মোহামেডান ১(৪) : ১(২) শেখ রাসেল
ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে হাজার ১২ দর্শক-সমর্থক মাঠে এসেছিল। এর মধ্যে পশ্চিম-উত্তর প্রান্তের পরিবেশ একটু ভিন্ন। অন্যদের চেয়ে উচ্ছ্বাস যেন বেশিই! ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নিজ দলের পতাকা হাতে পুরো ম্যাচে সরগরম। তাদের এ আকুণ্ঠ সমর্থন বৃথা যায়নি। তাদেরই সমর্থনে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান দীর্ঘদিন পর ট্রফি জিতল। তাও যেনতেন ট্রফি নয়। সুপার কাপ ফুটবলে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন এখন তারাই।
মোহামেডানের সঙ্গে সুপার কাপ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হয়ে যাচ্ছে। তিনটি আসরের দুটিতে শিরোপা, অন্যটিতে রানার্সআপ। গেল কয়েক মৌসুমে বলতে গেলে ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। যাচ্ছেতাই অবস্থা। সুপার কাপে এসেই সব কিছু ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল। অচেনা মোহামেডানের সেই চিরচেনা রূপ!
প্রতিপক্ষ শেখ রাসেল। ধারে-ভারে সমকক্ষ নয় সাদা-কালোরা। তাই ফাইনাল জিততে পারবে কি না, মনের মধ্যে কিছুটা হলেও সংশয় ছিল। কিন্তু সংশয় থাকলে কী হবে, কিক অফের পরই পরিস্থিতি পাল্টেছে ক্ষণে ক্ষণে। উত্তেজনার পারদ গিয়ে ঠেকেছিল টাইব্রেকারে। আর অবসান হয়েছে মোহামেডানের ট্রফি জেতার পরই। ব্যবধান ৪-২। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে দু’দল অবশ্য ১-১-এ সমতা নিয়ে ছিল।
শুরুর উত্তেজনা যেমন ছিল তেমনি ম্যাচ নির্ণয়ক টাইব্রেকারও কম যাচ্ছিল না। সাদা-কালোদের মোবারক, মানিক, সোহাগ ও মিন্টু শেখ নিজেদের কাজটি করেছেন সুচারুভাবে। শুধু অধিনায়ক রজনীর শট গোলকিপার বিপ্লব রুখে দিয়েছেন। শেখ রাসেলে এমিলির শুভসূচনার পর নাহিদ ও সবুজ হতাশ করেন। প্রথমজনের শট গোলকিপার মামুন খান ফিরিয়ে দেন। পরেরটি সাইডবারে প্রতিহত। মিঠুন নিজের কাজটি করলেও শেষরক্ষা হয়নি। প্রয়োজন পড়েনি পঞ্চম শট নেওয়ার। মিন্টু শেখের বাঁদিক থেকে নেওয়া শটটি দলকে এনে দেয় মহামূল্যবান সুপার কাপের ট্রফি!
এর আগের সময়টুকু দু’দল বলতে গেলে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। একঅর্ধ রাসেল, অন্যঅর্ধ মোহামেডান। আর অতিরিক্ত সময়টুকু ছিল সময়ক্ষেপণের। ম্যাচের গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হয়েছে টাইব্রেকারই কাম্য।
প্রথমার্ধে রাসেল গোল করে এগিয়ে গেলেও মোহামেডানের সুযোগ এসেছিল একাধিক। ১৫ মিনিটে মেজবাবুল হক মানিক গোলকিপার বিপ্লবকে একা পেয়ে সময়মতো শট নিতে পারেননি। ডিফেন্ডার মামুন মিয়া ক্লিয়ার করেন। ৩৭ মিনিটে ওয়াহেদ থেকে আবারও মানিকের জোরালো শট গোলরক্ষণে এসে আটকা।
একঅর্থে ওয়াহেদ-মোবারক ছিলেন ‘বোতলবন্দি’। তাদের খেলতেই দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে এমিলি-মিঠুন-আনোয়ারদের নিয়ে গড়া একাদশ তেড়েফুঁড়ে খেলার চেষ্টা করেছে। ২৬ মিনিটে তারই ফলশ্রুতিতে গোল এসেছে। আনোয়ারের বাড়ানো বলে জাহিদ ডানদিক থেকে বক্সের ভেতরে ক্রস ফেলেছিলেন, তাতে এমিলি শুধু বলের গতি পাল্টে দিয়েছেন। ৪০ মিনিটে জাহিদের প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে নেওয়া বুলেট গতির ফ্রিকিকটি গোলকিপার মামুন খান ফিরিয়ে না দিলে গোলের ব্যবধান তখনই বাড়তে পারত।
দ্বিতীয়ার্ধে শেখ রাসেলের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ে। মোহামেডান সে ক্ষেত্রে দুর্বার। ওয়াহেদ মুক্ত হয়ে খেলার চেষ্টা করেন। অন্যরা কম যাননি। ৫২ মিনিটে ওয়াহেদ ১:১ পজিশনে গোলকিপার বিপ্লবকে পেয়ে বল সাইডবারে মেরে নষ্ট করেন। দুই মিনিট পর এই ওয়াহেদই সমতাসূচক গোল করেন। তপুর লং বল থেকে শুরুতে ওয়াহেদের শট বিপ্লবের শরীরে লেগে প্রতিহত হয়, পরক্ষণে আর মিস হয়নি। বল গড়াতে গড়াতে জালে (১-১)। ডিফেন্ডার উত্তম বণিক শতচেষ্টা করেও বল রুখতে পারেননি। শুয়ে-পড়ে গোল হজম দেখতে হয়েছে।
শেখ রাসেল শেষদিকে এসে জ্বলে উঠবে। এরকম খেলা আগে দেখা গিয়েছে। কাল এমন হবে বলে অনেকেই মনে করেছিলেন-এবার অবশ্য তা হয়নি। ক্লান্তির কারণে কিনা ৯০ মিনিট ড্র মানতে হয়েছে। ১১৮ মিনিটে অঘটনও ছিল। দু’দলকে ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়েছে। হাতাহাতির কারণে রাসেলের লিংকন ও মোহামেডানের ওয়াহেদ দেখেছেন লাল কার্ড। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হেসেছে সাদা-কালো শিবির। হাজারো সমর্থকের সেই আনন্দ দেখে কে। সেটা যে বাঁধভাঙা।
হবেই না কেন। দীর্ঘদিন পর যে ট্রফি জয়!
দু’দলে যারা খেলেছেন
মোহামেডান : মামুন খান, মিন্টু শেখ, তপু বর্মণ, রজনী, ইয়াসিন, মারুফ (শরীফুল, ইকবাল), মানিক, মোবারক, সোহাগ, ওয়াহেদ ও সোহেল রানা।
শেখ রাসেল : বিপ্লব, উত্তম, লিংকন, জাহিদ (সবুজ), মামুনুল, মিঠুন, এমিলি, নাহিদ, মামুন মিয়া, আনোয়ার (ইমন বাবু), ইমরুল হাসান ইমু।
রেফারি : আবদুল হান্নান মিরন।
Discussion about this post