ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
১৯৯৬ সালের নভেম্বরের এক সন্ধ্যায় প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের। প্রথম দেখায় প্রেম বলে যে একটা কথা আছে সেটাই যেন হল! গেস্ট হাউসে হঠাৎ দেখাতেই ২৩ বছর বয়সী ভিক্টোরিয়ার প্রেমে পড়ে গেলেন ২২ বছরের বেকহ্যাম! ম্যানচেস্টার, ইউনাইটেডে ফিরেই সতীর্থ গ্যারি নেভিলকে জানিয়ে দিলেন, ‘আমি এই মেয়েকে অবশ্যই বিয়ে করব।’
কিন্তু তাদের প্রথম কথাগুলো মোটেও রোমান্টিক কিছু ছিল না। কারণ একটাই-ব্যান্ড স্পাইস গার্লস নিয়ে ব্যস্ত থাকা ভিক্টোরিয়ার কাছে ফুটবল তখন শুধুই বিরক্তিকর এক খেলা। সেটা মুখের ওপর বেকহ্যামকে জানিয়েও দিয়েছিলেন। বেচারা বেকহ্যামও কম যান না, গান নিয়ে দুয়েক কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন তিনিও। কিন্তু তিনি যে প্রেমে পড়ে গেছেন! তাই তর্ক এক পাশে সরিয়ে রাখলেন। মুগ্ধতার কথা অকপটে জানিয়ে দিলেন ভিক্টোরিয়াকে। যদিও ভিক্টোরিয়া প্রথমেই ‘হ্যাঁ’ বলে দেননি। সময় নিয়েছেন। ভেবেছেন। এমনকি খোঁজও নিয়েছেন বেকহ্যামের সম্পর্কে। যখন জেনেছেন এ ছেলের সামনে পড়ে আছে সুন্দর ভবিষ্যৎ তখনই বলে দিয়েছেন, ‘আমরা বন্ধু হতে পারি’।
এরপর কারণে-অকারণে প্রায়ই টেলিফোনে দীর্ঘসময় কথা হতো তাদের। গোপনে দেখাও করতেন। তাই তো বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নিতে সময় লাগেনি।
তারা দু’জন
ডেভিড রবার্ট জোসেফ বেকহ্যাম : জন্ম ২ মে, ১৯৭৫; লেইটনস্টন, লন্ডন। পেশাদার ফুটবলার। মডেল। ফ্যাশন আইকন। লন্ডন ও লস অ্যাঞ্জেলেসে রয়েছে ফুটবল একাডেমি।
ভিক্টোরিয়া ক্যারোলিন অ্যাডামস : জন্ম ১৭ এপ্রিল, ১৯৭৪; হেডফোর্ডশায়ার। স্পাইস গার্লস ব্যান্ডের ভোকাল, কম্পোজার এবং ডান্সার। মডেল। ফ্যাশন আইকন।
প্রপোজ
১৯৯৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, দিনটি কখনই ভুলতে পারবেন না বেকহ্যাম-ভিক্টোরিয়া। চেশরি হোটেলে দুপুরের খাবারের পর এমন চমক প্রতীক্ষা করছে কে জানত! আগেই ৩০টি লাল গোলাপ অর্ডার দিয়ে রেখেছিলেন। খাবার শেষ হতেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন বেকহ্যাম। স্পষ্ট ইংরেজিতে বলতে থাকেন-‘ভিক্টোরিয়া আই ওয়ানা মেরি ইউ!’
চমকে যান পশ স্পাইস। উল্টো প্রশ্ন করেন-‘ইউ উইল মেরি মি?’
বেকহ্যাম ‘ইয়েস’ বলতেই তার সঙ্গে গলা মেলান ভিক্টোরিয়া।
এরপর নান্টউইচের রোকেরি হলে আংটি বদলের কাজটাও সেরে নেন তারা। বাগদানের সেই কেকটি অবশ্য কাটেননি তারা। একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানকে তা দিয়ে দেন।
বিয়ের বাদ্য
প্রথম সন্তান ব্রুকলিন জন্ম নেওয়ার পরই দু’জন সিদ্ধান্ত নেন এবার বিয়ে করতে হবে। তবে সেই বিয়ে ঘিরে পুরো পৃথিবীর আগ্রহ থাকলেও নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মাত্র ২৯ জন। খুবই কাছের কয়েকজন বন্ধু আর পরিবারের মানুষদের নিয়ে ৪ জুলাই ১৯৯৯ সালে ‘আই ডু’ বলেন দু’জন। ৫৬০ একর জমির ওপর ১৭৯৪ সালে নির্মিত আয়ারল্যান্ডের লুটরেলসটাউনের সেই ক্যাসলে বিয়ের অনুষ্ঠানে বেকহ্যামের বেস্টম্যান ছিলেন ম্যানইউর সতীর্থ বন্ধু গ্যারি নেভিল। আর ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার বোন লুসি। চার মাস বয়সী ছোট ব্রুকলিনও ছিল সেদিনের অতিথি। বিয়ের মন্ত্র পাঠ করেন বিশপ কর্ক পল কোলটন।
বিয়ের অনুষ্ঠানে মাথায় মুকুটের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া পরেছিলেন ফিটিং আইভরি বিয়ের পোশাক। যার ডিজাইন করেন ভেরা ওনাগ। ক্রিম রংয়ের স্যুট পরেছিলেন বেকহ্যাম। ব্রুকলিন ওই কাপড় নষ্ট করে ফেলার পর বেগুনি রঙের স্যুট পরেন বেকহ্যাম। একই রঙের পোশাক ছিল ব্রুকলিনের গায়েও।
সংবর্ধনা
গোপনে করা সেই বিয়ের খবর অবশ্য গোপন থাকেনি। তবে এ সেলিব্রেটি দম্পতিকে ঘিরে ছিল হাজারো প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতেই যেন বিয়ের পর আয়োজন করা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। এখানে অতিথিদের তালিকাটা ছিল বেশ লম্বা। ২৩০ জন আমন্ত্রিত অতিথিকে সামাল দিতে অবশ্য ব্যস্ত থেকেছেন ৪৩৭ জন স্টাফ। অতিথিদের বলে দেওয়া হয়েছিল, আপনারা সাদা কিংবা কালো পোশাক পরে আসবেন। সেই অতিথির তালিকায় ম্যানইউর সতীর্থদের পাশাপাশি ছিলেন স্যার ববি চার্লটন, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন আর সংগীত ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা।
অনুষ্ঠানে বেকহ্যাম-ভিক্টোরিয়া কোনো উপহার নেননি। কেননা অতিথিদের আগেই বলে দিয়েছিলেন শপিং ভাউচার পেলেই খুশি হবেন তারা। সব মিলিয়ে ওই অনুষ্ঠানে বেকহ্যাম পরিবারের খরচ হয়েছিল ৫ লাখ পাউন্ড। যদিও ‘ওকে’ ম্যাগাজিনের কাছে অনুষ্ঠানের স্বত্ব বিক্রি করে আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থ।
আমাদের চারজন
একবার মজা করে বেকহ্যাম বলেছিলেন, ঘরেই ফুটবল দল গড়তে চান তিনি। ইংলিশ এ সাবেক অধিনায়ক সেই পথেই কি এগোচ্ছেন? চার সন্তান নিয়ে তাদের সংসার। তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
# ব্রুকলিন জোসেফ বেকহ্যাম : জন্ম ৪ মার্চ, ১৯৯৯; লন্ডন। গডফাদার-স্যার এলটন জন এবং গড মাদার-এলিজাবেথ হার্লি।
# রোমিও জেমস বেকহ্যাম : জন্ম ১ সেপ্টেম্বর, ২০০২; লন্ডন। গডফাদার-স্যার এলটন জন এবং গডমাদার-এলিজাবেথ হার্লি।
# ক্রুজ ডেভিড বেকহ্যাম : জন্ম ২০ ফেব্র“য়ারি, ২০০৫; মাদ্রিদ (স্পেন)।
# হারপার সেভেন বেকহ্যাম : জন্ম ১০ জুলাই, ২০১১; লস অ্যাঞ্জেলেস (যুক্তরাষ্ট্র)।
হোম সুইট হোম
বেকহ্যাম-ভিক্টোরিয়া দম্পতি যেমন দু’হাতে অর্থ আয় করেন, খরচ করতেও কার্পণ্য করেন না। ১৯৯৯ সালে হেডফোর্ডশায়ারে ৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে তৈরি করেন এক প্যালেস। যার নাম দিয়েছিলেন ‘বেকিংহাম প্যালেস’। এরপর ২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদে খেলার সময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এ ফুটবলার মাদ্রিদে ৬ মিলিয়ন ডলারে এক বাড়ি কেনেন। লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে যোগ দেওয়ার পর ক্যালিফোর্নিয়ায় বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন এ দুই সেলিব্রেটি।
এবং অশান্তির আগুন
বেকহ্যাম আর ভিক্টোরিয়ার সংসারের পুরোটাই ফুলে ফুলে সাজানো ছিল না। বেশ কয়েকবারই অশান্তির আগুন এসে পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল তাদের সুখের সংসার। প্রথম ঘটনাটি ২০০৪ সালের এপ্রিলের। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড বোমা ফাটায়। জানায়, বেকহ্যাম তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী রেবেকা লুসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনৈতিক সম্পর্কে। এ নিয়ে জল অনেকটা ঘোলা হয়েছিল। এরপর মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান সারাহ মারবেককে নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে গুঞ্জন। কিন্তু ভিক্টোরিয়া বিশ্বাস রেখেছেন বেকহ্যামের ওপর।
সুখের সংসার
বিয়ের এক যুগ পেরিয়ে গেছে! কিন্তু পেছন দরজা দিয়ে সুখ পালিয়ে যায়নি তাদের। চার সন্তান নিয়ে বেকহ্যাম আর ভিক্টোরিয়া এখন ঈর্ষণীয় এক দম্পতি। এই সেদিন মার্কিন মুল্লুকের একটি গবেষণায় জানা যায়, বিশ্বের সেরা ১০ রোমান্টিক দম্পতির একটি হলেন তারা। আর বেকহ্যাম তো নিয়মিতই হচ্ছেন সেরা সেলিব্রেটি বাবা। খেলার ব্যস্ততা না থাকলে বেকহ্যাম পুরোটা সময়ই দেন পরিবারকে। আর ভিক্টোরিয়া তো সংসারী হবেন বলে গানের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারটাকেও সরিয়ে রেখেছেন এক পাশে।
তাই তো তাদের কাছে সুখ কখনই সোনার হরিণ হয়ে যায়নি!
Discussion about this post