ফের মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। রোববার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরের শেরেবাংলায় তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি। দিবারাত্রির এই সিরিজের প্রতিটি ম্যাচই শুরু দুপুর ১টায়। এই লড়াইয়ের আগে শনিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।
যেখানে তিনি জানালেন পরিকল্পনার কথা। উঠে আসে সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালদের মতআ সিনিয়রদের বিকল্প খোঁজার প্রসঙ্গও। কথা বলেন সৌম্য সরকার-লিটন দাস আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়েও। তার সেই সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে-
ফিল্ডিং প্রসঙ্গ…
ফিল্ডিং অনেকাংশে নির্ভর করে আত্মবিশ্বাসের ওপর। আপনি যত এটা নিয়ে কথা বলবেন, যত মনোযোগ দেবেন, তত ভালো হবে। আমাদের উচিৎ ভালো ক্যাচ বা ফিল্ডিং পারফরম্যান্সগুলোর স্মৃতিচারণ করা আর ভুলগুলোর কথা যথাসম্ভব মনে না রাখা। ভুলের প্রতি যত মনোযোগ দেওয়া হবে তত ভুল করার প্রবণতা বেড়ে যাবে। একটা দলে কয়েকজন থাকে দুর্দান্ত ফিল্ডার, কয়েকজন গড়পড়তা। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভালো ফিল্ডারকে রাখতে হয়। আগেই বললাম, আত্মবিশ্বাস বড় এক জিনিস।
কোচ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা…
আমাদের মুশফিক, রিয়াদ, তামিম ও সাকিবের মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। তরুণ খেলোয়াড়রাও উঠে আসছে যাদের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আফিফের মত খেলোয়াড়রা এই সিরিজে দলে ভূমিকা রাখতে পারে। দলে চোটের সমস্যা থাকতে পারে, কেউ পারফর্ম করতে না পারে। তখন তরুণদের পারফর্ম করতে হবে।
কোন জায়গায় ভালো করতে চায়
আমাদের বেসিক ভালো করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডেতে আমাদের বেসিক ভালো হচ্ছে না। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো খেলেছিল। আমরা বেসিকে মনোযোগ দিতে চাই। খুব জটিল করে ভাবার কিছু নেই। বেসিক ঠিক রাখলেই হবে। এই ফরম্যাটে এটুকু করতে পারলেই সাফল্য সম্ভব।
কয়েকজন কোচ অনুপস্থিত…
মোটেও না। ছেলেরা অনেকদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, তারা জানে কীভাবে কী করতে হয়। পুরো কোচিং প্যানেল নেই এটা স্বস্তিকর নয়। তবে আমার সাথে বাবুল ও তালহা আছে, অনেক সহায়তা করছে দলকে। মাঠে অধিনায়কই সব সিদ্ধান্ত নেয়। তাই কোচদের অনুপস্থিতি প্রভাব ফেলবে না।
২০১৯ সালের জুলাইয়ের পর থেকে ওয়ানডে না খেলা মোসাদ্দেক কেন দলে
আমরা সাত নম্বরের জন্য এমন কাউকে চাচ্ছিলাম যে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিন পারবে। আফিফ, মোসাদ্দেক এই ভাবনা থেকেই। সৌম্য পেস বোলিং পারে, সে টপ অর্ডারেও আসতে পারে। মোসাদ্দেক লোয়ার মিডল অর্ডারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সে এমন কেউ যে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারবে, ভালো ফিল্ডার, বোলিং-ব্যাটিং পারে, ভালো প্যাকেজ।
সাইফউদ্দিন নিয়মিত নন দলে
সাইফউদ্দিন সম্প্রতি চোটে অনেক ভুগেছে। সে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শহিদুল ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে আছে। সাইফউদ্দিনের সাথে তার ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। সাইফউদ্দিন বোলিং অলরাউন্ডার, বোলিংয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মারকুটে ব্যাটিং পারে, তবে শীর্ষ ছয়ে ব্যাট করার মত হয়ে ওঠেনি এখনও। অতীতে বাংলাদেশের হয়ে দেশের মাটিতে ভালো করেছে। সময় পক্ষে না থাকলে পারফরম্যান্স দিয়ে পক্ষে আনতে হয়, এটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
এক ম্যাচ খারাপ করলেই…
জয় সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে একইসাথে ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হবে। কখনও কখনও অতীত-বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যতে বেশি মনোযোগ দিতে হয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ এক সিরিজ। এখানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নেওয়ার আছে। আসলে ভারসাম্য থাকতে হয়। জয় যেমন এখন গুরুত্বপূর্ণ, একইভাবে দলের উন্নতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ২ বছর পর সাকিব, তামিম, রিয়াদ মুশফিকরা থাকবে না। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে তখন যেন এখনকার তরুণ খেলোয়াড়রা দায়িত্ব নিতে পারে। আমাদের সতর্কতার সাথে এটা সামলাতে হবে।
সাকিব ফিরছে…
অবশ্যই সাকিবের ফেরা স্বস্তির বিষয়। গত কয়েক বছর ধরে তাকে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। এমন জায়গায় খেলা অনেক কঠিন। তাই তার মত অভিজ্ঞ কাউকে পাওয়া বড় প্রাপ্তি। তাকে খেলতে দেখতে মুখিয়ে আছি। মিরাজ এখন শীর্ষ পাঁচে আছে। সাদা বলে দারুণ করছে। রিয়াদও বোলিংয়ে ফিরছে, এটাও বড় পাওয়া। তরুণ মেহেদী নিউজিল্যান্ডে ভালো করেছে, সেও ভাবনায় আছে।
দুই দলের ব্যাটিং অর্ডারের তুলনা
শ্রীলঙ্কার দুই-একজন বড় খেলোয়াড় এবার নেই। চান্দিমাল নেই, ম্যাথিউস নেই। তবে তাদের হাই কোয়ালিটি খেলোয়াড় আছে, কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। তরুণ দলটি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারে যা আমাদের চাপের কারণ হতে পারে। আমার ছেলেরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। টপ অর্ডার ভালো করছে। দুই ব্যাটিং অর্ডারের লড়াই দেখতে আমিও উদগ্রীব হয়ে আছি।
সৌম্য-তামিম ওপেনিং? নাকি সৌম্য এখনও সাতে?
সৌম্য বোলিং করতে পারে, তাই সে নিচের দিকেই ব্যাটিংয়ের বিবেচনায় আছে। তবে টপ অর্ডারেও সে একজন অপশন। তিনে ব্যাট করেছে নিউজিল্যান্ডে। তার ওপর আস্থা আছে। সে মানসম্পন্ন একজন খেলোয়াড়। একটু ভাগ্য পক্ষে থাকতে হবে। তার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। এমন খেলোয়াড়দের সাপোর্ট দিতে হবে।
কোচ হিসেবে চাপে কি না…
কোচ হিসেবে আপনার কাজ হল নিজের কাজের ওপর আস্থা রাখা আর ঠিকভাবে নিজের কাজ করে যাওয়া। আমি আমার সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছি। যার সাথে যেখানেই খেলুন না কেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সবসময় চাপের। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, মিডিয়া, ব্যক্তিগত চাপ সবসময়ই থাকে। কোচরা মাঠে গিয়ে খেলেন না, রান করতে পারেন না উইকেট নিতে পারেন না। কিন্তু একটু ভুল করলেও মানুষ কানাঘুষা শুরু করবে। তাই কোচ হিসেবে চাপ থাকবেই। আমার কাজ হল দলকে ঠিকমত প্রস্তুত করা, ছেলেদের সাহস জোগানো আর তাদের মনোবল দৃঢ় রাখা।
সিরিজে কি আমরা ফেভারিট
আমরা দেশে অনেক ভালো খেলি। তবে শ্রীলঙ্কাকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। অনেক ভালো কিছু খেলোয়াড় নিয়ে এসেছে ওরা। তারা নিজেদের প্রমাণ করতে মুখিয়ে থাকবে।
Discussion about this post