মোহাম্মদ ওয়াসিম-নামটা হয়তো এখনও ক্রিকেটবিশ্বে খুব বেশি প্রচারিত নয়, তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার অবস্থান এখন অনন্য। তিনি শুধুই সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিনায়ক নন, বর্তমানে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যানও বটে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চলমান সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচেই তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ছক্কার পর ছক্কা মেরে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বছরে ১০০ ছক্কা মারার কৃতিত্ব একমাত্র মুহাম্মদ ওয়াসিমের। গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, রোহিত শর্মার মতো নাম বাদ দিয়ে যদি এমন কেউ এই কীর্তি গড়েন, তখন বোঝাই যায়, তিনি কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। ২০২৩ সালের এই রেকর্ডটি ওয়াসিমকে পরিসংখ্যানের রাজা করে তুলেছে।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ বলে ৫৪, দ্বিতীয় ম্যাচে ৪২ বলে ৮২—দুই ইনিংসেই তিনি যেন একাই দুঃস্বপ্নে পরিণত হন বাংলাদেশের বোলারদের জন্য। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর ব্যাটিংই মূল পার্থক্য গড়ে দেয়। ২০৫ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য তাড়া করে জয় তুলে নেয় আমিরাত, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের প্রথম জয়। আর এই হারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ২০০ রানের লক্ষ্য দিয়েও হেরে যায়।
ওয়াসিমের পরিসংখ্যান বলছে- ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৬৭ ইনিংসে ২৫০৪ রান, গড় প্রায় ৪০ এবং স্ট্রাইক রেট ১৫৬.১২। ছক্কার সংখ্যা ১৫৯। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এবং ছক্কা সূর্যকুমার যাদবের, যিনি অনেক বেশি বড় দলের বিপক্ষে খেলেছেন। তবু ওয়াসিমের ধারাবাহিকতা ও আগ্রাসী মনোভাব তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে এনেছে।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরিসংখ্যান একটু হতাশাজনকই। ২০২২ সালের পর থেকে লিটন দাসের রান ১২২৭-তালিকার ২৮তম অবস্থান। আর স্ট্রাইক রেটে তো চিত্র আরও মলিন। মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং রিশাদ হোসেনের মতো বোলারদেরই দেখা যাচ্ছে শীর্ষে, যারা আসলে ব্যাটসম্যানই নন। ছক্কা মারার সাহস আর সক্ষমতার এমন অভাব টি-টোয়েন্টিতে বড় পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬ ওভারে স্কোর ছিল ১৬০, হাতে ছিল ৮ উইকেট। সেখান থেকে শেষ ৪ ওভারে মাত্র ৪৫ রান-মাত্র ২টি ছক্কা! যদি ওই জায়গায় ২০-২৫ রান বেশি তুলতে পারত, ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারত। এমনকি প্রথম ম্যাচেও ভালো সূচনা নিয়েও রান থেমেছিল ১৯১-এ।
টি-টোয়েন্টিতে কৌশল যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি ছক্কা মারার সাহস ও স্কিল। মুহাম্মদ ওয়াসিম টেপ টেনিস ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছেন, পাকিস্তানি সেই ক্রিকেট সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেছেন, যেখানে আক্রমণই শ্রেষ্ঠ প্রতিরক্ষা। আর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এখনও ‘টেস্ট মাইন্ডসেট’ থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেননি।
সিরিজে এখন ১-১ সমতা। ২১ মে-সিরিজের শেষ ম্যাচ। এটিই নির্ধারণ করবে, কে শিরোপার হাসি হাসবে।
Discussion about this post