দুর্ভাগ্য কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশের। মঙ্গলবার ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ করেও জেতা হল না মুশফিকুর রহীমদের । রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা শেষে ওভারের ১ বল বাকি থাকতে জয়ের স্বপ্ন ভাঙ্গে বাংলাদেশের। শহিদ আফ্রিদির সাত ছক্কার ঝড়ে মিরপুরে ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। এই জয়ে তারা উঠে গেল এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে।
বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তুলে রেকর্ড ৩২৬ রান। এরপর জবাবে ৪৯.৫ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
এর আগে স্বপ্নময় শুরু। আর দুরন্ত ফিনিসিং। ব্যাট হাতে ব্যাটসম্যানদের জ্বলে উঠা। মুলত এই তিনের যোগফলে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্কোর পৌছে যায় রান চুড়ায়! ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড হাসল ঝলমলো ৩ উইকেটে ৩২৬ রানের হাসিতে।
যে কোন বিচারে ৩২৬ রানকে বিশাল স্কোর মানতেই হচ্ছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এটা বাংলাদেশের যে কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড।
৩২৬ রানের বিশাল স্কোরের ভিত তৈরি হয় ইমরুল কায়েস ও এনামুল হকের ওপেনিং জুটিতে। শুরুটা দেখে শুনে খেলার পর ম্যাচের ১০ ওভারের পর থেকে এই জুটি পাকিস্তানের বোলিংকে মোটেও পাত্তা দেননি। ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশ রান পায় ১৫০। পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে নুতন রের্কড। এই জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ১৭০। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায়, ১৯৯৯ সালে মেরিল কাপ ক্রিকেটে।
এনামুল- ইমরুলের ১৫০ রানের ওপর ভর করেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের বাকি সময় বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা রানের বন্যা বইয়ে দেন। এনামুল হক তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি পান এই ম্যাচে। ১৩২ বলে তার ১০০ রানের ইনিংস মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরা দর্শকদের উল্লাসে মাতিয়ে রাখে। ৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় সাজানো তার এই সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন সৌধ তৈরি করে দেয়। ওপেনিং জুটিতে তার নতুন সঙ্গী ইমরুল কায়েস শূণ্য রানে জীবন পেয়ে সেটাকে দারুণভাবে কাজে লাগান। ম্যাচের পঞ্চম বলেই শূণ্য রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন ইমরুল। স্পিনার হাফিজের বলে সেই ক্যাচ হাতে রাখতে পারেননি আহমেদ শেহজাদ। ইমরুলের ব্যাট থেকে আসেন ৭৫ বলে ৫৯ রান। ওয়ান ডাউনে মমিনুল হকের ব্যাটও দারুণ দায়িত্বশীলতার ছাপ রাখে এই ম্যাচে। ৪৭ বলে তিনি করেন ৫১ রান। অধিনায়ক মুশফিক ও সাসপেনশন কাটিয়ে এই ম্যাচে ফেরা সাকিবের চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ ‘ম্যাচজয়ের’ রসদ পেয়ে যায়। শেষ ১০ ওভারে এই জুটি পাকিস্তানি বোলারদের পিটিয়ে ১২১ রান তুলে নেন। স্পিনার সাঈদ আজমলকে এই দুজনের ব্যাটিং তান্ডবে পাড়ার বোলার মনে হচ্ছিল! আজমল তার প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ১১ রান খরচ করেন। শেষের চার ওভারে তাকে পিটিয়ে প্রায় ছাতু বানিয়ে ফেলেন মুশফিক-সাকিব জুটি। নিজের শেষ চার ওভারে আজমল খরচ করেন ৫২ রান। টি-টুয়েন্টিতেও এমন পিটুনি খাননি আজমল।
জবাবে নেমে মোহাম্মদ হাফিজ এবং আহমেদ শেহজাদ ১ম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৯৭ রান। হাফিজ করেন ৫২। এরপর এরপর মিসবাহ-উল-হক ও শোয়েব মাকসুদ ফিরে গেলে মনে হচ্ছিল সহজেই জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফাওয়াদ আলম আর শেহজাদের ফের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন। শেহজাদ (১০৩) সেঞ্চুরি করে ফিরেন সাজঘরে।
এরপর শুরু হয় শহিদ আফ্রিদির ঝড়ো ব্যাটিং। ম্যাচটা যেন এখানেই হাতছাড়া।
ছক্কার ঝড় তুলেন তিনি। ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন আফ্রিদি। সব মিলিয়ে ২৫ বলে ৫৯ রান করেন তিনি। যার মধ্যে ছিল ২ বাউন্ডারি ও ৭টি ছক্কা। তার কাছেই হেরে গেল বাংলাদেশ।
৭৪ রান করেন ফাওয়াদ। তার ৭০ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছক্কা। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে চার করে দলকে জয় এনে দেন উমর আকমল।
এ ম্যাচে বাংলাদেশ দলে পাঁচটি পরিবর্তন আনা হয়। ৩ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে সাকিব আল হাসান। সঙ্গে একাদশে ফিরেন ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, শফিউল ইসলাম এবং আল আমিন।
প্রথম দুই ম্যাচে খেলাদের মধ্য থেকে ছিলেন না-শামসুর রহমান, সোহাগ গাজী, নাঈম ইসলাম, আরাফাত সানি এবং রুবেল হোসেন। আফগানদের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়া সোহাগ ছিটকে গেছেন পুরো এশিয়া কাপ থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৩২৬/৩ (৫০ ওভারে, এনামুল ১০০, ইমরুল ৫৯, মমিনুল ৫১, মুশফিক ৫১*, সাকিব ৪৪*, অতিরিক্ত ২১, আজমল ২/৬১)
পাকিস্তান: ৪৯.৫ ওভারে ৩২৯/৭ (শেহজাদ ১০৩, হাফিজ ৫২, ফাওয়াদ ৭৪, আফ্রিদি ৫৯, মুমিনুল ২/৩৭, মাহমুদুল্লাহ ১/৪৭)
ফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: শহিদ আফ্রিদি
Discussion about this post