আস্থার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ব্যাটে-বলে সমান তালে সাফল্য পাচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে তুলেছেন ১১ ম্যাচে ১৯৭ রান। নিয়েছেন ১০ উইকেট। তাইতো তাকে নিয়ে মেতে আছে ভারতের মিডিয়া। বিশেষ করে কলকাতায় বাংলাদেশের এই তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে চলছে দারুণ উন্মাদনা। বহুল প্রচারিত পত্রিকা আনন্দবাজার শনিবার লিখেছে-‘যুদ্ধ’ থামিয়ে ফের স্বদেশের ধোনিতে মত্ত ওপার বাংলা’।
আরেক পত্রিকা ‘এই সময়’-এ তাকে নিয়ে কলাম লিখেছেন রূপক বসু। এখানে ক্রিকবিডিটুয়েন্টিফোরডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
মেজাজটা ধরে রেখেই রাজা ওপার বাংলার সাকিব
রূপক বসু
আইপিএল সেভেনে দুই বাংলার সাঁকো তিনিই! কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম এগারোয় খেলা এক মাত্র বাঙালিও!
বাংলাদেশের খবরের কাগজে তো রীতিমতো পাঠকদের মতামত নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, ‘ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় সাকিবকে কেকেআরের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কি?’ উত্তরে প্রায় ৯৩ শতাংশ পাঠকই ‘হঁ্যা’ বলেছেন৷ কিন্ত্ত যাঁকে নিয়ে এত কথা চালাচালি, সেই সাকিব আল হাসানকে কিছুই স্পর্শ করছে না৷ বাংলাদেশ থেকে কোনও শুভেচ্ছা পেলেন কি না জিজ্ঞেস করতেই জবাব এল, ‘বাংলাদেশের কারও কাছে আমার এখানকার নম্বর নেই!’
এটাই সাকিব আল হাসান৷ মেজাজটাই যাঁর আসল রাজা৷
চেনা ছকে তাঁকে মাপা যাবে না৷ বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে সাকিবকে নিয়ে দু’রকম তত্ত্বই চালু আছে৷ এক, তিনি প্রতিভাবান, দুই, তিনি উদ্ধত৷ বারবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ কাউকে পরোয়া করেন না৷ দেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপারফ্লপ৷ কিন্ত্ত কেকেআরে একেবারে অন্য মানুষ সাকিব৷ যেন শাহরুখ খানের সংসারে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল৷’ ব্যাটিংয়ে রবিন উত্থাপ্পার সঙ্গে তাঁর জুটি সুপারহিট, সুনীল নারিনের সঙ্গেও স্পিনেও বাজিমাত্ করছেন৷ শুক্রবার বাইপাসের ধারে পাঁচ তারা হোটেলের লবিতে বসে সাকিবের গলায় ফুটে উঠল আত্মবিশ্বাস, ‘ব্যাটিং, বোলিং দুটো কাজের জন্যই আমাকে টিমে নেওয়া হয়েছে৷ ওই দুটোই আমার কাজ৷ আর সেটাই করে যাচ্ছি৷ এর মধ্যে কোনও নতুনত্ব নেই৷’
আইপিএল সেভেনে ১৯৬ রান ও ৯ উইকেট হয়ে গেল৷ তবে সে সব ভুলে সামনের দিকেই তাকাচ্ছেন৷ চোখ প্লে অফে৷ সোজাসাপ্টা কথা বলতেই ভালোবাসেন৷ সে ভাবেই বলছিলেন, ‘প্লে অফটা ইডেনেই খেলতে চাইছি৷ আর আমরা যে ভাবে খেলছি, তাতে ফাইনালে ওঠার ব্যাপারে আমি পুরো আত্মবিশ্বাসী৷ যে ভাবে পারফরম্যান্স করে এসেছি, সেটা করে গেলে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়৷’ আবার এ-ও বললেন, ‘ব্যাটিং ঠিক আছে, কিন্ত্ত নিজের বোলিংয়ে আমি এখনও সন্ত্তষ্ট নই৷’
কথা বলতে বলতেই উশখুশ করছিলেন৷ বারবারই বলছিলেন, ‘একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিন৷ তাড়া আছে৷’ সহধর্মিণী আসবেন, তাঁকেই বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসতে যাওয়ার তাড়া সাকিবের৷ ইডেনে স্ত্রীর সামনে খেলাটা কি বাড়তি মোটিভেশন? সাকিবের মুখে হাসি, ‘আরে না না, ও আমার অনেক খেলা দেখেছে৷’ আসলে নিজের উপর বিশ্বাস আর ফোকাস রাখাটাই সাকিবের সাফল্যের মন্ত্র৷ অন্যের উপর ভরসা রাখাটা তাঁর ধাতে নেই৷ সে জন্যই দুম করে বলে দিলেন, ‘রবিন আর সুনীল দারুণ খেলছে৷ কিন্ত্ত দু’জন পারফর্ম করলেই তো হবে না৷ সবাইকেই পারফরম্যান্স করতে হবে৷’
হাল না ছাড়া মনোভাবটাই সাকিবের সম্পদ৷ আরব আমিরশাহিতে ব্যর্থতার সময়ও মানসিকতা বদলাননি৷ আমিরশাহির গল্পই শোনাচ্ছিলেন, ‘আরবের আবহাওয়ার সঙ্গে প্রথম দিকে মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হচ্ছিল৷ কিন্ত্ত আমরা হাল ছেড়ে দিইনি৷ কারণ জানতাম, কাজটা খুব শক্ত৷ কিন্ত্ত অসম্ভব নয়৷’
প্রত্যাবর্তনের আগে টিম মিটিং করেছিল কেকেআর শিবির৷ টিমকে তাতানোর আসল দায়িত্ব নিয়েছিলেন কোচ ট্রেভর বেলিস৷ বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতিটা ২০১২ সালের মতোই৷ সে বার যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পার, এ বারও না পারার কোনও কারণ নেই৷’ কেকেআরের চ্যাম্পিয়ন টিমের সঙ্গে এ বারের দলটার খুব একটা ফারাক আছে বলে মনে হয় না সাকিবেরও৷ বলছিলেন, ‘সেই চ্যাম্পিয়ন টিমের অনেক ক্রিকেটার এ বারও আছে৷ সেটা একটা সুবিধে৷’
অবশ্য প্রতিপক্ষকে নিয়ে বেশি ভাবেন না৷ উত্থাপ্পার সঙ্গে জুটি নিয়ে সাকিবের সাফ কথা, ‘আমাদের আন্ডারস্টান্ডিং খুব ভালো৷ বোঝাপড়া আছে বলেই রানিং বিটুইন দ্য উইকেটসটাও ভালো৷ আর দু’জনই নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে ভালোবাসি৷ আরসিবি ম্যাচে ওকে সেটাই বলেছিলাম, যে যার নর্ম্যাল খেলা খেলব৷’ সোজা কথায়, আপন খেয়ালে চলাটাই পদ্মা নদীর দেশের অলরাউন্ডারের জীবন দর্শন৷
Discussion about this post