কিংবদন্তি এক ক্রিকেটার তিনি। কুমার সাঙ্গাকারা। শ্রীলঙ্কান এই মহা তারকার অন্দরমহলে চলুন ঢু মেরে আসি। পুরোটাই তার জবানীতে।
সিরিজের শেষ টেস্ট না খেলার কারণ
গত ওয়ার্ল্ড কাপের পর সরে যাব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু বোর্ড চাইছিল, আরও অন্তত কিছু দিন যেন টেস্ট খেলি। বলেছিলাম, পাকিস্তান আর ভারতের বিরুদ্ধে দুটো করে টেস্ট খেলব, তিনটে নয়। বোর্ডকর্তারা সেটা মেনে নিয়েছিলেন। তাই শুধু ভারতের বিরুদ্ধে এই সিরিজেই শেষ টেস্ট খেলছি না তা নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগের সিরিজেও শেষ টেস্ট খেলিনি।
সেরা ক্রিকেটীয় মুহূর্ত
বিদেশে সেরা সফর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ওদের একদিনের সিরিজে হারানোটাও অবশ্যই স্মরণীয় মুহূর্ত।
সেরা স্পিনার, ওপেনার, ফাস্ট বোলার
স্পিনার বললে সারা বিশ্বে সেরা একজনই, মুরলি। আর শ্রীলঙ্কার বাইরে থেকে বাছতে বললে শেন ওয়ার্নের নাম বলব। ওপেনার হিসেবে আমার বাছাই ম্যাথু হেডেন। আর আমার সেরা ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আক্রাম।
শচীন টেন্ডুলকার
সবসময় স্বপ্ন দেখতাম শচীন টেন্ডুলকারের মতো স্ট্রেট ড্রাইভ মারব। আমাকে ঠিক ক্লাসিক্যাল লেফট–হ্যান্ডার বলা যাবে না। ক্লাসিক ব্যাটসম্যান বলতে সবাই চাইবে শচীনের ব্যাকফুট পুশ দেখতে। বল নিমেষের মধ্যে বাউন্ডারির কাছে পৌঁছে যায়। আর চাইতাম লারার শটগুলো মারতে। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না। আমি জানি, কোথায় আমার খামতি। সেটা মাথায় রেখেই খেলে গেছি।
ভারত–শ্রীলঙ্কা লড়াই
এই দ্বৈরথ সবসময়ই অন্য মাত্রা পেয়েছে। শচীন, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, ভি ভি এস লক্ষ্মণ, বীরেন্দ্র শেবাগদের বিরুদ্ধে খেলা মানে কী কঠিন কাজ ছিল, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সঙ্গে ছিল হরভজন সিং আর জাহির খান। আমার মতে, যতজন বোলারের বিরুদ্ধে খেলেছি, তাদের মধ্যে এই দু’জন অন্যতম কঠিন। আর আমাদের দলে তখন মুরলিধরন, জয়সূরিয়া, ডি’সিলভা, আটাপাত্তু, চামিন্ডা বভাস, জয়বর্ধনে।
২০০৯ সালে লাহোরের জঙ্গি হানা
জানি না, ওই ঘটনাটাকেই আমার জীবনের সবথেকে খারাপ মুহূর্ত বলব কি না, তবে এটুকু বলতে পারি, ওটাই আমার দেখা সবথেকে ভয়ঙ্কর মুহূর্ত। তবে আগেও বলেছি, আবারও বলব, ওটা একটা অভিজ্ঞতা। শুধু আমার নয়, আমাদের গোটা শ্রীলঙ্কা দলের জন্য। একটু ব্যাখ্যা দিলেই বোঝা যাবে। আমােদর কাছে ক্রিকেটই সবথেকে নিরাপদ পরিবেশ। আর সেখানেই আমরা আক্রান্ত হয়েছিলাম। থিলন সমরবীরের পায়ে গুলি লেগেছিল। খেলতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তো ছিলই, এমনকী জীবন সংশয়ও ছিল। সেটা আমরা চোখের সামনে দেখেছিলাম। কিন্তু তার পর সেই অবস্থা থেকে ওকে ফিরে আসতেও দেখেছিলাম। শুধু তা–ই নয়, দেখেছিলাম ও টেস্ট সেঞ্চুরি করছে। ওই ঘটনা আমাদের শিখিয়েছিল, জীবনে যত ভয়ঙ্কর ঘটনাই ঘটুক না কেন, সেটা থেকে বেরিয়ে আসা এবং সফলভাবে বেরিয়ে আসতে পারাটাই আসল। ওই ঘটনা আমাদের শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের অনেক কাছে এনে দিয়েছিল। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ তো উঠতে বসতে বোমা, আত্মঘাতী বোমা, গোলাগুলি— এ সবের সঙ্গেই অভ্যস্ত। তাই আবার বলছি, জানি না, ওটাই জীবনের সবথেকে খারাপ দিন কি না, কিন্তু ওই ঘটনা আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ করেছিল। তার পর থেকে আমরা দেশের মাটিকে ভুলিনি কখনও।
পাকিস্তানে ক্রিকেট
লাহোরের ওই ঘটনার পর থেকেই পাকিস্তানে ক্রিকেট বন্ধ। একটা কথা বলতে পারি, পাকিস্তানের মানুষ দুর্দান্ত ক্রিকেটভক্ত। আমরা যখনই ওদেশে গেছি, ওঁরা আমাদের দু’হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। আমাদের খেলা ওঁদের ভাল লাগে। ওঁরা শ্রীলঙ্কাকে অত্যন্ত ভালবাসেন। আর পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের প্রতিভা আর ক্ষমতা অতুলনীয়। কিন্তু নিজেদের দেশেই ওরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। এটা খুব দুঃখজনক। তবে বলতে পারব না, পাকিস্তানে খেলাটা নিরাপদ কি না। সেটা বলা আমার কাজ নয়। তার জন্য সরকার, বোর্ড আছে। সিকিউরিটি টিম আছে।
সুনামি
অবিশ্বাস্য একটা ট্র্যাজেডি। গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সুনামি যখন হয়েছিল, আমরা নিউজিল্যান্ডে। টেলিভিশনে সেই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। তার পর দেশে ফিরে এসে দেখেছিলাম, ধ্বংস কাকে বলে! গল স্টেডিয়াম সম্পূর্ণ ধুয়ে–মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল সুনামির তোড়ে। তার পর সেই স্টেডিয়াম নতুন করে তৈরি হল। আমাদের দেশও আবার ঘুরে দাঁড়াল। এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার! এটা থেকেই বোঝা যায়, জীবন মানেই আলো, অন্ধকার দুটোই আছে। আর জীবনে যা–ই ঘটুক না কেন, শ্রীলঙ্কার মানুষের সেটা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আছে।
সুত্র: কলকাতার পত্রিকা
Discussion about this post