ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
ক্রিকেটার সাব্বির রহমানের বিরুদ্ধে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে ব্যাপারটি অস্বীকার করেছেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান ।
রোববার সাব্বির বলেন, ‘একটা কথা রটেছে যে আমি কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে মেরেছি। না। এরকম কিছুই না। একটা মানুষকে মারা এত সহজ না।’
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কি হয়েছে সে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সাব্বির। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে একটা গাড়ি ছিল। আমি আমার ওয়াইফকে নিয়ে বাড়ি থেকে আসছিলাম। আমি জাস্ট উনাকে বলেছি যে, দেখেন ভাই, এই যে রাস্তার মাঝখানে গাড়িটা রেখেছেন। কেউ তো বের হতে পারছে না কেউ আসতেও পারছে না। কোন প্রেগনেন্ট মহিলা কিংবা হার্টের রোগীর যদি হাসপাতালে যেতে হয়…, আপনি গাড়ি রেখে আরেকদিকে গল্প করছেন, মানুষ কীভাবে যা? দুই মিনিটে মানুষ মারাও যেতে পারে। আপনি সেটা না করে এক সাইডে রাখবেন গাড়িটা, যাতে অন্তত মানুষ আসা যাওয়া করতে পারে। এটুকুই কথা বলেছি। তার কথায়, আমি হর্ন দেয়ার পর তিনি যেভাবে রিঅ্যাক্ট করেছে, মাই গড। মনে হচ্ছে, আমি খুব বড় ভুল কাজ করে ফেলেছি। চোখ রাঙাচ্ছে, বিড়বিড় করে কি যেনো বলতে বলতে যাচ্ছে। আমার কাছে একটু অকওয়ার্ড লেগেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে, ভাই কিছু বলছেন নাকি? আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো? সে বলেছে, আমি আমার মতো কাজ করছি। আপনি হর্ন মারার কে? এটুকুই তর্কাতর্কি হয়েছে, আর কিছুই হয় নাই। একটা মানুষকে মারার কথা বললেই যে মারা তা তো না। রাস্তার মাঝখানে তো একটা মানুষকে মারা যায় না। মানুষকে মারা যায়? বলেন। আর আমি কেনো মানুষকে মারবো। যে কর্মীকে আমি ডেকে ডেকে ত্রাণ দেই, যাকাতের টাকা দেই সেই লোকটাকে তো আমি মারতে পারবো না।’
নেতিবাচক খবরের শিরোনামে কেন বাববার সাব্বিরের নাম আছে। এ প্রশ্ন নিজেই করেছেন সব্বির, ‘এখন কেউ যদি আপনার সঙ্গে ওভাবে তর্ক করে তাহলে আপনারও তো রাগ হবে। আমিও তো মানুষ। সবসময় যে আমিই হেডলাইনের উপরে উঠবো সেটা তো উচিৎ না। তিলকে তাল করে, সাব্বির খারাপ- এটা তো ঠিক না। এক হাতে তো তালি বাজে না। সেই লোক যে আধাঘণ্টা পরে একশ জন লোক নিয়ে এসে আমার বাবা-মাকে হুমকি দেয়, আমাকে মারার হুমকি দেয়। আমি দেশের জন্য খেলেছি, দেশকে রিপ্রেজেন্ট করেছি। এটাই যদি আমার প্রাপ্য হয়ে থাকে তাহলে তো দেশের জন্য খেলে লাভ নাই। ‘
ক্রিকেটের কসম করে সাব্বির বলেন, ‘ক্রিকেট তো আমার জান, আমার লাভ। ওই লোকটার গায়ে হাতই দেইনি আমি। গায়ে হাত দেয়ার তো প্রয়োজন নাই। আমার সাথে আমার ওয়াইফ ছিল, নিচে গার্ড ছিলো, আমার ড্রাইভার ছিলো। তারা তো মিথ্যা বলবে না। আমি নামাজ কালাম পড়ি, আল্লাহর ঘর ছুঁয়েছি, ওমরাহ করেছি; আমি তো মিথ্যা কথা বলবো না। সে গরীব মানুষ। তাকে কেনো মারবো। তার সঙ্গে হয়তো একটু উচ্চস্বরে কথা হয়েছে। সেটাও আমার করা উচিৎ হয় না। আসলে পরিস্থিতিটা কেমন ছিলো সেটা না দেখলে বুঝানো যাবে না। আমার হয়তো ওইভাবে কথা বলা উচিৎ হয়নি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আমি তাকে মারিনি।’
তবে পরিচ্ছন্নতা কর্মী বাদশা মিয়া বলেন, ‘যেভাবে চোখ রাঙিয়ে ছুটে এসে সাব্বির আমার বুকে আঘাত করেছিল, তাতে খুব ব্যথা পাইছি। তবে মনের ব্যথাটা বড় ব্যথা। আমি সাব্বিরের বাবার বয়সী। ছেলের বয়সী কেউ গালি দিয়ে আঘাত করলে কষ্টটা বেশি লাগে।’
বাদশাই চোখ রাঙিয়েছেন বলে সাব্বিরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সামান্য ময়লা ফেলার কাজ করি। সাব্বিরকে না হয়, নাই বা চিনলাম। বড় লোক মানুষরা গাড়িতে চড়ে। গাড়ি নিয়ে কেউ হর্ন দিলে তাকে আমি চোখ রাঙাবো, সেই সাহস কি আমার আছে?’
এরআগে রোববার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর বেলদারপাড়া এলাকায় ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে অপ্রিতীকর ঘটনায় জড়ান সাব্বির।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে ক্রিকেটার সাব্বির রহমান প্রাইভেটকারে চড়ে তার বাড়ির কাছে পৌঁছেন। এসময় বাড়ির রাস্তায় সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ময়লা বহনকারী ভ্যান দেখে তিনি ভ্যানটি সরাতে বলেন। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাদশা প্রতিউত্তরে বলেন, ‘আমাদের কাজই তো ময়লা সরানো। ময়লা নিয়েই চলে যাবো।’ কিন্তু সাব্বির পাল্টা ওই পরিচ্ছন্ন কর্মচারীকে বলেন, এটা কি তোর বাপের রাস্তা।’ এ নিয়ে কথাকাটাকাটির জের ধরে বাদশার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন সাব্বির। পরে অন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা খবর পেয়ে ছুটে এলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রসঙ্গত, এর আগে রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে এক দর্শককে পেটানোর অভিযোগে ছয় মাসের জন্য জাতীয় দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন ক্রিকেটার সাব্বির রহমান। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় তার।
Discussion about this post