(লেখাটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন নামী ক্রীড়া সাংবাদিক জানে-ই-আলম। যিনি কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। তার সেই স্ট্যাটাস তুলে ধরা হল ক্রিকবিডি২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য)।
######################
সেই বিকেএসপি, সেই আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বর!
পথের ঝক্কি, ক্লান্তি; ঢাকা থেকে বিকেএসপির দূরত্ব যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। সংবাদ কর্মীদের জন্য সবচেয়ে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার ভেন্যু এটি।
বিকেএসপিতে ম্যাচ কভার করতে যাওয়া তাই সময়ের কঠিন কর্মের একটি।
আজ আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বরের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি আবারও সেটি অক্ষরে অক্ষরে অনুধাবন করালো।
এ দুই ক্লাবের ম্যাচ শেষবার বিকেএসপিতে কভার করেছিলাম ২০১৬ সালে। সেবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে অনেক নাটকীয়তার পর জিতে গিয়েছিল আবাহনী। দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম, তাসকিনের পরিস্কার রানআউট আম্পায়ার দেননি। পরে মোসাদ্দেকের মারকুটে ব্যাটিংয়ে জিতেছিল আবাহনী। ওই বছর আবাহনীর শিরোপার মুকুট তাই কিছুটা কলঙ্কিতই ছিল।
আজ আবার সেই দুই ক্লাবের লড়াই, সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, সেই বিকেএসপিতে। যেখানে বৃষ্টির বিঘ্নতায় হয়েছে অনেক নাটকীয়তা। রান-রেকর্ডের ম্যাচে চারটি সেঞ্চুরি হয়েছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের লিস্ট-এ ফরম্যাটে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৯৩ রানের স্কোর গড়েছিল আবাহনী।
বিকেএসপির রানস্বর্গ উইকেটে ওই পাহাড়সম রানটাও অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল মার্শাল আইয়ুব ও ফজলে রাব্বি মাহমুদের ব্যাটিংয়ে। হালকা বৃষ্টি, দমকা হাওয়া,আলোর স্বল্পতার কবলে পড়ে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার আগে ৩০ ওভারে দুই উইকেটে ২১৭ রান তুলেছিল দোলেশ্বর। তখন ডিএল মেথডে ১ রানে এগিয়ে ছিল দলটি। সময় তখন ৪টা পাঁচ মিনিট। যেখানে শেষ ওভারটি অপর্যাপ্ত আলোয়, হালকা বৃষ্টির মাঝেই খেলেছে দোলেশ্বর।
খুব ভারী বৃষ্টি হয়নি। তবে তীব্র বাতাস, আকাশে ঘনীভূত মেঘের কারণে বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ ছিল। ধীরে ধীরে আকাশ পরিস্কার হতে থাকে। মেঘও কেটে যেতে থাকে।
ম্যাচ অফিসিয়ালরা জানালেন, সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়ায় ম্যাচ শেষ করতে তারা পৌনে ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবেন।
পাঁচটার দিকে খেলা পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বৃষ্টি থেমেছিল, আমার মনে হয়েছে, খেলার মতো যথেষ্ট আলো ছিল। এর মাঝে আবাহনীর সমর্থকরা হুল্লোড় করছিলেন আম্পায়ারদের রুমের সামনে, তাদের মাঠে নামতে বলছিলেন। শুধু সমর্থকরা নন, আম্পায়ারদের দ্রুত মাঠে নামতে বলতে দেখা গেছে আবাহনীর কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাকেও।
এর কিছুক্ষণ পর (সময়টা ঠিক মনে নেই) হঠাৎই জানা গেল, খেলা শুরু হবে। ডিএল মেথডে ৩৫ ওভারে দোলেশ্বরের টার্গেট ২৭৮। মানে শেষ পাঁচ ওভারে করতে হবে ৬১ রান।
আবাহনী দল মাঠে নেমে গেলেও ড্রেসিংরুমের সামনে তখন অপ্রস্তুত দোলেশ্বরের খেলোয়াড়রা। কর্মকর্তা, খেলোয়াড় সবাই চতুর্থ আম্পায়ারকে বলছিলেন, আমাদের সময় দিবেন না। টার্গেটের কাগজ কই, কিছুই তো পেলাম না। কিছু না জানিয়ে খেলা শুরু করা যায় কিভাবে? ক্লাবটির অভিযোগ, পর্যাপ্ত সময় তাদের দেয়া হয়নি। যথাযথভাবে খেলা শুরুর বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। যদিও পরে দেখা গেছে, ডিএলের স্কোর শীট তাদের কোচের হাতে ছিল।
খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ১ রানে এগিয়ে থাকা মানে প্রায় জয়ের কাছেই ছিল দোলেশ্বর। তারপর এভাবে খেলতে নামার আগে সময়ক্ষেপন, বিলম্ব করা একটা দলের জন্য স্বাভাবিকই বলতে হবে।
ক্ষণিকের বচসা শেষে নামলেন দোলেশ্বরের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মার্শাল আইয়ুব ও ফজলে রাব্বি মাহমুদ। তখন শেষ বিকেলের আলো এসে পড়েছে মাঠে। বৃষ্টির পর ব্যাটিংয়ে নেমে মিরাজ-মাশরাফিদের বোলিংয়ে বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতার মতো দ্রুত রান তুলতে পারেনি দোলেশ্বর। হয়তো, তুলতেও চাননি! সেঞ্চুরি করে ফেললেও উদযাপন করেননি মার্শাল-ফজলে রাব্বি।
৩ ওভার শেষেই আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামতে শুরু করে। মিরাজ পঞ্চম ওভারের প্রথম বল করার পর দুই আম্পায়ার ম্যাচ কলড অফ করে দেন। যদিও যেমন বৃষ্টি ছিল তাতে একজন স্পিনারের করা বাকি ৫ বল খেলানো যেত। আবাহনীর ফিল্ডাররা মাঠেই ছিলেন। মাশরাফি আম্পায়ারদের সাথে কথা বলেই সতীর্থদের নিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। আর দুদল মাঠ ত্যাগের পরই দেখা যায় আবার বৃষ্টি নেই। ততক্ষণে আবার আলোও কমে গিয়েছিল।
পরে ডিএল মেথডে আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। যদিও ম্যাচের এমন পরিণতিতে দোলেশ্বরকে বঞ্চিত মনে হচ্ছিল। জয়ের উল্লাস করেনি আবাহনী। দুদল হ্যান্ডশ্যাক করলেও বিষাদ ছিল ফরহাদ রেজাদের চোখেমুখে। ঢাকায় ফেরার বাহনে চড়ার আগে মাশরাফি দোলেশ্বরের ড্রেসিংরুমে গিয়ে খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেন।
মজার বিষয় হলো, ম্যাচ শেষে কোনো দলই তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পোস্ট ম্যাচ হয়নি। বিশেষ করে দোলেশ্বরের কর্মকর্তা, কোচ, খেলোয়াড় কেউ কথা বলতে সাহস পেলেন না!
Discussion about this post