আরো একবার ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করল ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা। এবার কটকে মঞ্চস্থ্ হল তাদের নাটক! দল হারতে থাকলে তারা যে কতোটা বেপোরোয়া হতে পারে তাই দেখা গেল সোমবার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের বিপর্যয় মেনে না নিতে পারে গ্যালারি থেকে বোতল বৃষ্টি শুরু করেন তারা!
ভারতীয় দর্শকদের আচরনে ভয় পেয়েছিলেন কাফ ডু প্লেসিস। প্রোটিয়া অধিনায়ক বলছিলেন, “দেখুন ভারতে আবেগটা যে একটু বেশি সেটা আমি জানি। তা ইবলে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা বলেও তো একটা ব্যাপার থাকে। সেটা তো খেয়াল রাখা চাই।”
কলকাতার আনন্দবাজার পুরো ঘটনাটিকে নিয়ে একাধিক রিপোর্ট লিখেছে। এখানে তারই কিছু অংশ ক্রিকবিডি২৪ এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
রাতের কালো আকাশ ঢেকে উড়ে আসছে একটার পর একটা, ওড়িশা ক্রিকেটের কর্তা-আধা কর্তারা দৌড়চ্ছেন মাঠের দিকে। বাউন্ডারি লাইনের আশেপাশে তখন সব শুয়ে পাশাপাশি। সংখ্যাটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ওগুলো সব বোতল, জলের বোতল।
ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডের চোখ মোটামুটি বিস্ফারিত। কী করবেন, কী ভাবে করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ম্যাচের দুই আম্পায়ারকে ডাকলেন। দু’টো টিমকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিয়ে দ্রুত আম্পায়ারদের সঙ্গে বৈঠক ডেকে নিলেন বাউন্ডারি লাইনের ঠিক বাইরেটায়। রাত দশটা বাজে, আরও গোটা সাতেক ওভার করাতে হবে, কিন্তু ম্যাচটা আর শুরু করা যাবে কি না, সেটাই তো বলা যাচ্ছে না! কারণ নিরীহ নয়, বোতলগুলো অধিকাংশ জলভর্তি। যার কোনওটা আছড়ে পড়ছে পুলিশের মাথায়, কোনওটা সপাটে উড়ে আঘাত করছে ক্যামেরাম্যানের লেন্সে! ঝুঁকি কে নেবে? প্লেয়ারদের লেগে গেলে কে বাঁচাবে? হিসেব বার করে ফেলা হল যে, ম্যাচ শুরু করা না গেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হবে। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে। বাধ্য হয়ে যার প্রয়োগ ঘটাতে হবে বৃষ্টিতে নয়, বোতল-বৃষ্টিতে।
পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঘোষকের গলা মোটামুটি বসে যাওয়ার জোগাড়। উৎকল ভাষায় ক্রমাগত তিনি বলেই চলেছেন, এ বার থামান আপনারা। দয়া করে ম্যাচটা শুরু হতে দিন। আর দয়া! জঙ্গি সমর্থককুলের মেজাজ এতটা উগ্র যে, উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত ফাঁকা করে দিতে হল গ্যালারির একাংশ। রীতিমতো পুলিশ পাঠিয়ে আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শুরু করতে হল ম্যাচ। শুরু করতে হল লাঠিচার্জের ভয় দেখিয়ে।
সোজাসুজি বললে, সোমবারের মহানদী পাড়ের ক্রিকেট স্টেডিয়াম এক সঙ্গে জোড়া ক্রিকেট-কলঙ্কের সাক্ষী হয়ে থাকল। বাইশ গজে যদি মহেন্দ্র সিং ধোনিদের ন্যক্কারজনক ব্যাটিংয়ে কলঙ্কের প্রথম অধ্যায় লেখা হয়ে থাকে, তা হলে তার সর্বশেষ অধ্যায় লিখে ফেললেন কলিঙ্গরাজ্যের ক্রিকেট-দর্শক। ম্যাচ থামিয়ে, ক্রিকেটকে কলুষিত করে। বঙ্গভূমিতে অবস্থিত কোনও এক ইডেন গার্ডেন্সের অতীত লজ্জাকে মনে পড়িয়ে। কয়েক ঘণ্টা দূরত্বের প্রতিবেশী রাজ্যেও তো ঘটেছে এমন। ’৯৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ওখানে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল মাঝপথে। এশীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত-পাক যুদ্ধ শেষ করতে জনশূন্য করে দিতে হয়েছিল ইডেন গ্যালারি। সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের অনুরোধেও সে বার লাভ হয়নি। ঠিক যেমন এ দিন বিরাট কোহলিকে ঘুরে-ঘুরে জলের বোতল মাঠের বাইরে ফেলতে দেখেও বরাবাটি দর্শকের মন ভিজল না।
রাত বারোটায় প্রেস কনফারেন্স রুমের বাইরে দেখা গেল, অন্তত শ’খানেক মানুষ জটলা করে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে অশ্রাব্য গালিগালাজ চলছে নিরন্তর। এঁদের যন্ত্রণা হল, এই প্রথম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এ মাঠে দেশের ক্যাপ্টেন্সি করবেন এত ঘটা করে ম্যাচের আগে বারবার ঘোষণা করা হল। আর সেখানে কি না পয়সা খরচ করে এই জিনিস দেখতে হল!
দুঃখ শুধু একটা জায়গায়। বঙ্গ ক্রিকেট মনে করেছিল, তাদের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর বিপর্যয়ে কিছুটা প্রলেপ দিতে পারে ৮ অক্টোবরের ম্যাচ। ভেবেছিল, কটকে সমতা ফিরিয়ে ইডেনে ঢুকবে ভারত। তার পর সিরিজ জিতবে। যোগ্য সম্মান দেবে জগমোহন ডালমিয়ার ক্রিকেটপ্রেমের।
টি-টুয়েন্টি লড়াইয়ে ভারতকে ৬ উইকেটে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
https://youtu.be/iuwkITBbkw0
Discussion about this post