বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি, ৬ অক্টোবর ভোট গ্রহণ। এ সময়ে নির্বাচনী লড়াই নিয়ে চাঙা উত্তেজনার বদলে ভর করেছে এক ধরনের হতাশা। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও তাঁর সঙ্গে থাকা ১৬ ক্লাব সংগঠকের প্রার্থিতা প্রত্যাহার নির্বাচনের আবহকেই বদলে দিয়েছে। ফলে কোন প্যানেল এগিয়ে বা কার জয় সম্ভাবনা বেশি-এই প্রশ্নগুলো ম্লান হয়ে গেছে, আলোচনায় এখন কেবল তামিমের অনুপস্থিতি।
বুধবার সরকারি প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলে একযোগে মনোনয়নপত্র তুলে নিয়েছিলেন তামিম ও তার সহযাত্রীরা। নির্বাচন ‘ফিক্সড’-এমন অভিযোগ করে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোয় সাড়া পড়ে যায় ক্রিকেট মহলে। ভোটযুদ্ধের উত্তাপ কিছুটা কমে এলেও বিসিবি ভবনে থেমে নেই নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ। শুক্রবার ছুটির দিনেও প্রার্থীরা সেখানে হাজির হন নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে, সৌহার্দ্য বিনিময় করতে, এমনকি প্রচারণার অংশ হিসেবে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর পরিকল্পনাও করেন অনেকে।
তবে প্রার্থীদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে একটাই আক্ষেপ-তামিমের অনুপস্থিতি। ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাবের কাউন্সিলর শানিয়ান তানিম বলেন, ‘আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তামিমের থাকা উচিত ছিল। কারণ আমরা একসঙ্গে স্বপ্ন দেখেছিলাম। শুধু তামিম নয়, অনেক যোগ্য প্রার্থী ছিলেন, যারা বোর্ডে থাকার মতো ডিজার্ভ করেন।’
অন্যদিকে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কর্ণধার লুৎফর রহমান বাদল মনে করেন, নির্বাচন স্বাভাবিকভাবেই হবে। রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও ক্রিকেটের সঙ্গে তার সংযোগ আছে বলেই এবার প্রার্থী হয়েছেন। বলছিলেন, ‘নির্বাচনের স্বাধীনতা আমি উপভোগ করছি। তামিম-ফাহিমরা থাকলে ভালো হতো, এতে অংশগ্রহণ আরও বাড়ত। কিন্তু কোনো চাপ আমি দেখিনি। বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই নির্বাচন তো হবেই। সবকিছুর একটা সময় আছে, সেই সময়ের ভেতরে করতে হয়। আমার বিশ্বাস নির্বাচন ঠিক নির্বাচন হিসেবেই হবে।’
ক্যাটাগরি–৩ থেকে পরিচালক প্রার্থী দেবব্রত পাল আরও সরাসরি আক্ষেপের কথা জানান, ‘তামিমের অনুপস্থিতি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অত্যন্ত পীড়া দিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কখনোই কাম্য নয়।’
তামিমের না থাকায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে যাচ্ছে বললেও, কেউ কেউ দেখছেন এটিকে তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে। রূপগঞ্জ টাইগার্সের কাউন্সিলর ও প্রার্থী আদনান রহমান বলেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা যারা এখন নির্বাচন করছি, সবাই সংগঠক এবং খেলার মাঠের মানুষ। ১০-১৫ বছরের কম নয়, আমরা সকলে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত।”
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের স্বাধীনতা আমি উপভোগ করছি। তামিম-ফাহিমরা থাকলে ভালো হতো, এতে অংশগ্রহণ আরও বাড়ত। তবে কোনো চাপ আমি অনুভব করছি না। বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই নির্বাচন হবেই।’
তামিম ইকবালের প্রত্যাহার নির্বাচনের মর্যাদায় ভাটা ফেলেছে বলেই মত দিচ্ছেন প্রায় সবাই। ক্লাব সংগঠকদের অনেকে মনে করছেন, তামিম থাকলে নির্বাচন আরও অংশগ্রহণমূলক হতো, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ত। একপক্ষ সরে দাঁড়ানোয় অনেকের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহজ হয়ে গেলেও, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার উন্মাদনা কমে গেছে অনেকটাই।
তবে নির্বাচনের কাজ থেমে নেই। রিটার্নিং অফিসাররা এখনো আনুষ্ঠানিক ব্রিফ না দিলেও প্রার্থীদের ব্যস্ততা বাড়ছে প্রতি দিন। নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছেন, মিডিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন।
Discussion about this post