শারজাহর গরম সন্ধ্যায় জ্বলে উঠল এক তরুণের ব্যাট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন করে লেখা হলো একটি নাম—পারভেজ হোসেন ইমন। নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসে শুধুই শতরান করেই থেমে থাকেননি তিনি, গড়েছেন দেশের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও। তার ব্যাটিং-ঝড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২৭ রানের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ, সিরিজে পেয়েছে দারুণ সূচনা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই যখন একের পর এক ব্যাটার ফিরে যাচ্ছেন সাজঘরে, তখন এক প্রান্ত আগলে রেখে যেন একাই লড়েছেন ইমন। ৫৪ বলে ১০০ রানের ইনিংসটি হয়ে উঠেছে এক কথায় ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এর আগে কেবল একজন ব্যাটার সেঞ্চুরি করেছিলেন—তামিম ইকবাল। তবে ইমনের সেঞ্চুরির গতি তামিমের চেয়েও দ্রুত, যা নতুন রেকর্ড হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিসংখ্যানপঞ্জিতে।
ইমনের ইনিংসটি শুধু রানের দিক থেকেই নয়, মানসিক দৃঢ়তা ও ম্যাচ প্রভাবের দিক থেকেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ২৮ বলে অর্ধশতক করে যেভাবে স্ট্রাইক রেট ধরে রেখে পরের পঞ্চাশ রানও ২৫ বলে তুলেছেন, তা আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উপযোগী এক ব্যাটারের পরিচয় দেয়। শেষ পর্যন্ত তার শতরানেই ভর করে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে করে ১৯১ রান।
রান তাড়া করতে নেমে স্বাগতিক আমিরাত ভালো শুরু করেছিল বটে, কিন্তু সেই গতি ধরে রাখতে পারেনি তারা। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মোহাম্মদ জোহাইবকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের উইকেট শিকার শুরু করেন হাসান মাহমুদ। এরপর মুস্তাফিজুর, তানজিম সাকিব ও শেখ মেহেদীর তাণ্ডবে পর্যায়ক্রমে ভেঙে পড়ে আমিরাতের ব্যাটিং লাইনআপ। ওপেনার ওয়াসিম হামিদ ৫০ রানের ইনিংস খেললেও সেটি ম্যাচ ঘোরানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।
শেষ দিকে রাহুল চোপড়া কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনিও ফিরেছেন তানজিমের শিকার হয়ে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান, যা ছিল একপ্রকার অসম্ভবই। বরং উল্টো দুই উইকেট হারিয়ে আমিরাত শেষ করে ১৬৪ রানে, হার মানে ২৭ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন হাসান মাহমুদ, ৩ উইকেট নিয়ে। মুস্তাফিজ, তানজিম ও শেখ মেহেদী প্রত্যেকে পেয়েছেন দুটি করে উইকেট। যদিও কিছু বোলারের বোলিং ছিল ছন্দহীন, কিন্তু দলগত প্রচেষ্টাতেই জয় নিশ্চিত হয়।
তবে দিনের মূল আলোচনায় ছিলেন একজনই-পারভেজ হোসেন ইমন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম শতরানেই গড়েছেন দেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড, হয়েছেন দ্বিতীয় বাংলাদেশি সেঞ্চুরিয়ান, আর সঙ্গে এনে দিয়েছেন জয়।
Discussion about this post