ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
বাতাসে উড়তে থাকা সব গুঞ্জনের সমাপ্তি। সরেই গেলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষে ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব পুর্নবিবেচনা করা হবে জানিয়েছিল বিসিবি। সেই সুযোগ দিলেন না মাশরাফি। শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে শেষবারের মতো নেতৃত্ব দেবেন ওয়ানডে অধিনায়ক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন মাশরাফি।
নেতৃত্ব ছাড়লেও নির্বাচকরা দলে রাখলে খেলে যাবেন বলে জানালেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তবে সেই সম্ভাবনা কতোটুকু তা পরিস্কার নয়।
মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। অধিনায়কের দায়িত্বটা সবসময় চ্যালেঞ্জিং। চেষ্টা করেছি দলকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার। আশা করি- সামনে যাকে অধিনায়ক করা হবে তাকে ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে।’
নেতৃত্ব প্রসঙ্গে মাশরাফি বলছিলেন, ‘আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। আপনি যদি ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবকিছু রেডি পান তাহলে তো আর আপনার কোনো কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থাকে না। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি আমি। আমার প্রতি এত দীর্ঘ সময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। আমার নেতৃত্বে যত ক্রিকেটার খেলেছে বাংলাদেশ দলে, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি নিশ্চিত এই প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না- গত ৪-৫ বছরে ভ্রমণ সহজ ছিল না।’
মাশরাফি বিদায় বেলায় সতীর্থদের উদ্দেশে জানাচ্ছিলেন, ‘আমি আমার পরিবারের সদস্যদের যেমন ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি সতীর্থদেরও তেমনই ভালোবাসি আর শ্রদ্ধা করি। ভবিষ্যতেও তাদের প্রতি ভালোবাসা থাকবে। তাদের জন্য সবসময়ই শুভকামনা থাকবে আমার।’
শেষ দিকে এসে বোর্ডের সঙ্গে তার একটা দূরত্ব তৈরি হয়। সরে যেতে পরোক্ষ একটা চাপও ছিল। এ কারণেই হয়তো বললেন, ‘একটা মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অন্তত কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। ১৫ বছর ধরে এটা আমার জীবনের অংশ। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। আমার যত অর্জন বা জীবনে যা কিছু করেছি সব এ খেলা দিয়ে। আমার জীবনের অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটা। ফলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে আমার সময় দরকার হতো।’
২০১৪ থেকে ওয়ানডে দলকে নিয়মিত নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাশরাফি। এরপর নিয়মিত অধিনায়ক হয়ে ৮০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে দলকে এনে দিয়েছেন ৪৬টি জয়। সব মিলিয়ে ৮৭ ম্যাচে তার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ ৪৯টি ওয়ানডে ম্যাচে জিতেছে দল।
৩৬ বছর বয়সী মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলে টাইগাররা। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে উঠে সেমি-ফাইনালে। একইভাবে সাফল্য পেয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও।
বিদায় বেলায় লিখিত বক্তব্যে মাশরাফি জানান, ‘ধন্যবাদ জানাই টিম ম্যানেজমেন্ট যারা ছিল, যাদের কোচিংয়ে খেলেছি। নির্বাচক ও বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন, বোর্ডের প্রতিটি স্টাফ, সবাইকে ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য। মিডিয়ার যারা আছেন, সবাই সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সবশেষে সমর্থকেরা, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ। আপনাদের সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না। আজকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে। শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য।’
Discussion about this post