের গর্বে ভেজা অশ্রু।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও ছুঁয়ে গেছেন এই আবেগে। লিটন দাস নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মাথা উঁচু রাখো হামজা। হারলেও তোমরা আমাদের গর্ব।’ তাসকিন আহমেদ পোস্ট করেছেন হামজার ছবি দিয়ে, ‘সামনে ভালো দিন আসবে, ইতিবাচক থেকো।’ রিশাদ হোসেনও লিখেছেন, ‘শেষ মুহূর্তের গোলটা ছিল হৃদয়ে বিঁধানো তলোয়ারের মতো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াইটা ছিল বুকভরা গর্বের।’
এমনকি নুরুল হাসান সোহানও এক সমর্থকের কান্নাভেজা ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘হয়তো আমরা হেরেছি, কিন্তু মাঠে যে স্পিরিট দেখেছি, সেটা আসল জয়ের চেয়ে কম নয়।’
ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে গোল করেন হামজা চৌধুরী, শেখ মোরসালিন ও শমিত শোম। ১৩ মিনিটেই হামজার নিখুঁত ফ্রি-কিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। গ্যালারিতে তখন গর্জে ওঠে হাজারো দর্শক। পরের গোলগুলো আসে মোরসালিন ও শমিতের পা থেকে। কিন্তু হংকংয়ের হয়ে রাফায়েল মার্কিসের হ্যাটট্রিক আর এভারটন কামারগোর গোল সব আনন্দ ম্লান করে দেয়।
এই পরাজয়ের পর অনেকেই স্মরণ করেছেন ২০১২ সালের সেই এশিয়া কাপের ফাইনালকে, যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ২ রানে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সেদিন সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের চোখের জল আর আজকের হামজা-শমিতদের কান্না যেন একই গল্প বলে-শেষ মুহূর্তে হার, কিন্তু মাথা উঁচু রাখার গর্ব!
Discussion about this post