ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
একদিন আগেই জানিয়েছিলেন-অধিনায়কত্বের ইতি টানবেন। তাই করলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নেতৃত্বের শেষ ম্যাচে পেলেন মনে রাখার মতো এক জয়। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পেয়েছে বৃষ্টি আইনে ১২৩ রানের বড় জয়।
এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করেছে স্বাগতিকরা। এনিয়ে জিম্বাবুয়েকে টানা চার সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ দল।
অধিনায়ক মাশরাফি পেলেন তার ৫০তম জয়। নেতৃত্বের হাফসেঞ্চুরি জয় দিয়েই সরে দাঁড়ালেন তিনি। তবে খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার ইচ্ছেটা জানিয়ে রেখেছেন মাশরাফি।
ছুটির দিনে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচ টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৪৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে করে ৩২২ রান। বৃষ্টি আইনে জিম্বাবুয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ৩৪২ রান। এরপর পথ হারিয়ে ৩৭.৩ ওভারে সফরকারীরা অলআউট ২১৮ রানে।
মাশরাফি বিন মর্তুজা তার বিদায়ী ম্যাচে দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবালের রেকর্ড গড়া জুটিতেই বড় পুঁজি পায় বাংলাদেশ। নেতৃত্বের বিদায়ে ম্যাচে মাশরাফিকে দারুণ এক জয় উপহার দিলেন সতীর্থরা। ম্যাচে জিম্বাবুয়ের ইনিংসে প্রথম ভাঙনটা ধরান তিনিই। এরপর আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরা।
মাশরাফি নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে ফেরান ওপেনার তিনাশে কামুনহুকামউইকে। ব্রেন্ডন টেলরকে আউট করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।অভিষিক্ত স্পিনার আফিফ হোসেন ধ্রুব তার দ্বিতীয় বলেই শন উইলিয়ামসকে বোল্ড করেন। ৩৬ বলে পাঁচ চারে ৩০ রানে তুলেন উইলিয়ামস।
রেজিস চাকাভাকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। ৪৫ বলে এক চারে ৩৪ রান করেন তিনি ওয়েসলি মাধেভেরেকে ফিফটির সাজঘরের পথ দেখান সাইফউদ্দিন। ৪২ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৪২ রান করেন মাধেভেরে। দল পড়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ে।
সিকান্দার রাজা কিছুক্ষণ লড়ে ফিরেন ৫০ বলে ৬১ রান। সাইফউদ্দিন পেয়েছেন ৪ উইকেট।
দিবা-রাত্রির ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাস ও তামিম ইকবাল ইতিহাস গড়েন। দুই ওপেনারের শতরানে জিম্বাবুয়েকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন লিটন।
শুরুতে স্বাগতিক দল বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলে ৩২২ রান। তবে এই ম্যাচে জিততে বৃষ্টি আইনের কারণে জিততে প্রয়োজন পড়ে ৩৪২ রান। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমেছে ৭ ওভার। ম্যাচের দৈর্ঘ্য ৪৩ ওভার।
মাশরাফির নেতৃত্বের বিদায়ের ম্যাচে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন লিটন-তামিম। লিটনের পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিমও। দেশের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ম্যাচে এবারই এক ম্যাচে শতক পেলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার।
টানা দ্বিতীয় ও ওয়ানডেতে তের নম্বর সেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিস। ৯৮ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছান তামিম। তামিমকেও ছাড়িয়ে যান লিটন। আগের রেকর্ডটি ছিল ১১ বছর আগের। যা দুই দিন আগেই ভাঙেন খোদ তামিম। এবার তার ১৫৮ ছাড়িয়ে গেলেন লিটন। শেষ অব্দি তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭৬ রান। তামিম করেন ১০৯ বলে ১২৮। গোটা নতুন করে খেলা শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ ৯ ওভার ৪ বলে করে ১৪০ রান।
তামিম ইকবাল-লিটন দাস গড়েন নতুন ইতিহাস। দু’জন মিলে ভাঙেন প্রায় ২১ বছর আগের এক রেকর্ড। ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটির দেখা পেলো বাংলাদেশ। আগের রেকর্ডও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেই ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেন উদ্বোধনী জুটিতে তুলেন ১৭০ রান।
এই জুটিতেও হয়েছে ইতিহাস। ওয়ানডেতে দেশের সেরা জুটির রেকর্ড গড়েন তামিম ও লিটন দাস। টপকে গেলেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ২২৪ রানের জুটিকে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে রেকর্ডজুটি গড়েন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। সিলেটে লিটন-তামিম করলেন ২৯২ রান।
তার পথ ধরে হাসিমুখে মাঠ ছাড়েন মাশরাফি। মাথা উঁচু করেই বিদায় নিলেন ক্যাপ্টেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ৩২২/৩ (তামিম ১২৮*, লিটন ১৭৬, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ৭; মুম্বা ৮-০-৬৯-৩, সুমা ৬-১-৪৮-০, রাজা ৭-০-৬৪-০, মাধেভেরে ৫-০-২৯-০, টিরিপানো ৮-০-৬৫-০, উইলিয়ামস ৯-১-৪৬-০)।
জিম্বাবুয়ে: (লক্ষ্য ৪৩ ওভারে ৩৪২) ৩৭.৩ ওভারে ২১৮ (কামুনহুকামউই ৪, চাকাভা ৩৪, টেইলর ১৪, উইলিয়ামস ৩০, মাধেভেরে ৪২, রাজা ৬১, মুটুমবামি ০, মুটুমবোদজি ৭, টিরিপানো ১৫, মুম্বা ৪*, সুমা ০; মাশরাফি ৬-০-৪৭-১, সাইফ ৬.৩-০-৪১-৪, মিরাজ ৮-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ৬-০-৩২-১, আফিফ ২-০-১২-১, তাইজুল ৯-০-৩৮-২)।
ফল: বাংলাদেশ ১২৩ রানে জয়ী
ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ১২৩ রানে জয়ী বাংলাদেশ
সিরিজ: ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী
ম্যাচসেরা: লিটন দাস
সিরিজসেরা: তামিম ইকবাল ও লিটন দাস
Discussion about this post