মাঠে যখন প্রথম উইকেটটা পড়লো, তখন কেউ ভাবেনি-এই ম্যাচটা এমন জমে উঠবে। কেউ ভাবেনি, ১৭৮ রানের মতো এক ছোট টার্গেট নিয়ে ইংল্যান্ডের মতো দলকে কাঁপিয়ে দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগ্রেসরা জানে কীভাবে লড়তে হয়। জানে কীভাবে ম্যাচ জমিয়ে তুলতে হয়, হারার আগপর্যন্ত জয়ের স্বপ্ন বুনতে হয়। কিন্তু হতাশার এটিই পাকিস্তানকে হারানোর পর ইংলিশ পরীক্ষা ফেল বাংলাদেশ।
আজ গৌহাটিতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৭৮ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন সুবহানা। জবাবে ৪৬ ওভার এক বলে ৬ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৯ রান করেছেন হেথার নাইট।
গৌহাটির উইকেটে ব্যাটিংটা সহজ ছিল না। রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক ফিফটির পরের ম্যাচেই আউট হলেন মাত্র ৪ রানে। জ্যোতিও ফিরলেন শূন্য রানে। তখন স্কোরবোর্ডের চেয়ে মাথার ভেতরের চাপটা বেশি হচ্ছিল।
এই চাপের ভেতরেও টিকে ছিলেন সুবহানা মুস্তারি। একদম নিজের অভিষেক ম্যাচে যেন ঠান্ডা মাথায় যুদ্ধ করলেন। রানটা খুব দ্রুত আসেনি, কিন্তু ১০৮ বলে ৬০ রানের ইনিংসটা ছিল দলের জন্য অমূল্য। অন্য প্রান্তে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছে, সুবহানা তখন ছিলেন একা সৈনিক।
আর ঠিক তখনই মাঠে নামেন রাবেয়া খাতুন- ৯ নম্বরে! যে ইনিংসটা খেললেন, তা হয়তো স্কোরকার্ডে সবার চোখে না পড়লেও, মাঠে যারা ছিলেন তারা জানেন, কী দাপুটে ছিল এই ইনিংস। মাত্র ২৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রান! ৬টি চার, ১টি ছক্কা- একেবারে ঝড় তুলে গিয়েছিলেন তিনি।
শেষমেশ বাংলাদেশ দাঁড় করায় ১৭৮ রান। বেশি কিছু নয়, কিন্তু বোলারদের হাতে যদি থাকে আগুন, তাহলে অল্প রানেও ম্যাচ জেতা যায়-এটা প্রমাণ করতে নেমে পড়েন মারুফা আক্তার।
প্রথম ওভারেই উইকেট! মারুফার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন এমি জোনস। এরপর বাউম্যান্টকেও ফেরান তিনি। গ্যালারিতে তখন বাংলাদেশের সমর্থকদের মুখে হাসি, চোখে আশা।
তারপর আসে স্পিনারদের জাদু। নাহিদা আক্তার কড়াই গরম রাখেন একপ্রান্তে, অন্যপ্রান্তে ফাহিমা খাতুন নাচিয়ে দেন ইংলিশ ব্যাটারদের। ডানকলি, ল্যাম্ব, ক্যাপ- একে একে সবাই ফিরে যান। স্কোর তখন ৭৮/৫। বাংলাদেশ জয়ের গন্ধ পায়।
কিন্তু তারপরই হঠাৎ যেন সময় থেমে যায়। হঠাৎ করেই ম্যাচটা সোজা হয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ডের দিকে। কারণ উইকেটে ছিলেন হেথার নাইট। তিনি ছিলেন জমাট, ছিলেন শান্ত, ছিলেন ভয়ংকর। একপ্রান্ত আগলে রেখে সঙ্গী করলেন চার্লি ডিনকে, আর দুজন মিলে ধীরে ধীরে ছিনিয়ে নিলেন ম্যাচ।
নাইটের ব্যাট থেকে আসে ১১১ বলে অপরাজিত ৭৯ রান। শেষ বল পর্যন্ত মাঠে ছিলেন। ডিন যোগ করেন আরও ২৭ রান। আর বাংলাদেশ… তারা লড়েছিল, বুক ঠুকে, সাহস নিয়ে। কিন্তু হেরে গেল মাত্র ৪ উইকেটে।
Discussion about this post