সব খেলা মাঠে হয় না, কিছু খেলা ঘটে মনের ভিতর। লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেটের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ যেন ঠিক এমনই এক দ্বন্দ্বের নাম, যেখানে বলের চেয়ে বেশি ঘুরছে মতাদর্শের ঘূর্ণি।
গ্রুপ পর্বে যখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল হলো, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো সময়ের তাড়ায় তা আবার হবে-সেমিফাইনালে দেখা হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর, বৃহস্পতিবার। ক্যালেন্ডার তাই বলছিল। কিন্তু মাঠের বাইরে যে বাতাস বইছে, তা আর ক্যালেন্ডারের নিয়ম মানে না।
ইংরেজি সফর সংস্থা ইজমাইট্রিপ সরে দাঁড়িয়েছে লিগের স্পনসরশিপ থেকে। কারণ? একটাই-দেশপ্রেম। সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিশান্ত পিট্টির ভাষায়, “সন্ত্রাসবাদ ও ক্রিকেট একসঙ্গে চলতে পারে না। আগে দেশ, তারপর ব্যবসা। আমরা ভারতের পাশে আছি।” এই ঘোষণা যেমন প্রবলভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে ভারতের একাংশের জাতীয়তাবাদী আবেগে, তেমনি প্রশ্ন তুলেছে-খেলার মাঠ কি আদৌ রাজনীতিমুক্ত?
ভারতীয় দলে আছেন যুবরাজ সিং, শিখর ধাওয়ান, স্টুয়ার্ট বিনি। মাঠে দারুণ পারফর্ম করেছেন তারা—ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরি ও ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বিনি। গেইল, ব্র্যাভো ব্যর্থ হলেও পোলার্ডের ৭৪ রানের ইনিংসও ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি। অন্যদিকে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে দশ উইকেটের ব্যবধানে—স্পষ্টতই দুই দলের লড়াই জমে উঠবে বলে মনে হচ্ছিল।
কিন্তু তাতেই বাধ সাধে নীতির কাঁটা। ভারতের অনেকেই বলছেন-পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা মানে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত, যা সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকের প্রতি একধরনের নীরব সমর্থন। এমনকি দলের খেলোয়াড় শিখর ধাওয়ানও জানিয়েছেন, তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে আগ্রহী নন। তবে কি এই ম্যাচ আর হবে না?
এ প্রশ্ন এখন শুধু লিজেন্ডস লিগের নয়, এটা গোটা ক্রীড়াবিশ্বের। কবে খেলা শুধুই খেলা থাকবে? কবে জার্সির রঙ দেখে নয়, ব্যাটের শট দেখে হাততালি পড়বে? যখন দুটি জাতি ক্রিকেট মাঠে মুখোমুখি হয়, তখন তারা কেবল শট, বল, আর উইকেট নিয়েই লড়াই করে না-তারা ইতিহাস ও ভবিষ্যতের দোলাচলে দাঁড়িয়ে থাকে।
ভারত-পাকিস্তান সেমিফাইনালের এই দোটানা একদিকে হৃদয়ের টান, অন্যদিকে নীতির প্রশ্ন। একপাশে সাবেকদের গৌরবময় অতীত, অন্যদিকে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ বর্তমান। বৃহস্পতিবার লিগে কী হয়, তা সময় বলবে। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত প্রশ্নটি বাতাসে ভাসবেই-এই ম্যাচ কি কেবল একখানা ক্রিকেট ম্যাচ? নাকি অনেক বেশি কিছু?
Discussion about this post