বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং আর আশরাফুল ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত-এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ক্রিকেটপাড়ায় জোর গুঞ্জন, আইসিসি দুর্নীতি দমন ইউনিট আকসুর কাছে আশরাফুলও বিপিএলে ম্যাচ গড়াপেটার কথা স্বীকার করেছেন। সেই স্বীকার করা নিয়েই ভিন্নমত। নানা জল্পনা-কল্পনা। এক পক্ষ বলছে, আশরাফুল বাজিকরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যেচেই ম্যাচ পাতিয়েছেন। আর অন্য পক্ষের দাবি, ফ্র্যাঞ্চাইজি তথা মালিকের নির্দেশেই ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। ওই ম্যাচে যেহেতু অধিনায়ক আশরাফুল, তাই সব দায়দায়িত্ব এখন তার কাঁধেই বর্তেছে। একমাত্র আশরাফুলই বলতে পারেন দুটির কোনটি সত্য।
আকসুকে আসলে তিনি কী বলেছেন-তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটা কথা সত্য, ইতোমধ্যেই অনেক বদনামের ভাগী হয়ে গেছেন আশরাফুল। ইমেজ হয়েছে ক্ষুণ্ন। অতি বড় ভক্তও হতাশ। মনোক্ষুণ্ন। তাদের মনেও প্রশ্ন, সত্যিই আশরাফুল এমন…!
ভক্তদের মনে রাজ্যের হতাশা। দীর্ঘশ্বাস। তাহলে যিনি ১২-১৩ বছর বয়স থেকে আশরাফুলকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন সেই গুরু ওয়াহিদুল গনির মনের অবস্থা কী? তিনি কী ভাবছেন? পুরো ঘটনাটিকে তিনি কীভাবে দেখছেন?
ক্রিকেটার হিসেবে আশরাফুল যার আবিষ্কার, যার হাতের ছোঁয়ায় পূর্ণতা পেয়ে এত বড়, সেই ওয়াহিদুল গনি যারপরনাই হতাশ। ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। পত্রিকা পড়ে, টিভি দেখেও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না-‘আমি যে এখনও বেঁচে আছি এটাই বড় কথা! কি আর বলব বলুন? আমার হাতে গড়া আশরাফুলকে নিয়ে কত গর্বইনা ছিল আমার। যদিও সে কখনই প্রকৃত মেধার স্ফুরণ ঘটাতে পারেনি। যতটা ভালো খেলা উচিত ছিল, যত ওপরে যাওয়ার কথা-তা পারেনি। তারপরও আশরাফুল ছিল আমার গর্বের ধন। অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, আজ তাকে নিয়েই রাজ্যের সমালোচনা। তির্যক কথাবার্তা। আশরাফুল ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত, অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ পাতাতে পারে। তা শুনতে হচ্ছে। তা বিশ্বাস করা বহুদূরে, ভাবতেও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। মনকে প্রবোধ দিতেও কষ্ট হয়। বারবার চোখে ভেসে উঠছে সেই পুরনো স্মৃতি-একটি ১৩ বছরের ছেলে সেই খিলগাঁওয়ের ওপাড় থেকে অনেকটা পথ হেঁটে আমার কাছে ক্রিকেট শিখতে চলে আসত, চোখে-মুখে বড় হওয়ার স্বপ্ন-সেই কিশোর আশরাফুল পরবর্তী জীবনে ক্রিকেট জুয়ায় জড়িয়ে পড়বে, তা কখনই বিশ্বাস হয় না।’
ভেতর থেকে আশরাফুলকে দোষী ভাবতে সায় দিচ্ছে না না মন। আর সে কারণেই ওয়াহিদুল গনি বলছেন-‘পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। টিভি চ্যানেলগুলোয় নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তা দেখে ব্যথায় মন ভরে যাচ্ছে। ভেতরে রক্তপাত ঘটছে। আর মনে হচ্ছে এও সম্ভব! উফ, মাথায় কিছুই আসছে না। কী বলব ভেবে পাচ্ছি না। কে কীভাবে নেবে জানি না, এত কিছু রটনার পরও আমার মন মানছে না। আমার বিশ্বাস হয় না আশরাফুল এমন করতে পারে। গোটা বিশ্ব তাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে, কিন্তু আমার এখনও বিশ্বাস হয় না। আকসুর রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগে আমি আশরাফুলকে দোষী মানতে নারাজ। মাথা যাই বলুক না কেন, মন থেকে আশরাফুলকে এত বড় দোষে দুষ্ট ভাবতে পারছি না। চাইও না।’
ওপরের মন্তব্য কি শুধুই আবেগতাড়িত সংলাপ, নাকি আশরাফুলকে বেশি ভালোবাসেন তাই?
-‘না, তা হবে কেন? আমার চোখে কখনই তেমন কিছু ধরা পড়েনি। আমার সামনে আশরাফুল এমন কোনো কাজ করেনি, কিংবা এমন কথা বলেনি, যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহর উদ্রেক ঘটতে পারে। সে কারণে বিশ্বাস করতে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।’
আপনার শিষ্য আশরাফুল আর আজকের আশরাফুলে তফাত্ কতটা?
‘আমি তাকে অনেক ছোট পেয়েছি। খেলা শিখে আজ সে অনেক বড়। সময়ের প্রবাহতার সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুই পাল্টায়। তবে আমার সঙ্গে তার ব্যবহারটা ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে। বরাবরের মতোই বিনয়ী। নম্র।’
ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
‘নাহ। একদিন হঠাত্ তার কথা খুব মনে হচ্ছিল। ফোন দিলাম, দেখি বন্ধ। আবার কয়েক ঘণ্টা পর ফোনে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম ফোন বন্ধ ছিল কেন? বলল আইসিসির লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। কী নিয়ে? বলল ম্যাচ ফিক্সিং। বিশ্বাস করেন, কেন যেন বুকটা কেঁপে উঠল। তারপর আর কথা হয়নি। চেষ্টা করেছি ফোনে কথা বলার। কিন্তু ফোন বন্ধ।’
আশরাফুল ইস্যুতে গুরু ওয়াহিদুল গনির শেষ কথা কী?
‘কী বলব? এখন শুধুই আকসু রিপোর্টের অপেক্ষা। আকসু রিপোর্ট আসুক। তারপরও যতটা রটেছে, তাতেই নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। অলক্ষ্যে বারবার নিজেকেও দোষী মনে হচ্ছে। শুধু ক্রিকেট শিখিয়েছি। মানুষ করতে পারিনি। কাজেই ব্যর্থতার দায় তো আমারও আছে।’
Discussion about this post