মিশন ইমপসিবলের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। জিততে হলে গড়তে হতো বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু সেই হাতছানি দূরে থাক লড়তেই যে পারলেন না মুমিনুল হকরা। রীতিমতো তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল টাইগারদের ব্যাটিং লাইন আপ। অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটে এমন গল্পটা নতুন নয়। বাংলাদেশ পাঁচদিনের ক্রিকেটে এখনো ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত খেলে ড্রয়ের পর এমন অসহায় আত্মসমর্পন ভক্তদের ঠিকই পোড়াচ্ছে!
সোমবার দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিন জিততে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৬০ রান। আর শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট। কিন্তু সকাল থেকেই ক্যান্ডির পালেকেল্লে স্টেডিয়ামে ছিল উইকেট পতনের মিছিল। যা একটু লড়লেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি ফেরেন ৩৯ রান। প্রথম সেশনে ২৩ ওভারেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ দল।
৪৩৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে টাইগাররা অলআউট ২২৭ রানে। ২০৯ রানের বড় ব্যবধানে জয় শ্রীলঙ্কার। তার পথ ধরে ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতল স্বাগতিকরা। প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল।
সোমবার দিনের তৃতীয় ওভারেই শুরু উইকেট পতন। শুরুতেই ফিরে যান লিটন দাস। প্রাভিন জয়াউইক্রামার আর্ম বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে ভুল করলেন। বল তার ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন লিটন। কিন্তু রক্ষা হয়নি। ১৭ রানে আউট।
লিটনের পর ফিরলেন তাইজুল ইসলাম। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ডেলিভারিকে থার্ডম্যানে খেলতে গেলে বল তার ব্যাটের কানায় লাগে। নিরোশান ডিকওয়েলা গ্লাভস হাতে কোনো ভুল করলেন না। ৩০ বল দুই রান করে আউট তাইজুল। তারপর তাসকিন আহমেদকে নিয়ে কিছুটা সময় লড়লেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তাসকিন ৭ রান করে আউট, রমেশ মেন্ডিসের বলে। তারপর মিরাজ ৩৯ রানে প্রবীন জয়াবিক্রমার বলে আউট হলে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশা।
এরপর স্পিনার জয়াবিক্রমা আবু জায়েদকে ফেরালে শেষ হয় টাইগারদের ইনিংস। ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে ১১ উইকেট নিয়েছেন অভিষিক্ত এ শ্রীলঙ্কান স্পিনার। জয়াবিক্রমা দুই ইনিংসের ২০ উইকেটের মধ্যে জয়াবিক্রমা নিয়েছেন ১১ উইকেট। ১৯৮০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চারজন বোলার অভিষেকে ১০ উইকেট অথবা তার বেশি নিতে পেরেছেন। তার মধ্যে তিনি ১৭৮ রান দিয়ে ১১ উইকেট নিয়ে ৪ নম্বরে। নরেন্দ্র হিরানি ১৬, মোহাম্মদ জাহিদ ১১ ও জেসন ক্রেজা তাদের অভিষেকে টেস্ট নিয়েছেন ১২ উইকেট।
সব মিলিয়ে হতাশা সঙ্গী করেই দেশে ফিরছে টাইগাররা। করোনা কালে প্রথম টেস্টে ভাল খেললেও দ্বিতীয়টিতে ফ্লপ দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৫৯.২ ওভারে ৪৯৩/৭ (ডি.) (আগের দিন ৪৬৯/৬) (ডিকভেলা ৭৭*, মেন্ডিস ৩৩, আবু জায়েদ ২২-৪-৬৯-০, তাসকিন ৩৪.২-৭-১২৭-৪, মিরাজ ৩৬-৭-১১৮-১, শরিফুল ২৯-৬-৯১-১, তাইজুল ৩৮-৭-৮৩-১)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৩ ওভারে ২৫১ (তামিম ৯২, সাইফ ২৫, শান্ত ০, মুমিনুল ৪৯, মুশফিক ৪০, লিটন ৮, মিরাজ ১৬, তাইজুল ৯, তাসকিন ০, শরিফুল ০, আবু জায়েদ ০*; লাকমল ১০-০-৩০-২, বিশ্ব ৭-১-১৯-০, ম্যাথিউস ২-০-৭-০, মেন্ডিস ৩১-৭-৮৬-২, জয়াবিক্রমা ৩২-৭-৯২-৬, ধনাঞ্জয়া ১ -০-৬-০)।
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৭/২) ৪২.২ ওভারে ১৯৪/৯ (ডি.) (করুনারত্নে ৬৬, ম্যাথিউস ১২, ধনাঞ্জয়া ৪১, নিসানকা ২৪, ডিকভেলা ২৪, মেন্ডিস ৮, লাকমল ১২, জয়াবিক্রমা ৩*; মিরাজ ১৪-৩-৬৬-২, শরিফুল ১-০-৮-০, তাইজুল ১৯.২-২-৭২-৫, তাসকিন ৪-০-২৬-১, সাইফ ৪-০-২২-১)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৭১ ওভারে ২২৭/১০ (মুশফিক ৪০, মিরাজ ৩৯; জয়াবিক্রমা ৫/৮৬)
ফল: ২০৯ রানে জয়ী শ্রীলঙ্কা।
টেস্ট সেরা : প্রবীন জয়াবিক্রমা
সিরিজসেরা : দিমুথ করুণারত্মে
Discussion about this post