মামুনুল ইসলাম
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে আমি বলেছিলাম, এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ। কিন্তু কখনোই ভাবি নি, এই ম্যাচটাই আমি ভুলে যেতে চাইবো। না, খেলার ফলাফলের জন্য এমনটা বলছি না। ম্যাচের ফলাফল কি হবে এটা সবার আগে থেকেঅনুমেয় ছিল। ম্যাচের আগে-পরে যে ধরনের সমালোচনা আমাদের ফুটবলারদের সহ্য করতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, ফুটবল খেলাটাই আমাদের দোষ।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা। যে দল বিশ্বকাপ খেলে, এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন, যে দলে টিম ক্যাহিলের মত একজন তারকা ফুটবলার খেলেন। একজন বাংলাদেশী ফুটবলারের জন্য সেই দলের বিপক্ষে খেলাটাই স্বপ্ন। যখন কেউ কেউ খেলায় গোলবন্যা বইবে, বা বড় ব্যবধানে হারবে বাংলাদেশ এমনটা ভেবে কিভাবে মুখ লুকাবে তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো তখন আমাদের ফুটবলাররা মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলো কিভাবে দেশের সম্মান বাচানো যায়। কিন্ত আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে আমরা ফুটবলার, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই, নেই সেলফি তোলার অধিকার। আমরা শুধু জাতিকে লজ্জা দিয়ে থাকি।
এবার আসি, মাঠের বাইরে আমাদের আচরণের সমালোচনা নিয়ে। এই দলে কিন্তু এক ঝাঁক তরুণ ফুটবলার আছে, হয়তো নিজেদের আবেগটা তারা এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে শেখেনি, কিন্ত তাদেরকে উচ্ছৃঙ্খল ভাবার কোন কারণ নেই। এমনিতে আমাদের ফুটবল পিছিয়ে আছে, ফুটবল খেলতে তরুণরা আগ্রহী না, এইধরনের অযাচিত সমালোচনা দেশের ফুটবলের জন্য ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
শত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, ফুটবল ফেডারেশন কিন্তু ফুটবলকে জাগিয়ে তোলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। মাঠে আমরা আমাদের সেরাটা দেই, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনাল হারের পর আমাদের ফুটবলারদের যে কান্না আমি দেখেছি তাতে কখনোই ফুটবলারদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন জাগে না। আপনারাও নিশ্চয় দেখেছেন সেই কান্না।
যদি আসলেই দেশকে আমরা ভালবাসি, খেলাকে ভালোবাসি তাহলে দর্শক হিসেবে, মিডিয়া কর্মী হিসেবে সব খেলাকে সমানভাবে দেখা উচিত। খেলোয়াড়দের প্রাপ্য সম্মান দেয়া উচিৎ। মাঠের ফল যাই হোক, মাশরাফি, সাকিবদের মত আমরাও লাল সবুজের প্রতিনিধি।
# লেখক: জাতীয় ফুটবল দলের সদ্য সাবেক অধিনায়ক।
Discussion about this post