দুবাইয়ের রাত ছিল ক্রিকেট উন্মাদনায় ভরপুর। এশিয়া কাপে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত আর পাকিস্তান। মাঠের খেলায় যেমন রোমাঞ্চ ছিল, তেমনি ম্যাচ-পরবর্তী ঘটনায় জন্ম নিল নতুন বিতর্ক। ক্রিকেট ভক্তরা খেলা দেখতে গ্যালারিতে এলেও, আসল উত্তাপ ছড়াল মাঠের বাইরেই।
ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই টসের সময় দেখা যায় অস্বাভাবিক এক দৃশ্য। ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব পাকিস্তানি অধিনায়ক সালমান আলী আঘার সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানান। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি যেন ধরা পড়ল ক্রিকেটের এই আনুষ্ঠানিকতায়। তবে এখানেই শেষ হয়নি। খেলা শেষে করমর্দনের প্রচলিত রীতিও ভেঙে গেল। পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা এগিয়ে এলেও ভারতীয়রা হনহন করে চলে যান ড্রেসিংরুমে, এরপর সেখানকার দরজা বন্ধ করে দেন।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এ ঘটনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে ম্যাচ রেফারির কাছে। পিসিবি স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, ‘ভারতের আচরণ ক্রিকেটের স্পিরিটের বিরুদ্ধে।’ পাকিস্তানি অধিনায়ক সালমান প্রতিবাদস্বরূপ পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেই যাননি।
ভারতের ব্যাখ্যা অবশ্য ভিন্ন। সূর্যকুমার যাদব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা শুধু খেলতে এসেছি, সৌজন্য বিনিময়ে নয়। পেহেলগাম হামলার ভুক্তভোগীদের পাশে আছি। এই জয় আমরা উৎসর্গ করছি অপারেশন সিঁদুরে অংশ নেওয়া সৈনিকদের।’ তার দাবি, এই সিদ্ধান্ত ছিল ভারতীয় সরকার ও বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সমন্বিত।
বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে যখন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান মহসিন নাকভি সরাসরি ভারতীয় দলের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, খেলাধুলার মঞ্চ কখনোই রাজনৈতিক বিদ্বেষ প্রকাশের জায়গা হতে পারে না, ‘আজকের আচরণ হতাশাজনক। খেলার মূল চেতনা হলো সম্মান ও সৌজন্য, সেটা ভারত লঙ্ঘন করেছে।’
মাঠের খেলায় অবশ্য ভারত ছিল সম্পূর্ণ প্রভাবশালী। কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণির সামনে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং। শেষ দিকে শাহীন শাহ আফ্রিদি চারটি ছক্কায় ১৬ বলে ৩৩ রান তুলে লড়াইয়ের আভাস দিলেও, ১২৭ রানের বেশি এগোতে পারেনি দল। ভারতীয় ব্যাটাররা কোনো চাপ অনুভব না করেই ২৫ বল হাতে রেখে জিতে যায় ৭ উইকেটে। ম্যাচসেরা হন কুলদীপ।
ফলাফল স্পষ্ট-ভারত বড় ব্যবধানে জয় পেলেও, আলোচনায় উঠে এল হাত না মেলানোর ঘটনা। রাজনৈতিক বৈরিতা যে ক্রিকেটেও ছাপ ফেলেছে, দুবাইয়ের রাত সেই প্রমাণ আবারও দিল। এখন প্রশ্ন, এই উত্তেজনা কি মাঠের বাইরেও আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে?
Discussion about this post