ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
রোববার মাহমুদউল্লাহ একাদশের শিরোপা জয় দিয়ে শেষ হয়েছে দুই সপ্তাহের বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ। তবে এ টুর্নামেন্টে থেকে দারুণ কিছু পায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট। তবে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা পেয়েছেন ইতিবাচক অনেক কিছুই। এক নজরে যা দেখে নেয়া যাক-
ক্রিকেটের মাঠে ফেরা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
করোনার কারণে লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিল ক্রিকেটাররা। তাই তাদের ফিটনেস ও ম্যাচ অনুশীলনে মরচে পেড়েছিল। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের মধ্যে দিয়ে এ দুটো ব্যাপার কিছুটা হলেও ঠিক হয়েছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিসিবি যথেষ্ট সতর্কতার মধ্যেই টুর্নামেন্ট পরিচালনা করেছে। এরপর বিসিবির দৃষ্টি আরেকটু বড় পরিসরের টুর্নামেন্টে। ৫ দলের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে, যেটি শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ১৫ নভেম্বর। এভাবেই একটু একটু করে কঠিন এই সময়ের মোকাবেলা করার পরিকল্পনা করছে বোর্ড। এই টুর্নামেন্ট থেকে নিজেরাও বুঝতে পেরেছে, কোথায় আরও কাজ করতে হবে, কোথায় ঠিকঠাক আছে।
আগামী জানুয়ারিতে পূর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের। তার আগে ঘরোয়া এই টুর্নামেন্টগুলো সফলভাবে আয়োজন করতে পারলে ক্যারিবিয়ানদের সফরে আসার পথ সুগম হবে আরও।
লাইভ স্ট্রিমিংয়ের আশা পূরণ
ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অনেকদিন ধরেই ক্রিকেট প্রেমিদের মধ্যে আক্ষেপ ছিল লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে। তবে এবার বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের মধ্যে দিয়ে সেটা অনেকটাই পূরণ হয়েছে তাদের। কেননা এবার অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বেশ কিছু ক্যামেরা দিয়ে সম্প্রচার করা হয়েছে টুর্নামেন্ট। তাতে ক্রিকেট অনুসারীদের মনের খোরাক যেমন মিটেছে, তেমনি বিসিবিও একটি ধারণা পেয়েছে যে মোটামুটি মানসম্পসত সম্প্রচার খুব কঠিন কিছু নয়। সামনেও তাই ঘরোয়া আসরগুলোয় এমন কিছুর আশা করাই যায়।
পেসারদের জেগে ওঠা
দেশের কন্ডিশনে পেসারদের কোন সময়ই ভালো করতে দেখা যায় না। করোনা পরবর্তী যুগে তাদের ফিরে পাওয়া নিয়ে ছিল আরও শঙ্কা। তবে সব কিছু পেছনে ফেলে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের মধ্যে দিয়ে তারা জেগে ওঠেন। বিশেষ করে রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিুজর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরিফুল ইসলামদের কথা না বললেই না।
লম্বা বিরতির পর পেসারদের ফিটনেস যেমন দেখা গেছে দুর্দান্ত, তেমনি বোলিংও ছিল ক্ষুরধার। উইকেট ছিল মন্থর, তার পরও পেসাররা জ্বলে উঠেছেন দারুণভাবে।
১২ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন রুবেল হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
ইরফান শুক্কুর
ঘরোয়া ক্রিকেটের বেশ পরিচিত নাম ইরফান শুক্কুর। মোটামুটি নিয়মিত পারফর্ম করেছেন, কিন্তু অসাধারণ কোনো মৌসুম কাটেনি কখনোই। নিজেকে পরের ধাপেও নিতে পারেননি সেভাবে। সেই ইরফানই এবার চমকে দিয়েছেন তার ব্যাটসম্যানশিপ দিয়ে।
৭ নম্বরে ব্যাট করার কঠিন কাজটি ইরফান এবার করেছেন দারুণভাবে। চরম বিপর্যয়ের মধ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে উদ্ধার করেছেন দারুণ দৃঢ়তায়, আবার প্রয়োজনে শেষের দাবি মিটিয়েছেন ঝড় তোলা ব্যাটিংয়ে। মুশফিকুর রহিমের চেয়ে রান কম করেও তাই টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার পেয়েছেন ইরফানই। তার শটের পরিধি, টেম্পারামেন্ট, পরিস্থিতি বুঝে খেলা, এসব ছিল নজরকাড়া। ঘরোয়া ক্রিকেটে বছর দশেক কাটানোর পর অবশেষে মনে হচ্ছে, পরের ধাপে নিজেকে নিতে শুরু করেছেন ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
অধিনায়ক শান্ত
নাজমুল হোসেন শান্তর দলে ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তারপরও তিনই নেতৃত্ব পান। যে কারণে অনেকের মধ্যে ছিল কৌতুহল। তবে টুর্নামেন্ট শেষে বলা যায়, শান্ত নেতৃত্বের পরীক্ষায় উতরে গেছেন। ফাইনালে না পারলেও তারুণ নির্ভর দলটি ছিল প্রাথমিক পর্বের সফলতম দল। শান্তর বোলিং পরিবর্তন, মাঠ সাজানো, ট্যাকটিক্যাল সিদ্ধান্ত, কতৃত্ব, সবই ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রেসিডেন্টস কাপে যোগ্য নেতৃত্ব দিলেও শান্ত পারেননি কাজের কাজ করতে। মানে ব্যাট হাতে তিনি জ্বলে উঠতে পারেননি। যদি তিনি নিজের এ কাজটি ঠিকমতো করতে পারতেন তবে তার দল হয়তো শিরোপা উল্লাস করতে পারতো।
Discussion about this post