ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
বাবা সরকারি চাকুরে। ছিলেন ময়মনসিংহের সহকারী পোস্টমাস্টার। কিন্তু তিনি বাবার পেশায় যেতে চান নি। অন্য কিছু নয়, তিনি শুধুই একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। সঙ্গে বাবারও সমর্থন ছিল। সব মিলিয়ে স্বপ্নপূরণ হয় রামচাঁদ গোয়ালার। সুদীর্ঘ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার। জাতীয় দলে খেলতে না পারলেও ঠিকই দেশের ক্রিকেটে একটা ছাপ রেখে গেলেন তিনি।
গত বছর স্ট্রোকের পর থেকে নানা শারীরিক সমস্যায় ছিলেন। শেষ অব্দি সাবেক বাঁহাতি স্পিনার রামচাঁদ গোয়ালা এ রোগের কাছে হার মানলেন। শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহের ব্রাহ্মপল্লির নিজ বাড়িতে মারা যান বরেণ্য এ ক্রিকেটার।
মৃত্যুকালে গোয়ালার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। জীবনের প্রায় পুরোটাতেই ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন এই অকৃতদার মানুষটি।
সত্যিকার অর্থে বাবার ইচ্ছাতেই ক্রিকেটে পা রাখা। মিশন স্কুলের ছাত্র রামচাঁদ সেসময় সুযোগ পেলেই ছুটতেন সার্কিট হাউস মাঠে। শুরুতে ছিলেন বাঁহাতি পেস বোলার। এরপরে হয়ে যান বাঁহাতি স্পিনার। কৈশোরের কোচ ফখরুদ্দিন আহমেদের পরামর্শেই পাল্টে নেন নিজেকে। শুরু করেন স্পিন । এরপর ১৯৬২ ঢাকা লিগে যখন ভিক্টোরিয়ার জার্সিতে অভিষেক, স্পিনার হিসেবেই যাত্রা।
রামচাঁদ পরিচিত কাছে পরিচিত প্রিয় ‘গোয়ালাদা’ বলে। আবাহনীতে খেলেছেন একটানা ১৫ মৌসুম। মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, টাউন ক্লাব, শান্তিনগরেও খেলেছেন তিনি। ৫৩ বছর বয়সে খেলা ছাড়েন তিনি।
এরমধ্যে ঢাকায় ছাড়াও খেলেছেন কলকাতায়। ইডেনে ১৯৮৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিপক্ষে ম্যাচে খেলেছেন তিনি। যে ম্যাচে রামচাঁদকে খেলতে হিমশিম খেয়েছেন খোদ ভারতের ক্রিকেটার অরুণ লাল।
সেই ১৯৫২ সালের কথা, গোয়ালা মাত্র ১২ বছরের। তখনই ময়মনসিংহ ক্রিকেট লীগে যাত্রা শুরু করেন তিনি। অভিষেক হয়েছিল পন্ডিত পাড়া এসির হয়ে। ১০ বছর পর গোয়ালা দা যখন ২২ বছরের যুবক তখন ঢাকা লিগে পা রাখা। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলেন তিনি। তারপর শুধু এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি রীতিমতো কিংবদন্তি!
–
১৯৮২-৮৩ মৌসুমে গোয়ালা বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পশ্চিমবঙ্গে যান। সেখানে কালিঘাট, নদিয়া, চন্দননগর, পশ্চিমবঙ্গ অনূর্ধ্ব-২২ দলকে হারায় বাংলাদেশ। ৫ ম্যাচ সিরিজটা ৪-১ ব্যবধানে জিতে নেয় গোয়ালার দল। তখন বাংলাদেশ দলে খেলতো রকিবুল হাসান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর মতো ক্রিকেটাররা। এই সিরিজে গোয়ালা করেন দুর্দান্ত বোলিং।
বাংলাদেশ ১৯৮৬ সালে যখন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন তখন গোয়ালা ক্রিকেট ক্যারিয়ার প্রায় শেষ। বয়স ৪৫ পেরিয়েছে। তখন এনামুল হক মণি আর গাজী আশরাফ লিপু দেশের প্রতিষ্ঠিত স্পিনার। তারপর আর সুযোগ মিলল না। ৫৩ বছর বয়সে ১৯৯৩ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি।
ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে ময়মনসিংহের কয়েকটি ক্লাবে ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। তার হাত ধরেই পথ খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কৃতি খেলোয়াড় সাইফুল ইসলাম, সানোয়ার হোসেন, জাকির। এমন কী টি-টুয়েন্টি ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহও তার ছাত্র।
গোয়ালা ক্রিকেটেই ঘর-সংসার বানিয়ে ফেলেছিলেন। এজন্য নিজে আর সংসার গড়তে পারেন নি। বিয়েও করা হয়নি। এভাবেই এবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন গোয়ালা। যাকে মনে রাখতেই হবে!
Discussion about this post