২২ এপ্রিল বসতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আসরের যে তিনটি ক্লাব দল সাজাতে দুই কোটির ওপরে খরচ করেছে রূপগঞ্জ তাদের শীর্ষে। ২ কোটি ১১ লাখ টাকার দল নিয়ে ডিপিএল শিরোপার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে ক্লাবটি। নামিদামি সব ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়ে আবাহনী লিমিটেড যখন কাগজে-কলমে সবচেয়ে শক্তিশালী দলের তকমা পাচ্ছে। তখন বড় বাজেটের দল সাজিয়ে খরচের হিসেবে সবাইকে টেক্কা দিয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
ক্রিকেট যখন ব্যাট-বলের খেলা, মাঠে নামার পর তাই টাকার অঙ্কটা ভুলে বসতে হবে রূপগঞ্জকে। দলটির কর্ণধাররাও সেটি জানেন। জানেন বলে আপাতত স্কোয়াডে থাকা নামগুলোর দিকে তাকিয়ে সফল একটি ডিপিএল মৌসুমের আশ্বাস মিলল তাদের কাছ থেকে। একাধারে ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ, তরুণ, পরীক্ষিত আর সম্ভাবনাময় সব ক্রিকেটারের মিশেলে দল গড়েছে ক্লাবটি।
যাতে উদ্বোধনীতে ভরসা রাখা হয়েছে সৌম্য সরকারের ওপর। এ-প্লাস ক্যাটাগরি থেকে জাতীয় দলের বাঁহাতি এই ওপেনারকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। সৌম্য যদিও কিছুদিন থেকে চেনারূপে নেই। আবার ঠিক ব্যাট-প্যাচ বলতে যেটি বুঝায় তেমন দুঃসময়ও যাচ্ছে না তার। তবে শুরুর বিশকে চল্লিশ-ষাটের রূপ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি।
সৌম্যর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- বিষয়টি নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ার মত কিছু না হলেও, আত্মবিশ্বাস ফেরানোর যুদ্ধটা শেষপর্যন্ত তার নিজের সঙ্গেই। সেই পথে ফতুল্লায় অনুশীলন আর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনে টানা জিম, সবমিলিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সৌম্য। জাতীয় দলের কোচের পাশাপাশি তার বিকেএসপির কোচ রুশু স্যার ও ফাহিম স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করছেন বলে জানালেন।
সৌম্য স্পষ্ট করেই জানেন, তার কাছে ভালো শুরুর প্রত্যাশা থাকবে দলের। নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেলে দিতে কাজ করছেন তাই। তাতে যদি চেনা রূপে ফিরতে পারেন সেটা যে দলকে সাহায্যই করবে সেটি তো বোঝাই যায়।
রানে ফিরতে ডিপিএলকে ঘিরে বাড়তি কোন পরিকল্পনা আছে কিনা সে প্রসঙ্গে সৌম্য অবশ্য নিজের ব্যাটিংটাই করে যাবেন বলে জানালেন। অতীতে সেটাতেই যখন সাফল্য এসেছে, স্টাইলে বড় কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন তাই মনে করছেন না। তবে একবার শুরুটা হয়ে গেলে উইকেট যেনো ছুঁড়ে না আসেন সে বিষয়ে বাড়তি যত্ন নেবেন বলে জানালেন।
দলে উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবে মোহাম্মদ মিথুনকে পাচ্ছেন সৌম্য। জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলে আসা মিথুনকেও একই ক্যাটাগরি থেকে দলে টেনেছে রূপগঞ্জ। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান জাতীয় দলের হয়ে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই রানের চাকা সচল রাখতে সক্ষম। ওপেনিংয়ে বিকল্প হিসেবে সাবেক জাতীয় দল তারকা জুনায়েদ সিদ্দিকীও থাকছেন। প্রয়োজনে তিনে ব্যাটিং করতে হতে পারে তাকে।
সবমিলিয়ে টপ অর্ডারের ব্যাটিং ক্রমে তারুণ্য-অভিজ্ঞ নির্ভরতার ছাপ রেখে মিডলঅর্ডারে অভিজ্ঞ জহুরুল ইসলামকে দিয়ে শক্তি বাড়িয়েছে রূপগঞ্জ। তারপর আলো ছড়াতে পারেন মিজানুর রহমান, নাহিদুল ইসলামরা। উইকেটের পেছনে দৃঢ়তা দেখানো ত্রিশ পেরনো শাহীন হোসেন ব্যাট হাতেও কার্যকরী ইনিংস খেলতে পারেন। মিডলঅর্ডারেও তাই ভারসাম্য থাকছে দলটির।
পেস অলরাউন্ডার হিসেবে আলাউদ্দিন বাবু ও ত্রিশ পেরোনো বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কাম স্পিনার মুরাদ খানের কাছেও নিচের দিকে বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে দলের। দলটির স্পিন আক্রমণেও ভারসাম্য লক্ষ্য করার মতো। পুরনো খেলোয়াড়দের মধ্যে বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ হোসেনকে ধরে রেখেছে রূপগঞ্জ। এই অভিজ্ঞ অর্থোডক্সকে সঙ্গ দিতে তরুণ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম থাকছেন। প্রয়োজনে বাড়তি স্পিনার হিসেবে আসিফ আহমেদের সার্ভিসও পাবে রূপগঞ্জ।
টপ-মিডল হয়ে অলরাউন্ড ও স্পিন বৈচিত্র্যে দারুণ এক মিশ্রণ ঘটানোর পর পেস অ্যাটাকেও চমক জাগানো নাম যোগ করেছে রূপগঞ্জ। দলের পেস ব্যাটারি হিসেবে শুরুতেই আসবে গত বিপিএলের চমক ও জাতীয় দলের হয়ে সদ্যই টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলে আসা আবু হায়দার রনির নাম। তাসকিন-মুস্তাফিজদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জাতীয় দলের হয়ে খুব একটা মাঠে নামা না হলেও সীমিত সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েছেন রনি। দলের পেস আক্রমণের মূল ভারটা বইবার ক্ষমতা যে তার আছে ইতোমধ্যে সেটা প্রমাণিতও।
রূপগঞ্জের হয়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার আশাবাদ শোনালেন রনিও। জানালেন, জাতীয় দলের সঙ্গে ভ্রমণ, ড্রেসিংরুম শেয়ার করাটা অন্যরকম এক পরিণতবোধের ভিত্তি দিয়েছে তার ক্যারিয়ারকে। সবে তো পথ চলা শুরু, আগামীতে সুযোগ মিলবেই, তার আগে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে থাকার কাজটাই ধারাবাহিকভাবে করে যেতে চান। ইয়র্কারটা বেশ জানেন, সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের ভেতরে ঢোকা বলে বিপাকে ফেলার কৌশল নিয়ে বাড়তি কাজ করছেন বলে জানালেন। ডিপিএল নিয়ে বাড়তি কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও টুর্নামেন্ট শেষে দলকে ও নিজেকে শীর্ষ তালিকায় দেখার চিরায়ত লক্ষ্যটাও জানাতে ভুললেন না এই তরুণ পেসার।
পেসে রনিকে সঙ্গ দিতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা ডানহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা থাকছেন। প্রয়োজনে সাজেদুল হক রিপনের পেসকেও ব্যবহারের সুযোগ থাকবে দলটির সামনে।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ-
সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিথুন, জুনায়েদ সিদ্দিকী, জহুরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, নাহিদুল ইসলাম, শাহীন হোসেন, আলাউদ্দিন বাবু, মুরাদ খান, মোশাররফ হোসেন, তাইজুল ইসলাম, আসিফ আহমেদ, আবু হায়দার রনি এবং মেহেদী হাসান রানা, সাজেদুল হক রিপন।
–মুহাম্মদ মেহদী হাসান
Discussion about this post