ক্রিকেটের মাঠে বল শুধু একটি উপকরণ নয়, পুরো ম্যাচের চালচিত্র বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর সেই বল যদি বারবার বিতর্কের জন্ম দেয়, তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে-খেলাটির স্বাভাবিক ভারসাম্য কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?
লর্ডস টেস্টের মধ্য দিয়ে ডিউক বল বিতর্ক ফের একবার শিরোনামে। এজবাস্টনে শুরু হওয়া সন্দেহ এবার মাঠ ছাড়িয়ে গিয়েছে আম্পায়ার ও ক্রিকেটারদের সরাসরি মুখোমুখি অবস্থানে। ৯১তম ওভারে বলের আকৃতি নিয়ে শুভমান গিলের স্পষ্ট আপত্তি, সিরাজের তীব্র ক্ষোভ, এমনকি বল বদলের প্রক্রিয়ায় খেলায় দীর্ঘ বিঘ্ন-সব মিলিয়ে দৃশ্যপট একেবারেই অস্বাভাবিক।
এই ঘটনা কি একক কোনো ম্যাচের বিচ্ছিন্ন সমস্যা? না কি এটি এক দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত ত্রুটির প্রতিচ্ছবি?
পরিসংখ্যান বলছে, বদলানো নতুন বলটির কার্যকারিতা পুরোনো বলের তুলনায় চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে। সুইং কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এতে স্পষ্ট যে শুধু মনস্তাত্ত্বিক নয়, বাস্তবিকভাবেই বোলাররা সমস্যায় পড়েছেন।
শুধু ভারতীয় শিবিরই নয়, সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইন, কিংবদন্তি পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার-সবার কণ্ঠেই ক্ষোভের প্রতিধ্বনি। নাসের বলেন, “আমরা এমন এক ‘পারফেক্ট’ বল খুঁজছি যা ৮০ ওভার চলবে—তবে বাস্তবতা ভুলে যাচ্ছি।” আর ব্রড সরাসরি ডিউকসকে কাঠগড়ায় তুলে বলেছেন, “এই সমস্যা তো চলছে পাঁচ বছর ধরে। এখনই সমাধান না হলে খেলার ভারসাম্য নষ্ট হবে।”
গাভাস্কারের মন্তব্য ছিল আরও সোজাসাপ্টা: “এই ঘটনা যদি ভারতে ঘটত, মিডিয়া আগুন লাগিয়ে দিত।” কথার ভেতরে লুকিয়ে আছে সেই ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি-উপনিবেশোত্তর মানসিকতা থেকে পেশাদারিত্ব পর্যন্ত নানা প্রশ্নের ঘনঘটা।
প্রশ্ন একটাই: একটা আন্তর্জাতিক মানের টেস্ট ম্যাচে, যেখানে প্রতিটি ওভার, প্রতিটি সুইং, প্রতিটি সিদ্ধান্ত ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারে-সেখানে কি এমন এক বল ব্যবহার করা চলে, যা ১০ ওভারেই কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে?
ক্রিকেটে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে বহু জায়গায়। তাহলে বল নির্বাচন ও মাননিয়ন্ত্রণে কেন এত দুর্বলতা? ডিউকস কি তাদের পণ্যের মান নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে? নাকি আইসিসি দায় এড়িয়ে যাচ্ছে?
শেষ কথা, বলের আকৃতি হয়তো ছোট, কিন্তু এর প্রভাব বিশাল। ক্রিকেট মাঠে এর প্রভাব যেন খেলাটির বিশ্বাসযোগ্যতাকেই চ্যালেঞ্জ না করে বসে।
Discussion about this post