বাংলাদেশের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশকে নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। এটা কতোটা ঠিক হচ্ছে এনিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনি। তার সেই লেখাটি ক্রিকবিডি২৪.কমের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হল।
#######################
অবশেষে কোর্টনি ওয়ালশকেও “চলে না” তকমা লাগিয়ে দেওয়ার অভূতপূর্ব কীর্তি আমরা গড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।
বোলিং কোচ হিসেবে ওয়ালশের সাফল্য-ব্যর্থতার বিশ্লেষণ অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু যথারীতি একটি মিথ আমরা জন্ম দিয়ে ফেলেছি, যেটি প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। “হিথ স্ট্রিকের সময় দারুণ ছিল আমাদের পেস আক্রমণ।”
একটি ছোট্ট তথ্য দিয়ে শুরু করি।
বোলিং কোচ হিসেবে হিথ স্ট্রিকের মেয়াদের দুই বছরে আমরা ১০ টেস্ট খেলেছি, পেসারদের উইকেট ছিল ৩০টি। গড়ে ম্যাচ প্রতি তিনটি।
কোর্টনি ওয়ালশের এক বছরে ১১ টেস্ট খেলেছি, পেসারদের উইকেট ৪২টি। ম্যাচ প্রতি গড়ে প্রায় চারটি।
দুটিই দারুণ কোনো ফিগার নয়। খুব বড় ব্যবধানে ওয়ালশ এগিয়ে নেই। সেটির বিশদ আলোচনাও হবে। কিন্তু স্ট্রিক দারুণ সফল ছিলেন বা স্ট্রিকের সময় পেসারদের রমরমা অবস্থা ছিল, সেই মিথের দেয়ালে আঘাত লাগল কিছু?
এই পরিসংখ্যানই শেষ কথা নয় অবশ্যই। ওয়ালশের সময় দুটি টেস্ট ছিল নিউ জিল্যান্ডে। যেখানে আরও ভালো করা উচিত ছিল পেসারদের। দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি টেস্ট ছিল। যদিও টিপিক্যাল দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেট নয়, বরং এতটা ভালো ব্যাটিং উইকেট যে, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক পর্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে। তার পরও আরও ভালো করা উচিত ছিল।
আবার, স্ট্রিকের সময়ের ১০ টেস্টের তিনটিই ছিল দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দুটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, অন্যদের চেয়ে দুর্বল প্রতিপক্ষ। ওয়ালশের সময়কার সব প্রতিপক্ষই তুলনায় অনেক কঠিন। শুধু এটিই নয়, ওয়ালশের সময়ই বাংলাদেশ নিজ দেশের মাটিতে টার্নিং উইকেট বানানোর ট্যাকটিকস নিয়েছে, যেখানে পেসারদের করার ছিল সামান্যই। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চারটি টেস্ট হয়েছে এরকম উইকেটে। তো তুলনামূলক বিচারে, এখানেও খানিকটা এগিয়ে রাখা যায় ওয়ালশের সময়কে।
স্ট্রিক দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস পর প্রথম টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। শুরুর আগে আলাদা করে কাজ করার সময় পেয়েছেন। ওয়ালশ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই টানা খেলা। আলাদা করে কাজ করার সময় পেলেন কেবল এবার মৌসুম শুরুর আগে সপ্তাহখানেক।
শুধু দুজনের তুলনামূলক বিচারের জন্যই এসব তথ্য-উপাত্ত। টেস্টে বাংলাদেশের পেস বোলিং এখন যেমন, স্ট্রিকের সময় আরও ভালো নয়, বরং আরেকটু খারাপ ছিল। স্ট্রিকের সময় বাংলাদেশ টেস্ট কম খেলেছে বলেই সময়ের দেয়ালে ব্যর্থতা আড়াল হয়েছে। ওয়ালশের সময় অনেক বেশি টেস্ট খেলার কারণে ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। আদতে বাংলাদেশের টেস্ট পেস বোলিং বরাবরই “লাউ” ছিল, স্ট্রিকের সময়ও ছিল “কদু।” ওয়ালশের সময়ও সেই ধারাবাহিকতা চলছে।
স্ট্রিকের সময়কার ব্যর্থতা আড়াল হওয়ার আরেকটা কারণ ছিল ওয়ানডের সাফল্য। তার মেয়াদের দুই বছরে ২৯ ওয়ানডেতে পেসারদের উইকেট ছিল ১২৬টি। ওয়ালশের এক বছরে ২২ ওয়ানডেতে উইকেট ৮৪টি। দেখা যাচ্ছে, ওয়ানডেতে এগিয়ে স্ট্রিকের সময়।
তবে যথারীতি এক লাইনের পরিসংখ্যানই শেষ কথা নয়। স্ট্রিকের সময় বাংলাদেশ বেশির ভাগ ম্যাচ ম্যাচ খেলেছে দেশের মাটিতে। দেশের মাটিতে তখন ওয়ানডের জন্য এরকম উইকেট বানানো হয়েছিল, যেখানে পেসারদের জন্য কিছুটা সহায়তা ছিল। ২০১৪ সালের ভারত সিরিজ তো ছিল পুরোই পেস উপযোগী উইকেটে। ২০১৫ সালের ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও উইকেটে পেসারদের জন্য কিছু ছিল।
তাছাড়া বাংলাদেশের মাটিতে নরম্যালি বেশির ভাগ সময় এমনকি ব্যাটিং উইকেটেও পেসারদের জন্য কিছু থাকে। অন্তত বল একটু গ্রিপ করে, সামান্য হলেও বল ব্যাটে আসে ধীরে। বাংলাদেশের পেসাররা সেসব কাজে লাগায়। মাশরাফি, মুস্তাফিজদের মত যারা কাটার নির্ভর বোলার, দেশের মটিতে বেশ সাফল্য পেয়েছে।
এখানেও সেই দেশ-বিদেশের ব্যাপার। স্ট্রিকের সময় ২৯ ওয়ানডের ২০টিই বাংলাদেশে খেলেছে দেশের মাটিতে। সেখানে পেসাররা সাফল্য পেয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, দেশের মাটির পারফরম্যান্স ধরলে কিন্তু স্ট্রিকের সময়ের চেয়ে ওয়ালশের সময়ই এগিয়ে!
স্ট্রিকের সময় দেশের মাটিতে ২০ ওয়ানডেতে পেসারদের উইকেট ছিল ৮৭টি। ম্যাচ প্রতি গড়ে ৪.৩৫ উইকেট। ওয়ালশের সময় দেশের মাটিতে ৬ ম্যাচে উইকেট ২৮টি। ম্যাচ প্রতি ৪.৬৬ উইকেট!
ওয়ালশের সময় ব্যর্থতা চোখে পড়ছে কারণ এই সময়ে দেশের বাইরেই বেশি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। স্ট্রিকের সময় দুই বছরে ৯টি ওয়ানডে হয়েছে দেশের বাইরে। ওয়ালশের সময় এক বছরেই ১৬টি! স্ট্রিকের সময়ও যদি নেলসন, ওভাল, এই কিম্বার্লি বা পার্লের মত এতটা ফ্ল্যাট উইকেটে বাংলাদেশ খেলত, তাহলে কে জানে, পারফরম্যান্স হয়ত একই রকমই থাকত। ওয়ালশের সময় তেমনি দেশের মাটিতে খেলা বেশি হলে তাকে আমরা সফল কোচ বলতাম হয়ত।
স্ট্রিকের সময় দেশের মাটিতে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে সিরিজের পারফরম্যান্সে মুস্তাফিজের ছিল বড় অবদান। সেই মুস্তাফিজ, জাতীয় দলে আসার আগে স্ট্রিক তার সঙ্গে কোনো কাজ করারই সুযোগ পাননি। মুস্তাফিজ আলোড়ন তুলেছে তার সহজাত ক্ষমতায়। তার কাটার তো স্ট্রিক শেখাননি!
এখানে বহুবার বলা কথাটি আরও একবার বলতে হয়। মুস্তাফিজ কোনো হাথুরু বা স্ট্রিকের অবদান নন। তাকে গড়ে তোলা কিংবা দলে নেওয়া, কোনোটিতেই স্ট্রিক-হাথুর অবদান নেই। বয়সভিত্তিক দল হয়ে, “এ” দলে খেলে, জাতীয় দলে এসেছেন মুস্তাফিজ। তাকে দলে নিয়েছিল ফারুক ভাইয়ের (যার ‘গাটস’ ছিল, যিনি মেরুদণ্ডহীন নন) নেতৃত্বাধীন সেই সময়ের নির্বাচক কমিটি। ভারত সিরিজে মুস্তাফিজকে একাদশে ঢোকাতে টসের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কোচর সঙ্গে তর্ক করেছেন মাশরাফি। শেষে একরকম জোর করে দলে নিয়েছেন এই বলে যে, “ভালো না করলে দায় আমার।” কাজেই মুস্তাকে খেলানো বা চার পেসার নিয়ে নামার দু:সাহস, কোনোটিই কোনো হাথু বা স্ট্রিকের অবদান নয়।
বরং অপারেশনের পর মুস্তাফিজের যখন স্ট্রাগল করার সময়, মুস্তাফিজকে যখন নতুন করে ফিরতে হয়েছে, তখন ওয়ালশের অবদানটা অনেকের কাছে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। অপারেশনের পর ফিরে মুস্তাফিজ যে শততম টেস্ট জয়ে দারুণ বোলিং করলেন, শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জয়ে, আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ম্যাচ জয়ে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে বড় অবদান রাখলেন, এবং বেশির ভাগ সময়ই তার সহজাত কাটার ছাড়াই, আমি যদি সেসবের পেছনে ওয়ালশকে কিছু কৃতিত্ব দেই?
স্ট্রিকের সময়ে বিদেশের মাটিতে সাফল্য নিয়ে অনেকেই ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা বলেন। যথারীতি গোল্ডফিশ মাইন্ডের ব্যাপার। ওই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা আমাদের সঙ্গে ৫০ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৩৩২ করেছিল, নিউ জিল্যান্ড ২৮৮ রান তাড়ায় জিতেছিল, ভারত তিনশ ছাড়িয়েছিল, এমনকি স্কটল্যান্ডও ৩১৮ করেছিল। আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচ বা আরও কয়েক ম্যাচের সাফল্য যে ছিল না, তা নয়। তবে সেরকম সাফল্য ওয়ালশের সময়ও আছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাম্বুলার জয়ে, ডাবলিনে নিউ জিল্যান্ডকে হারানোয় পেসারদের অবদান ছিল বড়। এমনকি কার্ডিফে নিউ জিল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে সাকিব-রিয়াদের সেঞ্চুরি বড় হলেও কিউইদের ২৬৫ রানে আটকাতে স্লগ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেছিল পেসাররা। ওয়ালশের সময়ই।
এসব যুক্তি-টুক্তি দিলাম স্রেফ তর্কের খাতিরে। এসব বাদ দিয়ে একদম গড়পড়তা হিসাব করি। স্ট্রিকের সময় ওয়ানডেতে অনেক সাফল্য বেশি ছিল তো? ওয়ানডের হিসাবটাই করি। স্ট্রিকের সময় ওয়ানডে প্রতি পেসারদের উইকেট ছিল গড়ে ৪.৩৪ টি। ওয়ালশের সময় গড়ে ৩.৮১টি। অর্থাৎ, গড়ে ০.৫২ টি করে বেশি। মানে আধটি করে বেশি। তো ম্যাচপ্রতি আধটি করে বেশি উইকেট নিয়েই এতট সাফল্যপ্রসবা ছিল স্ট্রিকের সময়? আমাদের অনেকে সেটাই মনে করে!
আর বাংলাদেশ তো শুধু ওয়ানডে খেলে না। তিন সংস্করণ্ও একটু মিলাই। স্ট্রিকের ২ বছরে তিন সংস্করণে ৬১টি ম্যাচে পেসারদের উইকেট ছিল ২২৯টি। ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩.৭৫টি। ওয়ালশের এক বছরে ৩৮ ম্যাচে ১৪৪টি। ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩.৭৮টি। এমন কোনো ব্যবধান নয়। তার পরও সামান্য এগিয়ে ওয়ালশের সময়ই। তার পরও আমাদের অনেকে ঘেউ ঘেউ করবেই… “স্ট্রিকের সময় গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ…!”
পরিসংখ্যানের বাইরেও বাস্তবতা আছে। “স্ট্রিকের সময়ে সাফল্য” কথাটি শুনলেই আমাদের ক্রিকেটাররা সব হাসতে হাসতে বাঁচেন না। কারণ দায়িত্বের শেষ একবছর স্ট্রিকের কাছে যে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলেই সে শুধু বলত “অন টপ অব অফ স্টাম্প বল কর…।” দলের সবাই বিরক্তের চূড়ান্ত হয়ে উঠেছিল। এসবের বাইরে আরও অনেক কিছু তো ছিলই। বাংলাদেশের সবকিছুতে ছিল তার বিরক্তি। “এটা নাই কেন, ওটা কেন নাই, এটা চিপা কেন, ওটা ঢিলা কেন”… তার নাম হয়ে গিয়েছিল “কমপ্লেইন ম্যান।”
তর্কের খাতিরে ধরলাম, স্ট্রিক অনেক শিখিয়ে গেছেন। ওয়ালশ কিছু যোগ করতে পারেননি। তাহলে নিদেনপক্ষে স্ট্রিকের শেখানো জিনিসগুলো কেন করতে পারছে না বোলাররা? নাকি ওয়ালশ জাদুমন্ত্র করে সব ভুলিয়ে দিয়েছেন? ওয়ালশ তো কারও বোলিং বদলে দেননি বা অ্যাকশনে বদল আনেননি বা সেরকম কিছু করেননি!
ওয়ালশ আমার বন্ধু না, স্ট্রিকও শত্রু না। দুজনের কেউই আমাকে চিনতও না, চিনবেও না। কাউকে খাটো বা বড় করেও আমার লাভ নেই। আমি স্রেফ তুলে ধরছি বাস্তবতা। আগেও কোনো স্ট্রিক জাদুমন্ত্র করেননি। এখনও কোনো ওয়ালশ রাতারাতি ব্যর্থ নন। সবই লাউ-কদুর গল্প।
কেন এই অবস্থা? শুরুর দিকে যেটা বলছিলাম, আমাদের পেসারদের অবস্থা কোনো সময়ই দারুণ রমরমা ছিল না। বিশেষ করে টেস্টে। এটার কারণ গবেষণায় বছরে পর বছর দিস্তার পর দিস্তা কাগজ শেষ হয়েছে, অনেক কথা খরচ হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের কালচার বদলাতে হবে। সিলেটের উইকেটে ন্যাচারাল ক্যারি আছে। জাতীয় লিগে খেলা অনেকেই বলেন, রাজশাহীর উইকেট খুব ভালো সিমিং উইকেট করে তোলা সম্ভব। তো এরকম কিছু উইকেট রাখতে হবে সময়ই বাউন্সি বা সিমিং। কিছু থাকবে স্পিনিং। কিছু ব্যাটিং। লঙ্গার ভার্সন, লিমিটেড ওভার, সব ফরম্যাটেই এরকম সব ধরণের উইকেট রাখতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে। এসব এমন কোনো রকেট সায়েন্স না। সবাই জানে। কিন্তু আমাদের ক্রিকেট কর্তারাও বছরের পর বছরধরে বলে আসছেন। কাজের বেলায় ঠনঠন।
এবার আসি শেষ প্রসঙ্গে। ওয়ালশ। স্ট্রিকের সঙ্গে তুলনা বাদ দিলাম। ওয়ালশ তো কিংবদন্তী, সর্বকালের সেরাদের একজন। তার কাছে চাওয়া বেশি, আশা বেশি। তিনি কতটা সফল হচ্ছেন? তিনিও কেন লাউ-কদুর চক্করে থাকবেন?
আমাদের বুঝতে হবে বোলিং কোচের কাজ কি। বোলারদের লাইন-লেংথ বা এরকম বেসিক জিনিস নিয়ে কাজ করা বোলিং কোচের কাজ নয়। কোচ কাজ করবেন “ফাইনার পয়েন্টস” নিয়ে। যদি বেসিক কাজই বোলাররা করতে না পারেন, বুঝতে হবে তাদের ঝামেলা আছে। নিশ্চয়ই তাদের ড্রিল, অনুশীলন, জিমে ঘাটতি আছে!
আমি যদি অনুশীলনের ৪-৬-৮ ওভারের বাইরে আর বোলিং না করি, নিজ থেকেই বারবার কোচের কাছে না যাই, কোচের কথাকে অনুধাবন বা ভেতরে ধারণ না করি, তাহলে শতশত বোলিং কোচ গুলে খাওয়ালেও লাভ নেই।
আমি যদি জিন্স, টি-শার্ট ব্যাগে করে প্র্যাকটিসে আসি, যে প্র্যাকটিস শেষেই ড্রেস চেঞ্জ করে গাড়ী নিয়ে কোথাও ছুটব, শরীরকে রিকভারির পর্যাপ্ত সময় দিব না, তাহলে আমার উন্নতি হবে কিভাবে? ফাস্ট বোলার হওয়া এত সোজা না। অনেক স্যাক্রিফাইস, অনেক কিছু মেইনটেইন করতে হয়।
ওয়ালশের একটা জায়গায় ঘাটতি আছে। কায়িক শ্রম। গায়ে-গতরে খাটা যেটা বলি আমরা। সেজন্যই চম্পকা রামানায়েকেকে আনা হয়েছে। মূলত একাডেমিতে থাকলেও সুযোমত জাতীয় পেসারদের সঙ্গেও কাজ করবেন। গায়ে গতরে খাটবেন। বেসিক কিছু নিয়ে কাজ করার দরকার হলেও করবেন। ওয়ালশ-রামানায়েকের সমন্বয়ে আশা করি সামনে ভালো কিছু হবে।
ওয়ালশের কাছ থেকে আমরা কোথায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারি? তর্কের খাতিরে ধরলাম, বোলিং কোচের কাজ ওয়ালশ পারেন না। কিন্তু ফাস্ট বোলিং নিয়ে তার নলেজ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তো কোনো সংশয় নেই? সেই অভিজ্ঞতা, সেই জ্ঞানের কতটা আমাদের পেসাররা তার কাছ থেকে নিতে পারছেন?
ওয়ালশের কাছে যার না গেলেও চলে, সেই মাশরাফিই কেন এখনও সবচেয়ে বেশি তার কাছে যান? কেন মাশরাফিই সবচেয়ে বেশি সময় কাটান বোলিং কোচের সঙ্গে? কেন বাড়তি অনুশীলনও মাশরাফিই সবচেয়ে বেশি করেন? অন্য পেসাররা কেন করেন না!
একটা কথা আমি বিশ্বাস করি। ওয়ালশ যদি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান, সেটি তার চেয়েও বড় ব্যর্থতা হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। ওয়ালশের মত একজনকে কাছে পেলে বিশ্বের সব দলের পেসাররাই চাইবেন তার কাছে থেকে যতটা সম্ভব নিয়ে নিতে। ওয়ালশের নলেজগুলো যতটা পারা যায় তার কাছ থেকে নিংড়ে, শুষে, ছিবড়ে নিতে। সিম্পল।
দুই বছরের মেয়াদ শেষে ওয়ালশ হয়ত ফিরে যাবেন। তার মতো একজনের কোনো চাকরির অভাব হবে না। কিন্তু দুই বছরে আমাদের পেসাররা যদি ওয়ালশের কাছ থেকে কিছু নিতে না পারি, ক্ষতিটা কার? ওয়ালশের মত নলেজসম্পন্ন একজনকে আমরা সবসময় পাব?
“ওয়ালশ চলে না” জাতীয় কথা বলে বা তাকে অসম্মান করে আমরা আবার বুঝিয়ে দিচ্ছি, আমরা কত বড় ক্রিকেট মূর্খ। ওয়ালশ দলের প্রধান কোচ না। “ভালো ছাত্র মানেই ভালো শিক্ষক না”-এসব হাস্যকর কথা বোলিং কোচের ক্ষেত্রে খাটে না। ফাস্ট বোলিং নিয়ে ওয়ালশের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, জানাশোনার শেষ নেই। সেই ভাণ্ডার থেকে যতটা পারো, লুফে নাও।
না পারলে ওয়ালশের কিছু আসবে-যাবে না। ক্ষতি আমাদেরই। ওয়ালশ চলে যাবেন। আমরা তিমিরেই রয়ে যাব।
Discussion about this post