ঢাকার গরম সকাল। মিরপুরের প্র্যাকটিস উইকেটে রোদ পোহাতে পোহাতে বল ঘোরান রিশাদ হোসেন। কিন্তু তার চোখে তখনও এক অন্য মাটির ছবি- মেলবোর্ন, সিডনি বা হোবার্টের সবুজ গ্যালারি। হ্যাঁ, এবার সেই স্বপ্নই সত্যি হচ্ছে।
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যখন দেশে গড়াবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), তখন অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হবে বিগ ব্যাশ লিগ (বিবিএল)। আর এই সময়েই নিজের দেশের টুর্নামেন্ট ছেড়ে রিশাদ যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়, হোবার্ট হারিকেনসের হয়ে খেলতে।
রিশাদ জানেন, তার এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে বিস্ময় হতে পারে। কিন্তু তার চোখে এটা একটিই-নিজেকে আরও ভালো বানানোর সুযোগ, ‘একজন লেগ স্পিনার হিসেবে বাইরের লিগগুলোতে খেলার সুযোগ মানে নিজের বোলিং ও মানসিকতা শানিয়ে নেওয়া। সবাই বলেছে এটা বড় মঞ্চ, বড় সুযোগ। আমিও তাই ভেবেছি-সময়টা এখনই।’
গতবারও বিগ ব্যাশে জায়গা পেয়েছিলেন হোবার্টের হয়ে, কিন্তু জাতীয় দলের খেলা আর এনওসি না মেলায় নামতে পারেননি মাঠে। এবার বিসিবি দিয়েছে পুরো আসর খেলার অনুমতি।
নিজের সিদ্ধান্তের পেছনের ভাবনা নিয়ে রিশাদ বলেন, ‘আমি কাউকে জিজ্ঞেস করিনি। নিজেকেই প্রশ্ন করেছি-আমি কী করলে আরও উন্নতি করতে পারি। উত্তরটা নিজের ভেতরেই পেয়েছি, বড় টুর্নামেন্টে খেললে আমি আরও পরিণত হব।’
হোবার্ট হারিকেনসের হেড অব স্ট্র্যাটেজি এখন রিকি পন্টিং। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত স্পেলের পর থেকেই রিশাদের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন তিনি। রিশাদ বলেন, ‘পন্টিং ছোটবেলা থেকেই আমার প্রিয়। এখন তার কোচিংয়ে খেলার সুযোগ পাব-এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কিছু হতে পারে না।’
অ্যারন ফিঞ্চের মতো অজি তারকারাও তার প্রশংসা করেছেন। এত বড় তারকাদের মুখে নিজের নাম শোনা, রিশাদ বলেন, ‘এটা আমার জন্য অনুপ্রেরণা। চেষ্টা করব যেন তারা ভুল না প্রমাণ হয়।’
পিএসএলের পর এবার বিগ ব্যাশে পা রাখছেন রিশাদ। মনে করছেন, এই লিগগুলো তরুণ ক্রিকেটারের মানসিকতা বদলে দেয়, ‘বড় খেলোয়াড়দের পাশে খেলে শেখা যায় অনেক কিছু। আমি চাই এখান থেকে নতুন অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরতে।’
সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিগ ব্যাশে খেলতে যাচ্ছেন রিশাদ হোসেন। তবে পার্থক্য একটাই-সাকিব ছিলেন বদলি খেলোয়াড়, আর রিশাদকে নিয়েছে ড্রাফট থেকেই। এটাই প্রথমবার কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার সরাসরি বিগ ব্যাশের মূল দলে জায়গা পেলেন।
রিশাদ বলেন, ‘হোবার্ট শহরটা আমি গুগল করে দেখেছিলাম-শান্ত, সুন্দর। আমি ফাইনালের হাইলাইটসও দেখেছি, ওরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার আমি চাই সেই দলের অংশ হয়ে নিজের অবদান রাখতে।’
তার চোখে একটাই লক্ষ্য, ‘প্রতিদিন এক-দুই শতাংশ হলেও উন্নতি করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, দিন শেষে সেটাই আমাকে বড় করবে।’
Discussion about this post