অগোছালোভাবে শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। যা নিয়ে সমালোচনায় মুখর খোদ ক্রিকেটাররাই। হযবরল বিপিএল নিয়ে একদিন আগেই মুখ খুলেছিলেন সাকিব আল হাসান। এই ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টকে সাকিব বলেছেন যা-তা। এবার একইভাবে বিশৃংখল বিপিএল নিয়ে কথা বললেন মাশরাফি বিন মতুর্জা। নতুন দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক এবার সাকিবের সুরেই কথা বলেছেন।
শুক্রবার মিরপুরে বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুখোমুখি হবে সিলেট। তার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মাশরাফি। অধিনায়ক বললেন,‘পরিবেশ দেখলে আপনার তা–ই মনে হবে। কারণ, এক মাঠে ছয়-সাত দল অনুশীলন করছে। রংপুর যেমন তাদের নিজ দায়িত্বে নিজেদের মাঠে অনুশীলন করছে, এ বিষয়গুলো কিন্তু ম্যাটার করে। আমাদের ওই নির্দিষ্ট দলের সুযোগ-সুবিধা, ওই যে বললাম না, আয়োজনটা সঠিক পন্থায় করতে হবে। তখন হয়তোবা এটা হবে। খালি চোখে যে কেউ এসে দেখে যে একই মাঠে সবকিছু হচ্ছে, অনুশীলন হচ্ছে। এটা হযবরল ব্যাপার, এটা বলতে পারে।’
বিপিএলের টাইটেল স্পনসর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকেও। পরে মাশরাফিকে প্রশ্ন করা হলে শুরুতে তিনি বলেন, সাকিব কী বলেছেন, সেটি পুরোপুরি জানা নেই।
তবে বিপিএলের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বললেন, ‘সাকিবের সঙ্গে একমত, ইচ্ছার জায়গা, সীমাবদ্ধতার জায়গাও মাথায় এনেছি। লাভ না হলে তো আপনি থাকতে চাইবেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকগুলো লোকসান করে। ওই জায়গায় ক্রিকেট বোর্ডকে দেখতে হবে। সেটা “কমফোর্ট জোনে” আনলে টুর্নামেন্টের চেহারা বদলে যাবে। সিলেটের দলেরই কত নাম। তিন বছর পর আল্লাহ না করুক যদি স্ট্রাইকার্স না থাকে, যারা কিনেছে, তারা যাতে টিকতে পারে, সেই কমফোর্ট জোনটা তৈরি করা। এটা ক্রিকেট বোর্ডকেই করতে হবে। কিন্তু দিন শেষে খেলার মাঠে খেলা কিন্তু খেলার মতোই হয়। একটা টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য আছে, শুরুর দিকে একটা হাইপ তোলার ব্যাপার আছে-এ জিনিসটা হয়তো আমরা শুরু থেকেই পারিনি, এটা সত্য।’
মাশরাফি আরও বলেন, ‘এত কিছু সাকিব বলেছে, আমিও কিছু না কিছু বললাম। এই যে পরবর্তী বছরে যদি ছয় মাস আগে পরিকল্পনা করে, যেহেতু তিন বছরের জন্য দলগুলো দিয়েছে, এটা ভালো হয়েছে, দারুণ হয়েছে। অন্তত তিন বছরের জন্য নিয়েছে। দলগুলো এখন ক্লিয়ার, দলগুলোকে সমর্থন করতে হবে। কোন উপায়ে সমর্থন করবে, দলগুলো কী চায়, তারা কী চায়—বিপিএল গভর্নিং বডির সঙ্গে বসলে কিন্তু সমাধান হয়। টুর্নামেন্টের তিন মাসে একটা নিলাম, তারপর টুর্নামেন্টের আগে মাঠে অনুশীলন করে এভাবে পরিবর্তন হবে না। বিস্তর আলোচনার বিষয় আছে। রমিজ রাজা এক বছরে এসে লাভ কত করেছে (পিএসএলে)। এমন কিছু তো করেনি। অর্গানাইজড ছিল। সাকিব যেটা বলেছে, স্পট অন মনে হয়। একটু যদি পরিবর্তন আনি, বাংলাদেশে কিছুটা বাধা আছে। তাদের একটু সহায়তা দিলে এটা হবে।’
মাশরাফি বিসিবিকে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করতে বললেন, ‘আমি তো এটা বললাম, কাজ না করলে তো বোঝা যাবে না। এটা তো দীর্ঘ সময়ের একটা কাজের ব্যাপার। বাজারদর, আপনার দলের কাছে স্পনসরশিপ কতটুকু আসতে চাইছি এগুলো তো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। একটা দল যখন জানে যে আমি এই দলটার মালিক, আমি পরবর্তী ১০ বছর–৭ বছর এটার মালিক। তখন সে দুই বছর লোকসান করতে পারে। ঠিক আছে, আমি আমার দলকে নিয়ে কাজ করব, মার্কেটে প্রমোট করব, ডিসিপ্লিনড ওয়েতে, তখন কিন্তু তার যে দুই বছরের মুনাফা, সেটা চলে আসবে। এটা তো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য ব্যবসা। ব্যবসায় যদি লাভ না-ও করেন, লোকসান হলে তো সমস্যা। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এ জন্য দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারছে না। তবে যদি এটি ঠিকঠাক করে আয়োজন করা হয়, যেটা সাকিব বলেছে, আমার কাছেও মনে হয়, অন্তত ৫-৭-১০ বছরের চুক্তি করা। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে করা। তাহলে কিন্তু অনেক পরিবর্তন সম্ভব।’
আগের দিন সাকিব বলেন, ‘বাজেট সংকট সম্ভবত। সদিচ্ছা থাকলে থেমে থাকার কোনো কিছু দেখি না। সদিচ্ছা থাকলে আমি তো কোনো কারণ দেখি না ডিআরএস থাকবে না, তিন মাস আগে ড্রাফট কিংবা অকশন কেনো হবে না। টিমগুলো দুই মাস আগে থেকে কেনো ঠিক হবে না। খেলোয়াড়রা এভেইলেবল থাকবে। এখন এক খেলোয়াড় একদিন আসবে, দুই দিন চলে যাবে। কে কখন আসবে-যাবে কেউ জানে না। জার্সি পায়নি এখনো খেলোয়াড়রা, আমি নিউজে দেখলাম। একটা যা তা অবস্থা। এর থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ সম্ভবত ভালো, কারণ আগে থেকে টিম গোছাতে পারে।’
Discussion about this post