ক্রিকবিডি২৪.কম ডেস্ক
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ জিতল ইনিংস ও ১০৬ রানে। দল ফিরে পেয়েছে আত্মবিশ্বাস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন মুমিনুল হক। অধিনায়ক বললেন অনেক কথা। মঙ্গলবার মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স রুমের সেই আলোচনার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে-
অধিনায়কত্ব নিয়ে স্বস্তি…
আসলে স্বস্তি না ঠিক। দল যেভাবে কাজ করবে, যেমনটা হওয়া উচিত সেভাবে, মানে খেলোয়াড়রা দল হিসেবে কিভাবে কাজ করবে, কিভাবে খেলবে সেই জিনিসটা আমি সবসময় আসলে দেখতে চাইছিলাম। এটা আমি ফিল করতে চাইছিলাম। আমার কাছে মনে হয় যে প্রথম ইনিংস থেকে আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন। এমনকি পেস বোলার থেকে শুরু করে স্পিনার এমনকি ব্যাটসম্যানরা পর্যন্ত আপনার সেভাবে দলের যা দরকার সেভাবে করেছে। এই কারণে আমার কাছে মনে হয় ফলাফলটি এসেছে।
অবদান রাখতে পারলে ভালো..
হ্যাঁ একটু তো অবদান রাখতে পারলে ভালো। আমার কাছে মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে এবং দলের একজন সদস্য হিসেবে সবসময় সবার কাছে এটা কাম্য যদি আপনি কিছু করতে পারেন। আমার মনে হয় আমি দলের জন্য কিছু অবদান রাখতে পেরেছি এবং সেটা করতে পারলে অনেক ভালো লাগে। আমার কাছে মনে হয় ছোট ছোট অবদান রাখাটাও অনেক বেশি কিছু।
বিদেশে ভালো করা এবং অধিনায়কত্ব প্রসঙ্গে…
আমি সবসময় যে জিনিসটা চেষ্টা করছি যে দেশেও যেমন টেস্ট জিততে চাই তেমন আমি স্বপ্ন দেখি বিদেশেও ভালো ক্রিকেট খেলবো। সেই হিসেবে চিন্তা করলে আমাকে পেস বোলারদের বোলিং করাতে হবে, তারা বোলিং না করলে শিখবে না। আর এই কারণে হয়তো উইকেটটা সেভাবে তৈরি করা। এটা আসলে চ্যালেঞ্জ না। আমরা তৈরি ছিলাম যে এমন কিছু করতে পারবো। আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া যে আমরা জিনিসটা বেশ ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে পেরেছি। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো যে আমি বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। কারণ এটা পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার। এটা নিয়ে আমি খুব বেশি কথাও বলবো না। আমি চাই না যেন খারাপভাবে আমার মাথায় এটা ইমপ্যাক্ট করুক।
হুট করে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন, এখন জয় পেয়েছেন
আমি জানি না আপনাদের আমাকে দেখে কখনও আন্ডার প্রেশার মনে হয়েছে কিনা। তবে আমার নিজের কাছে মনে হয় না। আমি সবসময় যে জিনিসটা আশা করি যে, যেটা আমি চেষ্টা করি যে সবসময় আশাটা বড় রাখতে। আমি কোনো সময় আন্ডার প্রেশার ছিলাম না। দেখুন শুরুর দিকে একটু খারাপ হলে আমি বিষয়টিকে সেভাবে দেখি না। কারণ এটা হতেই পারে। আপনার যখন ভালো হবে তখন আসতে আসতে ভালো হতে থাকবে। আমার কাছে উন্নতি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আগামী যে পাকিস্তান সিরিজ আছে সেখানে আমি কেমন এবং দল হিসেবে ক্রিকেটাররা কেমন করছে সেটার দিকে তাকিয়ে আছি। আজকের দিনটি তো চলে গেছে, সেটা তো আর আসবে না। এর আগে যে তিনটি ম্যাচ হেরেছি সেখান থেকে আমি কি শিক্ষা নিতে পেরেছি অধিনায়ক এবং ক্রিকেটার হিসেবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণ এবং মিরাজের জায়গায় নাঈমকে প্রাধান্য দেয়া
অবশ্যই আপনারা ভালো করে জানেন যে পাকিস্তান, ভারতের চেয়ে জিম্বাবুয়ের বোলারদের পার্থক্য থাকবে। এর মানে এটা না যে খুব বেশি পার্থক্য। তবে আপনি যদি দেখেন তারা যে আন্তর্জাতিক দলগুলোতে আছে তারা কিন্তু টেস্টে ভালো করার চেষ্টা করে। আমার কাছে মনে হয় একটু পার্থক্য তো আছে। হয়তো স্কিল, প্ল্যানের ক্ষেত্রে। আমি ছোট করে দেখছি না। পাকিস্তানি বোলারারা অবশ্যই ভালো। এদেরকেও খারাপ বলবো না। তবে অভিজ্ঞতা তেমন হয়তো ছিল না। ওদের দুইজন ক্রিকেটার ইনজুরিতে ছিল। যারা এসেছে তাদের মধ্যে একজন দুইটি টেস্ট এবং আরেকজন দুই-তিন টেস্ট খেলা। হয়তো অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো বোলার হবে বলে আমার মনে হয়।
আর নাঈমের ব্যাপারে দেখেন সে কিন্তু অনেকদিন থেকেই লাইন আপে ছিল এবং ভালো বোলিং করছে। এর মানে যে মিরাজ খারাপ বোলিং করছে এমনটা না। নাঈমকে একটু সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটাই আমার কাছে মনে হয়।
মুশফিককে নিয়ে পাকিস্তান সফরে চান?
এজ এ ক্যাপ্টেন আমিতো সবসময় চাই সাকিব ভাই পর্যন্ত আসুক। যদিও সেতা সম্ভব নয়। অবশ্যই আমি মুশফিক ভাইকে চাই পাকিস্তান সিরিজে।
সিনিয়ররা অধিনায়কত্বে সাহায্য করে?
আপনি কীভাবে দেখেন জানি, আমি ভারত সিরিজ থেকে যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন থেকে আমি সিনিয়রদের কাছ থেকে শতভাগ এফোর্ট পাচ্ছি। মানে আজ পর্যন্ত, সো ফার আমি সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে খুব হ্যাপি। ইভেন আপনি যদি মাঠে ফিল্ডিং দেখেন, অফ দ্যা ফিল্ড অন দ্যা ফিল্ড আমি শতভাগ পাচ্ছি। ১০০ এর বেশিও বলা যায়।
মুশফিকের সাথে পাকিস্তান সফরে যাওয়া নিয়ে কথা হয়েছে?
আমার সাথেতো ঐ ব্যাপারে কথা হয়নি। আপনারা শুনছেন হয়তো।
এই জয় পাকিস্তানে কাজে লাগবে?
অবশ্যই, একটা জয় থাকলেতো আমার কাছে মনে হয় পুরো দলই আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। আমার কাছে মনে হয় পাকিস্তানে কাজে দিবে এ জয়।
আগেই কথা দিলেন সেঞ্চুরি আসবে, তামিম ইকবাল দেশসেরা ব্যাটসম্যান অনেক রেকর্ডের মালিক। আপনিও দারুণ করছেন, ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
না ভাই, ঐটা আমি আমার কথা মিন করি নাই যে আমি ১০০, ২০০ মারবো। আমি আমার দলের ব্যাটসম্যানদের কথা বলেছি। আমারটা হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি অন্য কারও কাছ থেকে আশা করছি আর কি। আপনারা হয়তো ভুল নিউজ করেছেন ওইদিন।
দেখেন আপনারা জানেন তামিম ভাই ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট ব্যাটসম্যান ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, তিন-চার- পাঁচ টা ওপেনারের একজন। তামিম ভাইয়ের সাথে আমার তুলনা কখনো হয়না। আর আমি ওভাবে তুলনায়ও যাইনা কখনো। দলের জন্য যতটুকু অবদান রাখা যায় সেটাই করার চেষ্টা করি, ভালো লাগে মাঝে মাঝে আল্লাহর রহমতে করতে পারি।
দেখেন আমি একটু আগে বলছি যে আমি যখন হোপ করি তখন বড়বড় হোপ করি। আমি ১০০, ১৫০ এর জন্য হোপ করিনা। ২০০, ৩০০ এর হোপ করি, আল্লহাওর রহমতে ৩০০ বলছি মুশফিক ভাই ২০০ করে দিছে। পরের দিন থেকে ৪০০-৫০০ বলতে হবে তাহলে ৩০০-৪০০ করবে।
জার্সি নম্বর পরিবর্তনের কারণ?
না ওরকম কোন কারণ নাই। ওরকম কোন স্পেসিফিক কোন কারণ নাই। স্পেসিফিক কোন কারণ ছিলনা এমনি চেঞ্জ করা।
আমাদের টেস্ট বোলারদের অভিজ্ঞতা?
জানিনা আপনারা খেয়াল করছেন কিনা। আমার মনে হয় আপনাদের খেয়াল করা উচিৎ। নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে এবাদত-রাহি কিন্তু অলমোস্ট ৭-৮ টা টেস্ট খেলে ফেলেছে। আমার মনে হয় ওদের খেলিয়ে খেলিয়ে অভিজ্ঞ করা উচিৎ, আমরা ওই প্ল্যানেই এগুচ্ছি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে হয়তো আরও বেটার করবে।
নাঈম হাসানের পারফরম্যান্স, মিরাজের জন্য চাপ?
সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সব বড় বড় দলগুলোতেই কিন্তু এ জিনিসটা আছে। এরকম হেলদি কম্পিটিশন থাকা ভালো, দলের পারফরম্যান্সের জন্য ভালো।
এই উইকেটই দেশে খেললে সবস্ময় চাইবেন কিনা?
অবশ্যই যখন সবকিছু ভালো যাবে তখনতো মনে হবে ঠিকঠাক। আমার কাছেতো এটাই মনে হয় যেহেতু সবকিছু ঠিকঠাক।
আর চাপের কথা যেটা বললেন চাপে ছিলাম না। কিছুটা চাপ কাজের প্রতি আপনারো থাকে আমারো থাকে ৫ ভাগ ১০ ভাগ। ওইটুক চাপ সবারই থাকে খুব বেশি চাপ না।
ওয়ানডেতে কি ফল প্রত্যাশা করেন?
এটা আমার কাছে মনে হয় সিরিজ জেতা উচিৎ। সিরিজ জেতা উচিৎ এটাই। আমার কাছে সিরিজ জেতাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মাঠের ভেতরে অধিনায়কত্ব?
আমার ক্যাপ্টেন্সি শুরু হয়েছিল বিসিএল, এনসিএল দিয়ে। ওই জায়গায় প্রথম প্রথম এরকমই ছিলাম পরে দেখলাম যে না জিনিসটা চেঞ্জ করতে হবে। যারা মাঠে থাকে তারা জানে। একটু এগ্রেসিভ, রুট থাকতে হয়। রুট না এগ্রেসিভ থাকতে হয় আরকি। সবাইকেই ঝাড়ি মারি (হাসি।)
Discussion about this post