ক্রিকেটপাড়ার খবর : প্রিমিয়ার ক্রিকেটে দল গড়ার খরচাপাতি মেটানোর জন্য দলগুলোকে বেশ মোটা অঙ্কের বরাদ্দ দিচ্ছে বিসিবি।
-তা কত সেই খরচ?
এ কান ও কান হয়ে আসা উত্তরে মিলল-‘হু, দলপ্রতি প্রায় ৪০-৫০ লাখ!’
বুধবার মিরপুরে সিসিডিএমের সভার শুরুতেই প্রিমিয়ারের ছয়টি দলের প্রতিনিধিরা এ মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দের দাবিও তুলে বসেন। এ অর্থ চাওয়ার বিষয়টা এজেন্ডায় না থাকায় সিসিডিএমের সহসভাপতি সেটা নিয়ে আলোচনায় যেতে চাননি। কিন্তু ক্লাব প্রতিনিধিরা বিষয়টা নিয়ে ফয়সালার দাবিতে অনড় থাকেন। শেষমেশ সেই জটিলতায় সিসিডিএমের সভায়ই বাতিল করতে হয়।
আর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্লাবগুলোর এ টাকা চাওয়ার বিষয়টা স্রেফ মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিলেন! প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোকে এ ধরনের খরচাপাতি দেওয়ার বিষয় তিনি কোনো প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকারের কথা অস্বীকার করেন। বিসিবি সভাপতি বলেন-‘আমি ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়ার কোনোরকম প্রতিশ্রুতি দিইনি। ক্লাবগুলো বুধবার এক বৈঠকে এ টাকা চাওয়ার দাবি তোলে।’
আগে প্রতিশ্রুতকৃত বরাদ্দের টাকা দাও, তারপর দলবদল-প্রিমিয়ারের ছয়টি ক্লাবের এ দাবি তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিসিবি সভাপতি সেটা নাকচ করে দিলেন।
প্রিমিয়ারের দলগুলোকে এভাবে টাকা দেওয়ার ‘উড়ো খবর’ জানাজানি হলে ক্রিকেটপাড়ায় অন্যরকম প্রতিক্রিয়ার তৈরি হয়। সামনেই বিসিবির নির্বাচন। বলাবলি শুরু হয়-সেই নির্বাচনে ভোট কেনার জন্যই ক্রিকেট ক্লাবগুলোকে এমনভাবে ‘অনুদানের’ চিন্তাভাবনা চলছে!
তবে বিসিবি সভাপতি এমনভাবে ক্লাবগুলোকে টাকা বরাদ্দের বিষয়টি সরাসরি বাতিল করে দেওয়াতে এখন প্রিমিয়ার ক্রিকেট ক্লাবের শীর্ষ কর্তাদের প্রতিক্রিয়া কী হয়-সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
এভাবে ক্লাবগুলোকে অর্থ বরাদ্দের ‘সত্ চিন্তার’ পক্ষে যারা কোমর বেঁধেছিলেন বিসিবির সেই ক্রিকেট কর্তাদের যুক্তিটা ছিল এমন-‘কই গত বছরও তো প্রিমিয়ারের দলগুলোকে বিসিবি ৩৫ লাখ করে টাকা অর্থ বরাদ্দ করেছিল। তখন তো কোনো বাঁকা কথা ওঠেনি।’
গত বছরের পরিস্থিতির সঙ্গে চলতি বছরের পরিস্থিতি মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। গেল বছর বিপিএলের সূচির কারণে ক্রিকেট দলগুলোকে তাদের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ক্লাবগুলোর সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্যই বিসিবি তখন বিপিএল তহবিল থেকে প্রিমিয়ারের শীর্ষ ক্লাবগুলোকে ৩৫ লাখ করে টাকা দিয়েছিল। মজার তথ্য হল, গত বছর ক্লাবগুলোকে এ বরাদ্দ যাতে দেওয়া হয় সেজন্য খোদ নাজমুল হাসান পাপনই জোর দাবি তুলেছিলেন। তিনি সেই সময় আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই তিনি কাল জানালেন-‘চলতি বছর ক্লাবগুলোকে গত বছরের মতো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো কারণই নেই। ক্লাবগুলো বলছে তারা গত বছর যেভাবে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল এ বছরও তেমন একটা ক্ষতিপূরণ তাদের চাই। তবে তাদের বুঝতে হবে সেই ক্ষতিপূরণ ছিল বিপিএলে তাদের খেলোয়াড় ছাড় দেওয়ার অংশ হিসেবে। এবার তো তেমন কোনো সমস্যায় ক্লাবগুলো পড়েনি। আর তাই আমি তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অঙ্গীকারও করতে পারি না। চলতি বছর ক্লাবগুলো আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের দাবি তুলেছে। আমি তাদের এ বিষয়ে এখন কিছুই বলতে পারব না। কারণ এটা অবশ্যই আগে বোর্ডে আলোচনা করতে হবে। আর এখন পর্যন্ত আমি বোর্ডে এটা আলোচনাই করিনি।’
উল্টো নাজমুল এ বছর ক্লাবগুলোর কাছে টাকার দাবি তোলেন-‘গ্রেডেশন পদ্ধতিতে দলবদলের ফলে এ বছর ক্রিকেট ক্লাবগুলোর খরচ তো কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। সেই সূত্রে তো আমার বলা উচিত ক্লাবগুলোর উচিত বিসিবিকে অর্থ দেওয়া!’
নিশ্চিত থাকুন বিসিবি সভাপতির কৌতুকের ছলে বলা শেষের এ মন্তব্য ক্রিকেট ক্লাব কর্তাদের মোটেও ভালো লাগবে না।
Discussion about this post