দুই দিনের উত্তাল ব্যাটিং শেষে ভারত ম্যাচ বাঁচাল। ম্যানচেস্টারে নাম ছিল ড্র টেস্ট, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল প্রতিরোধের মহাকাব্য। ম্যাচের শেষে ফল অমীমাংসিত হলেও, আবেগে, চরিত্রে এবং নেতৃত্বে কেউ কারও চেয়ে কম যায়নি।
শেষ সেশনের শুরুতে স্টোকস যখন ড্রয়ের প্রস্তাব নিয়ে এগোলেন, তখন ক্রিজে দাঁড়িয়ে দু’জন ভারতীয়- রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। দু’জনেই নব্বইয়ের ঘরে। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন তারা। শতরান শুধু সংখ্যা নয়, তা এক সম্মানের কথা। অধিনায়ক শুভমন গিলও তা মনে করিয়ে দিলেন, ‘ওদের দু’জনেই দুর্দান্ত ব্যাট করেছে। শতরান ওদের প্রাপ্য ছিল। ড্রয়ের প্রস্তাব না মানা একদম ঠিক সিদ্ধান্ত।’
শুধু এই সাহস নয়, পুরো ম্যাচেই শুভমনের নেতৃত্বে ছিল এক গভীর সংযম। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড চাপ ছিল শেষ দু’দিন। আমরা বল ধরে ধরে খেলতে চাইছিলাম। পিচ কী করবে জানতাম না, তাও মনোযোগ হারাইনি।’
প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা ভুলে দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান করে দলের আশা জাগালেন। কিন্তু নিজের কৃতিত্বে বিশেষ গর্ব নেই তার। বরং দেশ নিয়ে গর্বের কথা বলেন প্রথমে,
‘সাদা জার্সি পরে মাঠে নামলেই মনে হয়-আমি দেশের হয়ে খেলছি। এটাই সবচেয়ে বড় অনুভূতি।’
অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক সিরিজেই রীতিমতো কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু শিখেছেন অনেক কিছু, ‘সব ম্যাচই শেষ দিন পর্যন্ত গিয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তই শেখার। দল হিসেবেও অনেক অভিজ্ঞতা হল। শেষ টেস্টে জিতেই সিরিজ ড্র করতে চাই।’
অন্যদিকে ম্যাচের সেরা হয়েও হাসতে পারেননি স্টোকস। ৫ উইকেট ও শতরান—যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে স্বপ্ন। কিন্তু ফল তো ড্র! তাই মন খারাপ ইংল্যান্ড অধিনায়কের, ‘পুরস্কার পেলেও, ম্যাচ না জেতায় এর কোনও মূল্য নেই আমার কাছে।’
ভারতের লড়াইয়ে প্রশংসা থামাতে পারেননি স্টোকসও, ‘ওরা অসাধারণ খেলেছে। পঞ্চম দিনের চাপ দারুণভাবে সামলেছে। আমরা সব চেষ্টা করেও পারিনি।’
কেন ভারতীয় বাঁহাতিদের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারেননি, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘পিচে ডানহাতিদের জন্য অসমান বাউন্স ছিল, বাঁহাতিদের জন্য নয়। রাফগুলোও তেমন কার্যকর হয়নি। বল পুরনো হয়ে যাওয়ায় আরও সমস্যায় পড়েছি।’
শেষ সময়ে ক্লান্ত বোলারদের কথা মাথায় রেখে রুট ও ব্রুককে ব্যবহার করেন তিনি। বলেন, ‘বোলারদের চোট এড়াতে ঝুঁকি নিতে চাইনি। অনেক বল করেছে ওরা। এখন দেখতে হবে কার কী অবস্থা।’
শেষ ঘণ্টায় ১৫ ওভারের খেলা বাকি ছিল, উইকেট ছিল ছয়টি। ইংল্যান্ড বুঝে গিয়েছিল, ওরা আর পারবে না। কিন্তু ভারত জানিয়ে দিল-হার শুধু স্কোরবোর্ডে লেখা যায় না, মনোবলে লেখা যায় জয়!
Discussion about this post