-কত রান করলে আপনি টেস্ট ম্যাচ জিতবেন?
ইতিহাস জানাচ্ছে প্রথম ইনিংসে ১১৬ রান করেও ম্যাচ জেতা যায়।
আর মুশফিক বললেন-‘৬০০ রান করতে পারলে সেটা আমাদের ম্যাচ ড্র করতে সহায়তা করত।’
কোনো দল ৬০০ রান তোলার কথা যখন ভাবতে পারে, তখন সেই দল সেই ম্যাচ ড্র করার কথা কেন মাথায় আনবে?
ঠিক বোঝা গেল না-ম্যাচ শেষে মুশফিক এই ‘৬০০ রান তত্ত্ব’ দিয়ে আসলে কী বোঝাতে চাইলেন। খুব সম্ভবত তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬০০ রান চেয়েছিলেন তার দলের কাছ থেকে।
আরেকবার ইতিহাসে ফিরি। টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মাত্র তিনবার ৫০০+ রান করতে পেরেছে। আর ২০০’র নিচে গড়িয়ে থেমেছে কয়বার?
টেস্ট ইতিহাস জানাচ্ছে-৭১ বার।
টেস্টে লাগাতার ব্যর্থতায় এখন আর কেউ জয়ের কথা মুখে আনা তো দূরের কথা, স্বপ্ন দেখারও সাহস করেন না!
জানা কথা-মানুষ তার স্বপ্নের সমানই বড়!
ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর।
বিয়োগফল জানাচ্ছে ছয় মাস। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামার পর সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেন্ট ভিনসেন্টে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ।
ছয় মাস আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে খেলা ৮ জন এবারও ছিলেন দলে। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ দলের একাদশ গঠন, খেলার মানসিকতা, স্টাইল, মেজাজ এবং ব্যাটিংয়ের আনাড়িপনা-সবকিছুতেই স্পষ্ট যে, এই টেস্ট ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ ‘প্রস্তুত’ই ছিল না! মুশফিকও মানলেন সেটাই-‘ছয় মাস পর টেস্ট ম্যাচে ব্যাটিং করা মোটেও সহজ কিছু ছিল না। আমার মনে হয় ব্যাটসম্যানরা দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আউট হয়েছে। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল। কিন্তু প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ে আমাদের প্রয়োগটা ঠিক ছিল না। প্রথম ইনিংসটা যদি আমরা ঠিকমতো খেলতে পারতাম, তবে এই ম্যাচের ফল ভিন্ন কিছু হতো।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবারের সিরিজে ওয়ানডের পর টেস্টেও বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনটা সবাইকে অবাক করছে।
সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক এবং কোচ অভিন্ন সুরে জানালেন-আমরা টেস্ট ম্যাচ ড্র করতেই খেলছি। বাস্তব টার্গেট সেটাই।
আর যেহেতু প্রধান টার্গেট ম্যাচ ড্র করা, তাই ব্যাটসম্যানে দল ভারি করে গড়া হল একাদশ। দলের ১১ জনের মধ্যে ৮ জনই ব্যাটসম্যান। তামিম ইকবাল থেকে শুভগত হোম-এই আট ব্যাটসম্যানের সাতজনেরই টেস্টে সেঞ্চুরি আছে। শুভগত হোমের ছিল এটা প্রথম টেস্ট। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তারও পাঁচটা সেঞ্চুরি আছে।
এমন তারকায় (!) ঠাসা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হল ১৮২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংস থেকে মুশফিকের রান বিয়োগ দিলে বাকি দলের স্কোর দাঁড়ায় ১৯৮। দু’দফায় দলের ব্যাটিং লাইনআপ ব্যর্থ। বিশ্বের কোনো দেশ টেস্ট একাদশে আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলে না। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। কিন্তু সেই আটজন ব্যাটসম্যান নিয়েও বাংলাদেশ ম্যাচ ড্র তো দূরের কথা-বড় হারই বাঁচাতে পারল না।
প্রথা ভেঙে আট ব্যাটসম্যান নিয়ে দল সাজানোয় বাংলাদেশের বোলিংয়ে বিশাল ঘাটতি দেখা দিল। এত বেশি ব্যাটসম্যানে দল ভারি করার ব্যাখ্যায় মুশফিক সিরিজের মাঝপথেও সাকিব আল হাসানকেই খুঁজে বেড়ালেন! একাদশে সাকিব না থাকায় যে বিশাল ব্যাটিং ঘাটতি এবং শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তাতেই বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
অবাক করা তথ্য হচ্ছে-এই সমস্যাটা আর কেউ নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেরাই তৈরি করেছে! মিরপুরে ‘এ’ দলের হয়ে সাকিব গুরুত্বহীন ম্যাচে খেলছেন। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তার জন্য প্রতিদিনই হা-পিত্যেশ করছে দল!
-তাহলে সেন্ট লুসিয়ায় পরের টেস্টের জন্য নতুন আরেকটি পরিকল্পনা করতে পারে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। যেহেতু আটজন ব্যাটসম্যান নিয়েও ম্যাচ বাঁচানো যায়নি। তাহলে শক্তিটা আরও বাড়ানো উচিত। একাদশে পুরো ১১ জন ব্যাটসম্যান নিয়েই নেমে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
প্রত্যেকে ১০০ করে করলেই যে এক ইনিংসেই ১১০০ রান হয়ে যাবে! বিশ্বরেকর্ডও মিলবে। চাই কি জয়ও মিলে যাবে!
সাকিবের দলে না থাকার অভাবের সমাধানও পেয়ে যাবে বিসিবি এতেই!
-এম. এম. কায়সার
লেখক: দৈনিক সকালের খবরের ক্রীড়া সম্পাদক
Discussion about this post