বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অন্তহীন অভিযোগ! বিশেষ ক্লাবকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তো আছেই। চ্যাম্পিয়ন করার সঙ্গে পয়েন্ট টেবিলে ওপরের দিকে নেওয়ার একটা খেলার অভিযোগও আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনের ভোটাভুটির যুদ্ধে এগিয়ে থাকার কৌশল নাকি এসব। এনিয়ে যখন সমালোচনা তুঙ্গে তখন ভিন্ন পথে হাঁটল বোর্ড।
ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) ৪ স্তরে অংশ নেওয়া সবগুলো ক্লাবকে সমান একটি করে কাউন্সিলরশিপ দেওয়া যে পরিকল্পনা ছিল বোর্ডের, সেটি মঙ্গলবার বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পাশ হয়েছে। এখন থেকে ঢাকার সবগুলো ক্লাব সমান ভোট দেওয়ার অধিকার পাচ্ছে। নিয়ম বদলে ঢাকা লিগ ছাড়াও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের সবগুলো ক্লাবকে ভোটের অধিকার দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিসিবির এজিএমে কাউন্সিলরদের সম্মতিতে এই প্রস্তাব পাশ হয়। আগে প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগের ছয়টি ক্লাব দুটি করে এবং বাকি ছয়টি ক্লাব একটি করে ভোট দেওয়ার অধিকার পেতো।
এজিএম শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘প্রিমিয়ার লিগে কারও কারও কাউন্সিলরশিপ ছিল না। আবার কারও একাধিক ছিল। প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগের ক্লাবগুলোর যেমন দুটি করে ছিল। আজ এজিএমে পাশ করা হয়েছে, আমরা প্রত্যেকটা ক্লাবকে সমান সংখ্যক কাউন্সিলরশিপ দেবো।’
২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে গঠতন্ত্রের সংশোধনী এনে প্রিমিয়ার ডিভিশনের সুপার লিগের ছয়টি ক্লাবের জন্য দুইজন করে কাউন্সিলর মনোনয়ন অনুমোদন করা হয়েছিল। এই নিয়মে বিসিবির সর্বশেষ তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভায় এই ধারার সংশোধনী আনা হয়েছে।
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘দীর্ঘ বহু বছর ধরে আমি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত। আবাহনী ক্লাবে আগে জড়িত ছিলাম। তখন থেকেই দেখেছি প্রিমিয়ার লিগে দুটি ক্লাব- আবাহনী ও মোহামেডান। ক্লাব অনেক ছিল, কিন্তু আবাহনী মোহামেডানই চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়াই করতো। শক্তিশালী দল গঠন করতে চাইতো যেন তারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। আমাদের মূল চাওয়া ছিল আরও বেশি ক্লাব যেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করে, দল বানায়। সেজন্য ইনসেনটিভ হিসেবে এটা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন শুধু আবাহনী মোহামেডান নয়, অনেক ক্লাব এই চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইট দেওয়ার জন্য লড়াই করে। দল গঠন করে। যে কেউ যে কোনোবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। এখন অনেক ক্লাব শক্তিশালী দল গঠন করছে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে।’
পাপন আরও যোগ করেন, ‘দেখুন, আমাদের যে উদ্দেশ্য ছিল সেটা সার্ভ হয়েছে। তাতে ক্লাবগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে, সঙ্গে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকও কিন্তু বেড়েছে। এগুলো এখন টানা হচ্ছে। ব্যত্যয় হচ্ছে না তাই ইচ্ছা করলেই বাদ দিতে পারি। কারণ এই প্রস্তাব এখন সফল। তবে অন্য ক্লাব যারা সুযোগ পেতো না, এখন সব ক্লাব সুযোগ পাবে। এজন্য সব ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ দেওয়া হয়েছে।’
প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাবগুলো কাউন্সিলরশিপ কমে যাওয়ায় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয়নি। এ কথা জানিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আবাহনী, মোহামেডান বাদে শক্তিশালী দল হোক। এখন প্রত্যেকটা ক্লাবই শক্তিশালী। প্রতিবার তো আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল খেলে না। এখন নতুন নতুন দল আসছে। প্রাইম ব্যাংক, শেখ জামাল, রূপগঞ্জ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটাই তো আমাদের লক্ষ্য ছিল। এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন একটা জায়গায় এসেছে ক্লাবগুলোর প্রত্যেকটিকে একটি করে কাউন্সিলরশিপ দিলে কারও কোনো ক্ষোভ থাকার কথা না। বরং সবার খুশি হওয়ার কথা। ওখানে যারা ছিল, প্রত্যেকেই এটাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং খুশি হয়েছে। তবে যাদের কাউন্সিলরশিপ কমেছে, তারা তো সন্তুষ্ট হওয়ার কথা না।’
এবার গঠনতন্ত্রে সাধারণ পরিষদের সদস্য নির্বাচনে ৯.২(ক), ৯.২(গ) এবং ৯.২(ঘ) ধারায় সংশোধনীতে প্রিমিয়ার লিগের ১২টি ক্লাবের একজন করে কাউন্সিলর। প্রথম বিভাগে অংশগ্রহণকারী ২০টি ক্লাবের প্রতিটির জন্য একজন করে কাউন্সিলরশিপ, দ্বিতীয় বিভাগে ২৪টি ক্লাবের সবাইকে একটি করে কাউন্সিলরশিপ এবং তৃতীয় বিভাগের ২০টি ক্লাবের সবাইকে একজন করে কাউন্সিলরশিপ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বার্ষিক সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
Discussion about this post