বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্ক শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরের বাস্তবতায় গিয়ে ঠেকেছে। বিসিবির নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুরুতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোর সংগঠকরা। এবার সেই ঘোষণার ধারাবাহিকতায় সরাসরি ঘরোয়া ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা দিলেন তারা।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর পক্ষে ঘরোয়া ও জেলা পর্যায়ের সব ধরনের ক্রিকেট কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, দেশের ক্রিকেটে তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে এবং বিতর্কিত নির্বাচন দেশের ক্রিকেট কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এর আগে নির্বাচনের তারিখ পেছানোসহ তিনটি প্রধান দাবি জানিয়েছিল ক্লাব সংগঠকদের একটি বড় অংশ। তাদের দাবি ছিল-বিসিবির বর্তমান নির্বাহী কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে পুনরায় নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা, অথবা বিকল্প হিসেবে অ্যাডহক কমিটির হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভোট গ্রহণ করা। এসব দাবির বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল। তবে দাবিগুলোর কোনোটিই গৃহীত হয়নি।
ফলে পূর্ব ঘোষিত হুমকি অনুযায়ী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় বিসিবি নির্বাচন, যেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। কিন্তু এই নির্বাচনের বৈধতা মেনে নেয়নি অধিকাংশ ঢাকাভিত্তিক ক্লাব। তারা আসন্ন সব ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান বলেন, “আমরা একই কথা বলতে বলতে ক্লান্ত। আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে ৬ তারিখের বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে। এই বয়সে আমরা বহু সরকার দেখেছি, বিতর্কিত নির্বাচন দেখেছি, রাতের ভোট এবং দিনে কারচুপি দেখেছি। সব কিছুকে ছাপিয়ে সবার সামনেই এবারের ভোট হলো। আমরা সুষ্ঠু ভোট চেয়েছিলাম। আমাদের কথা যেহেতু তাদের কানে পৌঁছায়নি, সেজন্য আমরা আসন্ন সব প্রতিযোগিতা বর্জন করব।”
তিনি আরও বলেন, “আজ থেকে ক্রিকেট সৌন্দর্য হারিয়েছে। আপনারা যদি এভাবে চলতে চান, আমরা ক্রিকেট খেলব না। একই বিষয় জেলা ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জেলা পর্যায় থেকেও ক্রিকেট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। কাউকে যদি হুমকি দেওয়া হয় বা ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হয়, তবুও আমরা আমাদের অবস্থানে অটল থাকব। আপাতত ক্রিকেট বন্ধ থাকবে—এই ঘোষণা দিচ্ছি।”
এই একই মঞ্চে ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও। তিনিও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেন এবং তার বক্তব্যে উঠে আসে নির্বাচন প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ। তামিম জানান, নির্বাচনে অংশ নিলে জয় নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না, তবে এমন একটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নৈতিক জায়গা তিনি পাননি।
তামিম বলেন, “আমি নিশ্চিত আমার বিষয়ে আপনাদের কমবেশি ধারণা আছে। আপনি সত্যিই মনে করেন ১৫টা ক্লাব থাকুক বা না থাকুক—আমি যদি নির্বাচনে দাঁড়াতাম, আমার জন্য কেউ ভোট করত না? আমার জন্য বাস ধরা বা না ধরা কখনো বিকল্প ছিল না। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল একটা স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়া। এটাই ছিল আমার স্ট্যান্ড।”
নির্বাচনে জয় তার জন্য কতটা সহজ ছিল, সে বিষয়েও আত্মবিশ্বাসী তামিম বলেন, “আমি আপনাকে এতটুকু গ্যারান্টি দিয়ে বললাম, আমি যদি ব্যক্তিগতভাবে দাঁড়াতাম, আমার পক্ষে কোন টিম আছে, বিপক্ষে কোন টিম আছে—তারপরও আমি সহজেই পাস করতাম। এটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ ছিল না। কারণ, আমি এটা বিশ্বাস করি, আমরা সবাই ক্রিকেটের স্বার্থে আছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, নির্বাচনকে নির্বাচন বলা যাবে কি না, সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশেষ করে ই-ভোটিং ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। তার ভাষায়, “ক্যাটাগরি ২–এ ৪২ ভোট পড়েছে, যার মধ্যে ৩৪টি ছিল ই-ভোট। কিন্তু যারা ই-ভোট দিয়েছে তাদেরকেও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। তাহলে কথা হলো, ই-ভোটের প্রয়োজনীয়তা কী ছিল?”
সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে ক্লাব সংগঠকদের উদ্দেশে তামিম আহ্বান জানান যেন কেউ ভবিষ্যতে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে না যান। তিনি বলেন, “আজকে আপনারা যে স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন, এই স্টেটমেন্টটাই রাখবেন। ভবিষ্যতে যদি কোনো কিছু হয়, স্টেটমেন্ট বদলে ফেলে আমাদের সঙ্গে এসে বসে যাবেন না।”
Discussion about this post