মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দেয়ালে গত কিছুদিন ধরেই রঙিন পোস্টার-ফেস্টুন। একজন প্রার্থী হাসছেন, আরেকজন হাতজোড় করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। দেখে বোঝার উপায় নেই, ভেতরে ভাঙছে ভিত। কারণ বাইরে যতটা নিয়মমাফিক লাগছে, ভিতরে ঠিক ততটাই এলোমেলো এবারের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন। আজ সোমবার সেই আয়োজনটারই দেখা মিলবে রাজধানীর এক পাঁচতারা হোটেলে।
নিয়ম ছিল এক জিনিস, বাস্তবতা দেখিয়েছে আরেক চিত্র। শেষ রাতে আদালতের রায়, নির্বাচনের আগেই ই-ব্যালট বাতিল, কাউন্সিলর তালিকা বদল-সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে যেন একটা কাঁধে ব্যথা, পায়ে ফোটা, মাথায় ঝড়-তিন দিক থেকেই চাপা পড়া নির্বাচন।
সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ক্যাটাগরি-২, অর্থাৎ ক্লাব ক্যাটাগরি। ৩২ জন মনোনয়ন নিলেও তামিম ইকবালসহ ১৫ জন সরে দাঁড়ান, অনেকটা নীরব প্রতিবাদে। এরপর নির্বাচন কমিশন ‘অনিয়মে জড়িত’ অভিযোগ তুলে আরও ১৫টি ক্লাবের ভোটাধিকার বাতিল করে দেয়।
প্রার্থী রয়ে যান ১৬ জন।
মনে হচ্ছিল, নাটক এখানেই শেষ। কিন্তু না। শেষ মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ফিরে এলেন ইফতেখার রহমান মিঠু। ব্যালটে তার নাম ছিল না, অথচ আগেই পাঠানো হয়েছিল ই-ব্যালট। ফলে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়ে ঘোষণা দেয়, সব ই-ব্যালট বাতিল, নতুন ব্যালট পাঠাতে হবে। যারা আগেই ভোট দিয়েছেন, তাদের কাছে আবার পাঠানো হচ্ছে ব্যালট। এমন বিশৃঙ্খলার পর প্রশ্ন উঠেছে—ভোটারদের মতামত আগে এসেছে, না পরিস্থিতি আগে তৈরি হয়েছে?
ক্যাটাগরি-১, অর্থাৎ জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়টা কিছুটা স্বস্তিদায়ক। চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল থেকে মোট ৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। তবে এখানেও রয়েছে ধোঁয়াশা। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের দুই প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও তাদের নাম থাকবে ব্যালটে, কারণ সরে দাঁড়ানোর সময় পেরিয়ে গেছে।
এই ক্যাটাগরিতে মুখোমুখি হচ্ছেন খালেদ মাসুদ পাইলট ও দেবব্রত পাল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর সরাসরি বলেন, ;বিসিবি নির্বাচনে নোংরামি হচ্ছে। ৪৫ জন ভোট দেবেন, নির্বাচিত হবেন একজন। কিন্তু প্রশ্নটা আসলে শুধু কে জিতবে, সেটা নয়। প্রশ্নটা হলো-এই প্রক্রিয়ায় আদৌ কেউ হেরেছে কি না, নাকি সবাই কিছু না কিছু হারিয়েছে?
১৫৬ জন ভোটার আছেন তালিকায়। তাদের মধ্যে ৫৮ জন ভোট দেবেন ই-ব্যালটে, ৯৮ জন সরাসরি। তবে অনেক প্রার্থী, বিশেষ করে সংগঠকরা, সরে দাঁড়িয়েছেন।
বেশিরভাগই বলছেন, এই নির্বাচন “গঠনতন্ত্রসম্মত” হলেও নৈতিকভাবে বিভ্রান্তিকর। তাদের কেউ কেউ ভোটে অংশ নেবেন না, মানে কার্যত এক প্রকার বয়কট!
Discussion about this post