বিপদ সঙ্কেত! বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামনে বিপদ সঙ্কেত ধেয়ে আসছে। সেটা ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, হারিকেন কিংবা সুনামির মতোই! কে জানে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থা আইসিসির সদস্য পদও হারিয়ে বসতে পারে!
খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এখন এই দুঃশ্চিন্তায়। তার আশঙ্কা, সময়মতো বোর্ড নির্বাচন না করতে পারার চরম মাসুল হিসেবে আইসিসির সদস্য পদ খোয়াতে বিসিবি।
২৫ জুন থেকে লন্ডনে আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভা। বিসিবিপ্রধান হিসেবে নাজমুল হাসান পাপনও আইসিসি কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। কিন্তু তাতে যোগ দেওয়ার আগে তার মন ভালো নেই। ভেতরে চিন্তা। গতকাল দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবি অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এ চিন্তার কথা জানান বিসিবিপ্রধান।
২০১১ সালে আইসিসির করা নতুন গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট বলা আছে, প্রত্যেক বোর্ড হতে হবে নির্বাচিত। কোনো মনোনীত বা আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা বোর্ড চালানো যাবে না। বিসিবির গত কমিটির মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর বর্তমান সভাপতির নেতৃত্বে যে ১৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি, তার প্রথম ও প্রধান কাজই ছিল ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে একটা নির্বাচিত কমিটির হাতে বোর্ড পরিচালনার ব্যবস্থা করা। এবং তা করেই আইসিসি এজিএমে অংশগ্রহণের কথা বলা আছে। কিন্তু গঠনতন্ত্র নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেওয়ায় বিসিবিতে নির্বাচন হয়নি। বিষয়টি এখন আদালতে। আদালত গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দিলেই শুধু নির্বাচন সম্ভব। তার আগে নয়। বিসিবির গঠনতন্ত্র নিয়ে মতপার্থক্য ও বিষয়টি আদালতে গড়ানো-সব কিছু মিলে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে বিসিবিকে। আইসিসির গঠনতন্ত্রে থাকা শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাই এজিএমের আগে গভীর চিন্তায় বিসিবি সভাপতি।
এ সম্পর্কে নাজমুর হাসানের ব্যাখ্যা-‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। নির্বাচন করতে হলে একটি গঠনতন্ত্র লাগবে। আমাদের হাতে এখন দুটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। একটি ২০০৮ সালের। অন্যটি বোর্ড গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে যেটা পাওয়া গেছে, সেটিকে আমরা ২০১২ সালের গঠনতন্ত্র বলে অবহিত করছি। এ দুটি ছাড়া আর কোনো গঠনতন্ত্র আমাদের হাতে নেই। যারা মামলা করেছেন তারা বলেছেন ২০০৮ সালের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হতে পারে। এ গঠনতন্ত্র আইসিসির গাইডলাইন মেনে হয়নি। এটায় নির্বাচন করতে গেলে আইসিসিতে বাংলাদেশের সদস্য পদ খারিজ হয়ে যেতে পারে। নির্বাচন করার ১০-১৫ দিন পর আরেকটি নির্বাচন করতে হতে পারে। কিন্তু তেমন কিছু আমরা চাই না। আদালতে এর ফয়সালা না হলে আমাদের কিছু করার নেই। কী করতে হবে সে ব্যাপারে আইসিসির লিগ্যাল টিম একটি গাইডলাইন দেবে; আমরা তার জন্য অপেক্ষায় আছি।’
নির্বাচন সম্পর্কে বিসিবিপ্রধানের উপলব্ধি ও সোজাসাপ্টা কথা-‘এই মুহূর্তে আমরা মানে বিসিবি কিইবা করতে পারি? বিষয়টা আদালতে গড়িয়েছে। বিসিবি গঠনতন্ত্রের সংশোধনী সম্পর্কে রায় দেবেন আদালত। সেই রায় না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। অপেক্ষা করতেই হবে। যেহেতু আইসিসির পক্ষ থেকে নির্বাচনের একটা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, তাই আমরা আইসিসির লিগ্যাল কমিটির কাছ থেকে পরামর্শ করে মতামত নেব।’
নির্বাচন না হওয়া এবং গঠনতন্ত্র নিয়ে যে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার পুরো দায় আগের বোর্ডের ওপর চাপিয়েছেন বর্তমান সভাপতি। এ সম্পর্কে বিসিবি সভাপতির দাবি, আগের বোর্ড জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে গঠনতন্ত্র অনুমোদন করে রাখলে আর কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করেনি।
সাবেক বোর্ডকর্তা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন সম্প্রতি আইসিসি প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। যেখানে নির্বাচন না হওয়ার জন্য বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদিচ্ছার অভাবকেই কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আইসিসিকে চিঠি দেওয়া উচিত হয়েছে কি না তা আমরা সবাই জানি। এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। কিন্তু তারা যত বেশি বলছেন তাদের অবস্থান বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এনএসসির সংশোধন করা ২০১২ সালের গঠনতন্ত্রকে তারা অগণতান্ত্রিক বলেছেন। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, আইসিসি এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। তারা এ গঠনতন্ত্রে সন্তুষ্ট। নির্বাচন লর্ডস মিটিংয়ের আগে হচ্ছে না। গঠনতন্ত্র, নির্বাচন নিয়ে তো আইসিসিরও চিন্তা আছে। আইসিসির মতামত জানানোর পর সিদ্ধান্ত নেব।’
-৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও ১৮০ দিনেও নির্বাচন হয়নি। এটা কি ব্যর্থতা নয়?
নাজমুল হাসান পাপন তা মানতে রাজি নন। তার পাল্টা জবাব, ‘যদি মনে করেন আদালত অবমাননা না করে নির্বাচন না দেওয়াটা ব্যর্থতা, তাহলে তো আমরা ব্যর্থই। আদালতের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন দিতে না পারাকে ব্যর্থতা মনে করলে আমরা ব্যর্থ!’
Discussion about this post