বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক নায়ক এসেছেন, অনেকেই গিয়েছেন। কেউ আলোয় থেকেছেন, কেউ আলো ছুঁয়ে যাওয়ার আগেই ম্লান হয়ে গেছেন। কিন্তু এমন নায়ক খুব কমই আসে-যিনি জিতে যান, অথচ জয়ের পর চুপ থাকেন। যিনি গর্ব করেন না, কিন্তু গর্ব করার মতোই কিছু করে যান। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেই এক নীরব বিস্ফোরণের নাম-রিশাদ হোসেন।
৮ নম্বরে নেমে তার ব্যাটে ছিল আগুন। তারপর বল হাতে দিলেন বিষ। দুই রূপেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাস্ত করলেন তিনি। ১৩ বলে ২৬ রানের ইনিংস, এরপর ৩৫ রানে ৬ উইকেট—রেকর্ড বইয়ের পাতায় জায়গা করে নেওয়ার মতোই এক অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। তবে নিজের কীর্তির ঢোল তিনি নিজে বাজালেন না।
‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ দিয়েছেন,’ -ম্যাচশেষে তার মুখে ছিল এই কেবল কয়েকটি শব্দ। এটিই ছিল তার ‘ফাইফার’-এর অনুভব।
ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নেওয়ার সময়ও রিশাদ একই রকম। বিনয়ী, স্থির এবং দায়বদ্ধ, ‘চিন্তা করিনি বেশি কিছু। শুধু আমার নিজের প্রক্রিয়ার মধ্যেই থাকতে চেয়েছি,’ -বললেন এই তরুণ লেগস্পিনার।
তার বোলিং কেবল পরিসংখ্যানের ছকে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিটি ডেলিভারিতে ছিল পরিকল্পনা, ছিল ধৈর্য, আর ছিল সেই আত্মবিশ্বাস, যা বলে, ‘আমি জানি, আমার সময় আসবে।’
এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি বলেন, ‘ওরা ভালো খেলছিল, তাই হতাশ না হয়ে অপেক্ষা করছিলাম। আমরা সবাই বিশ্বাস করছিলাম, ফিরে আসা সম্ভব।’
মাঠে এমন বিশ্বাসই বদলে দেয় ম্যাচের গতিপথ। ব্যাটেও অবদান, বলেও বিস্ময়
বাংলাদেশের ইনিংস যখন বিপর্যয়ের মুখে, তখন রিশাদ নেমে এসে মেরে দেন ২ ছক্কা, ১ চার। কয়েক ওভারে হঠাৎ করেই রানটা দুই শতকের ঘরে পৌঁছে যায়। পরের কাজটা আর সহজ ছিল না-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের বিপক্ষে বল হাতে ১০ ওভারে মাত্র ৩৫ রানে ৬ উইকেট! এবং এটা শুধু তাঁর ক্যারিয়ার সেরা নয়, বাংলাদেশেরও সেরা স্পিন বোলিং ফিগার।
তবে নিজেকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের কোনো নামগন্ধ নেই তার কণ্ঠে, ‘সবাই একটু ভুগছিল আজ, আমি শুধু চেষ্টা করেছি সেরাটা দিতে। এটাই আমার কাজ,’ বললেন সংবাদ সম্মেলনে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ বলেন, ‘রিশাদ খুবই ভালো বল করেছে। তার লাইন-লেন্থ আমাদের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছিল। স্পিনারদের জন্য উইকেট কিছুটা সহায়ক হলেও রিশাদ তা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে।’
এ বছরের এটিই বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে সিরিজ, তবে সামনের বছর অপেক্ষা করছে আরও লম্বা ওয়ানডে মৌসুম। রিশাদ সেখানে যে একটা গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠতে যাচ্ছেন, তার আভাস মিলেছে এই ম্যাচেই!
Discussion about this post