বিস্ময়কর এক জয়। যেখানে যেন হার ছিল অবধারিত, সেখানেই কীনা স্বপ্নের মতো এক ইনিংস খেললেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। দ্য ফিজকে নিয়ে শেষ জুটিতে ৫১ রানের জুটিতে মিশন ইমপসিবল ম্যাচটা চলে আসে হাতের মুঠোয়! ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবারের মতো কোনো ম্যাচে দশম উইকেট জুটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়ে জেতাল।
রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতল ১ উইকেটে। ভারতের ১৮৬ রান টপকে গেল ২৪ বল বাকি থাকতে। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে এটি ষষ্ঠ জয় টাইগারদের।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই যেন আক্ষেপের অন্য নাম। আরও একটা দ্বৈরথে হতাশাই সঙ্গী হয়নি বাংলাদেশের। মিরপুরের শেরেবাংলায় রোববার মিরাজের বীরত্বে এসেছে জয়। দলকে জিতিয়ে মিরাজ ৩৯ বলে ৩৮ রানে ও মুস্তাফিজ ১১ বলে ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন।
রোববার মিরপুরে টস জেতে বাংলাদেশ। সাকিবের ৫ উইকেট শিকারের ম্যাচে ৪১.২ ওভারে মাত্র ১৮৬ রানে অলআউট ভারত। এরপর জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ ৪৬ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে পা রাখে জয়ের বন্দরে।
এদিন ১৮৭ রান তুলতে গিয়ে প্রথম বলেই অবশ্য উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর দ্রুত ফেরেন এনামুল হক বিজয়ও। যদিও তারপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে টাইগারদের পথ দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। কিন্তু দল যখন ঠিক পথে তখন ভুল করেন সাকিব। কিছুই করতে পারলেন না মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও।
লিটন দারুণ খেলছিলেন। কিন্তু অধিনায়ক ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ক্যাচ তুলে দেন লোকেশ রাহুলের হাতে। বিদায়ের আগে করেন ৬৩ বলে ৪১ রান। সাকিব ৩৮ বলে ২৯। সর্বনাশ হয়ে যায় মাহমুদউল্লাহ ১৪ ও মুশফিক ১৮ রানে আউট! তারপর মেহেদি ম্যাজিক!
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সাকিবের ঘূর্ণি আর ইবাদত হোসেনের গতির সামনে ৪১.২ ওভারে মাত্র ১৮৬ রানে অলআউট ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। সাকিব তুলেছেন ৫ উইকেট। ইবাদতের শিকার ৪ উইকেট। এটি তার সেরা বোলিং ফিগার!
মিরপুরে রোববার সাকিবের স্পিনেই দিশেহারা হয়ে যায় ভারতের ব্যাটাররা। ওয়ানডেতে বাঁহাতি স্পিনার মধ্যে ভারতের বিপক্ষে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি গড়েন সাকিব। ভারতের ইনিংসে পঞ্চাশ রানের জুটি মাত্র একটি। আবার পঞ্চাশ রানের ইনিংসও একটি। দলের সর্বোচ্চ ৭৩ রান আসে লোকেশ রাহুলের ব্যাটে। রোহিত শর্মা ২৭ ও শ্রেয়স আইয়ার করেন ২৪।
৩৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা সাকিব। ইবাদত ৪৭ রানে নেন ৪ উইকেট। মিরাজ নেন একটি উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান উইকেট না পেলেও ভাল বল করেছেন। আর টস জেতা অধিনায়ক লিটন দাসও ছিলেন দুর্দান্ত। ওয়ানডেতে নেতৃত্বের অভিষেকে বোলিং পরিবর্তনে চমক রেখেছেন। আর দেখার মতো একটা ক্যাচও নিয়েছেন।
ওয়ানডেতে এর আগে ভারতের সঙ্গে একবারও তিন উইকেটের বেশি নিতে পারেননি সাকিব। ১৯তম ম্যাচে এসে পেলেন ৫ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে তার আগের সেরা ছিল ২৭ রানে ৩ উইকেট।
এরপর সহজ ম্যাচটা কঠিন করে জিতল বাংলাদেশ। স্বপ্নের ইনিংসে জেতালেন মিরাজ! ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে মিরপুরেই ৭ ডিসেম্বর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৪১.২ ওভারে ১৮৬/১০ (রোহিত ২৭, ধাওয়ান ৭, কোহলি ৯, শ্রেয়াস ২৪, রাহুল ৭৩, ওয়াশিংটন ১৯, শাহবাজ ০, শার্দুল ২, চাহার ০, সিরাজ ৯, কুলদিপ ২*; মুস্তাফিজুর ৭-১-১৯-০, হাসান ৭-১-৪০-০, মিরাজ ৯-১-৪৩-১, সাকিব ১০-২-৩৬-৫, ইবাদত ৮.২-০-৪৭-৪)
বাংলাদেশ: ৪৬ ওভারে ১৮৭/৯ (শান্ত ০, লিটন ৪১, এনামুল ১৪, সাকিব ২৯, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ১৪, আফিফ ৬, মিরাজ ৩৮*, ইবাদত ০, হাসান ০, মুস্তাফিজ ১০*; চাহার ৮-১-৩২-১, সিরাজ ১০-১-৩২-৩, কুলদিপ ৫-০-৩৭-২, শাহবাজ ৯-০-৩৯-০, ওয়াশিংটন ৫-০-১৭-২, শার্দুল ৯-১-২১-১)
ফল: বাংলাদেশ ১ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ
Discussion about this post